কলকাতা, 27 জানুয়ারি : হার্ট অ্যাটাক, অ্যানজিওপ্লাস্টির পরে বিশেষ করে এক মাস সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় অনেক অঘটন দেখা দিতে পারে। বিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও এমন কিছু হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। এর পাশাপাশি চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে দ্রুত নিরাপদ সুস্থতার জায়গায় নিয়ে আসা হোক।
গত 2 জানুয়ারি আলিপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে ভরতি করা হয়েছিল। তাঁর হার্টের তিনটি আর্টারিতে ব্লক ধরা পড়ে। একটি আর্টারিতে স্টেন্ট বসিয়ে ব্লক মুক্ত করা হয়। কিছুদিন পরে বাকি দুটি আর্টারিতে স্টেন্ট বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত 7 জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে, 20 দিনের মাথায় আজ বুধবার আবার অসুস্থতা বোধ করতে থাকেন তিনি। এর পরে এদিন বিকালে ইএম বাইপাসের ধারে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে ভরতি করা হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিশিষ্ট চিকিৎসক দেবী শেটির উপস্থিতিতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হার্টে স্টেন্ট বসানো হবে।
ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন এই অধিনায়কের ফের শারীরিক অসুস্থতার বিষয়ে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ কুণাল সরকার বলেন, "যে কোনও মানুষের হার্টের তিনটি আর্টারিতে ব্লক থাকলে সেটা একটি সিরিয়াস সমস্যা। ভিআইপি কালচারের বশবর্তী না হয়ে আমরা যদি ভাবি একজন অল্প বয়সি, একজন কৃতী মানুষকে স্বাভাবিক এবং নিরাপদ জীবন দিতে হবে, তা হলে স্বচ্ছ সরল চিন্তাভাবনা হোক।" কিছু দিন আগে হাসপাতাল থেকে ফেরার পরে আবার বুকে ব্যথা হচ্ছে, এই বিষয়টা ভালো লাগছে না। একথা জানিয়ে চিকিৎসক কুণাল সরকার বলেন, "ভিআইপি, নন ভিআইপি সকলের ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যা, চিকিৎসা একই রকমের। সুতরাং, চিকিৎসকরা স্বচ্ছ, সরল চিন্তাভাবনা নিয়ে নিরাপদ, সুস্থতার জায়গায় তাড়াতাড়ি নিয়ে আসুন।"
‘‘শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করার জন্য সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় হাসপাতালে গিয়েছেন বলে শুনেছি। কী পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত জানা নেই,’’ এ কথার পাশাপাশি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে অন্য এক চিকিৎসক রথীন কর্মকার বলেন, "তবে, এটুকু বলার যে, যাঁদের হার্ট অ্যাটাক হয়, অ্যানজিওপ্লাস্টি হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে প্রথম মাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় অনেক কিছু বাড়াবাড়ি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।" তিনি বলেন, "শরীরের কোনও অংশে চোট লাগলে তার ক্ষেত্রে যেমন রিকভারির একটা টাইম লাগে, হার্টের ক্ষেত্রেও অ্যাটাকের পরে রিকভারির নিজস্ব একটা টাইম আছে। এই সময় অঘটন হওয়ার মধ্যে অন্যতম শারীরিক অস্থিরতা, হয়ত দেখা গেল খুব ঘাম হচ্ছে কিংবা, মাথা ঘুরছে কিংবা, বুকে অস্বস্তি হচ্ছে, হয়ত শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কিংবা একটু ব্ল্যাক আউট হয়ে গেল।"
আরও পড়ুন : ফের হাসপাতালে সৌরভ, চিন্তা নেই; জানালেন চিকিৎসকরা
চিকিৎসক রথীন কর্মকার বলেন, "এক মাসের মধ্যে এই ধরনের অঘটন এর সম্ভাবনা থাকে। এই কারণে যাঁদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ায় অ্যানজিওপ্লাস্টি হয়, তাঁদেরকে সতর্ক করে দেওয়া থাকে। এই সময় ঝুঁকি বেশি থাকে বলে সতর্ক করে দেওয়া থাকে, কোনও সমস্যা দেখা দিলে অবিলম্বে দ্রুত যেন কোনও হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয়।" এই চিকিৎসক জানিয়েছেন, এমনিতেই হার্ট অ্যাটাকের ধাক্কা সামলাতে অনেক সময় আরও কয়েক মাস বা এক বছর পর্যন্ত রেশ থেকে যায়। হার্ট অ্যাটাকের পরে যেহেতু এখনও একমাস হয়নি, এর মাঝখানে কিছু একটা শারীরিক অসুস্থতা বোধ করার কারণে, তেমন সিভিয়ারিটি ফিল করেছেন বলেই নিশ্চয়ই হাসপাতালে গিয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। চিকিৎসকরাও নিশ্চয়ই সিরিয়াস ভেবেছেন বলেই তাঁকে হাসপাতালে যেতে বলেছেন। এ ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই অ্যানজিওগ্রাম করে দেখা হবে, যে আর্টারিতে স্টেন্ট বসানো হয়েছে, সেখানে কোনও সমস্যা দেখা দিয়েছে না কি , যে দুটি আর্টারিতে স্টেন বসানো হয়নি, সেই দুটি আর্টারির মধ্যে কোনও সমস্যা দেখা দিয়েছে।