হাওড়া, 31 জুলাই: নেতা হোন বা মন্ত্রী, ইডি ছুঁলেই 'আঠারো ঘা' । আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত ঘটনার তদন্তে দেশের অন্যতম দক্ষ তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) (Enforcement Directorate) । দেশের যেকোনও রাজ্যে আর্থিক দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের ইডি'র হাত থেকে নিস্তার পাওয়া প্রায় অসম্ভব বলেই মনে মনে করা হয় ৷ তাই ইডি'র নাম শুনলেই থরহরিকম্প সকলেই ৷
তবে কেন্দ্রীয় এই সংস্থাকে কেনোও এতো ভয় দুর্নীতিকারীদের ? কোন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট নামের ভিতরে । ন্যাশনাল হেরাল্ড থেকে বিভিন্ন রাজ্যে একাধিক আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করছে এই সংস্থা । 1956 সালের 1 মে তৈরি হয় কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অধীন এই সংস্থা । তখন নাম ছিল এনফোর্সমেন্ট ইউনিট ৷ যেকোনও আর্থিক কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতির মূলে পৌঁছাতে এই ইডি'ই একমাত্র ভরসা । 1957 সালে এই সংস্থার নাম বদলে করা হয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট । সে সময় আয়কর দফতরের প্রাক্তন প্রধান সঞ্জয় মিশ্রকে নিয়ে পথ চলে শুরু হয় ইডির । দিল্লিতে সদর দফতর থাকলেও মুম্বই, কলকাতা ও পরে তৎকালীন মাদ্রাজেও খোলা হয় এর দফতর । এখন এই চার মেট্রো শহর বাদ দিয়েও দেশের সমস্ত বড় শহরেই রয়েছে ইডি'র দফতর ।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়, কেন্দ্রীয় সরকার ষড়যন্ত্র করে তাদের বিরুদ্ধে ইডি'কে ব্যবহার করছে ৷ এই অভিযোগ উঠলেও এই সংস্থার কার্য পদ্ধতি সম্পূর্ণ তাদের নিজেদের হাতেই । তাই আর্থিক কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতির গন্ধ পেলেই স্বতঃপ্রনোদিত ভাবেই তদন্তে নেমে পড়ে ইডি ৷ এর জন্য আলাদা করে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ মন্ত্রকের কোনও অনুমতি আবশ্যক নয় ৷ বরং সংবিধানে সিবিআইয়ের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ইডি'কে । যেকোনও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে তা প্রমাণ করার জন্য যা যা করণীয় তা করতে কোনও মন্ত্রকের অনুমতি না নিয়েই তদন্ত শুরু করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ইডি'কে ৷
আরও পড়ুন: দুর্নীতি মামলায় আটক সঞ্জয় রাউত, আনা হল ইডি দফতরে
সিবিআইয়ের চেয়েও তাই অনেকেই বেশি ভয় পায় ইডি'কে ৷ যেকোনও অভিযোগের তদন্তে নেমে সেই অভিযোগকে জামিন অযোগ্য ধারাতে পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখে এই সংস্থা । নেতা হোন বা মন্ত্রী বা কোনও দুর্নীতিবাজ নাগরিক সকলেই সমান ইডি'র কাছে । তাই তাঁদের হেফাজতে থাকা কোনও অভিযুক্তকে আলাদা কোনও বিশেষ সুবিধা দেয় না এই সংস্থা । দেশে আর্থিক কেলেঙ্কারি করে বিদেশে পালিয়ে গেলেও সেই অর্থ ও অভিযুক্তকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার ক্ষমতাও ইডি'র রয়েছে । ইডি'তে চাকরি শুরুর সময় পদ অনুযায়ী বিভিন্ন বেতনের উল্লেখ থাকে । তবে চল্লিশ হাজার টাকা বেতনেও বিশেষ যে সমস্ত সুবিধা যা ইডি'র অধিকারিকদের দেওয়া হয় তা আর্থিক মূল্যে সত্তর হাজার টাকার মতোই বলেই ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে ।
সম্প্রতি একটি মামলাতেও সুপ্রিম কোর্ট ফের জানিয়েছে, যে কোনও অর্থ বিষয়ক মামলাতে তল্লাশি, গ্রেফতারি ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অবাধ অধিকার রয়েছে ইডি'র । কোনও ভাবেই ইডি'র তদন্তকে প্রভাবিত করা যাবে না । আর গোটা প্রক্রিয়াতে অন্য কোনও দফতরের কোনও অনুমতির প্রয়োজন পড়বে না ইডি'র । সম্প্রতি এই রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তার 'ঘনিষ্ঠ'অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করতেও কোনও বাধা পায়নি ইডি ৷