কলকাতা, 4 নভেম্বর : অদ্ভুত সমাপতন বোধহয় একেই বলে ! উৎসবই ছিল যাঁর প্রাণ, সেই সুব্রত মুখোপাধ্যায় ইহলোকের মায়া ত্যাগ করলেন উৎসবের রাতেই ৷ বলা যেতে পারে শক্তির আরাধনার রাতে চলে গেলেন বঙ্গ রাজনীতির এক মহিরূহ ৷ কংগ্রেস থেকে তৃণমূল, কখনও বিদ্রোহী হয়ে নির্দল হিসেবে ভোটে লড়াই ৷ আবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারে কনিষ্ঠতম মন্ত্রী হিসেবে নিজের নাম লেখানো ৷ সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে বঙ্গ-রাজনীতির এক বর্ণময় অধ্যায় শেষ হল বৃহস্পতিবার রাত 9টা 22 মিনিটে ৷
1946 সালের 14 জুন জন্ম সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ৷ বঙ্গবাসী কলেজ থেকে অ্যানথ্রোপলজিতে অনার্স নিয়ে বিএসসি পাস করেন তিনি ৷ তার পর আর্কিওলজিতে এমএসসি কলকাতা বিশ্ববিদ্য্যালয় থেকে ৷ ওই একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিউসেলজি থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করেছেন তিনি ৷ এছাড়া লন্ডনের এসওএএস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কালচারাল অ্যানথ্রোপলজি থেকে পিজিসার্ট (PgCert)-ও পাশ করেন তিনি ৷
আরও পড়ুন :Subrata Mukherjee : প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়
বিংশ শতকের ছয়ের দশকে কংগ্রেসী রাজনীতি দিয়ে তিনি কেরিয়ার শুরু করেন ৷ ছাত্র রাজনীতি দিয়েই তাঁর শুরু ৷ সেই সময় থেকেই প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তিনি ৷ অচিরেই তিনি স্নেহভাজন হয়ে ওঠেন ইন্দিরা গান্ধিরও ৷ রাজনীতির মতো বালিগঞ্জের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক সেই 1971 সাল থেকে ৷ 1971 ও 72 সালে তিনি বালিগঞ্জ থেকে বিধায়ক নির্বাচিতও হন ৷ তাঁকে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের প্রতিমন্ত্রী করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় ৷ বঙ্গ-সরকারে তিনিই কনিষ্ঠতম মন্ত্রী ৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র 26 ৷
1977 সালে তিনি বালিগঞ্জে হেরে যান ৷ 1982 সালে তিনি আবার বিধায়ক হন ৷ এবার জোড়াবাগান কেন্দ্র থেকে ৷ 1996 সালের ভোট পর্যন্ত তিনি ওই আসন থেকেই জিতে এসেছেন বরাবর ৷
1999 সালে তিনি কংগ্রেস ছেড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে আসেন ৷ বলা যায় ওই সিদ্ধান্ত তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারে এক নতুন মোড় এনে দিয়েছিল ৷ 2000 সালে তৃণমূল কলকাতা পৌরনিগমের ক্ষমতায় আসে ৷ তাঁকে মেয়র করা হয় ৷ পরবর্তী পাঁচ বছরে ওই পদে তাঁর নানা পদক্ষেপ ও কলকাতার উন্নয়নে করা নানা কাজ তাঁকে রাজনীতির অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল ৷
কিন্তু 2005 সালে মমতার সঙ্গে মতান্তরের জেরে তিনি তৃণমূল ছাড়েন ৷ গড়ে তোলেন ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি ৷ কলকাতা পৌরনিগমের ভোটে হেরে যান ৷ তার পর 2009 সাল পর্যন্ত তিনি কংগ্রেসে ছিলেন ৷ 2009-এ আবার ফেরেন তৃণমূলে ৷ 2011 সালে ভোটে লড়েন ৷ জিতে মন্ত্রী হন ৷ পঞ্চায়েতমন্ত্রী হিসেবে তাঁর কাজও প্রশংসিত হয় ৷
দীর্ঘ ছয় দশকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বিধানসভা থেকে কর্পোরেশনে অবাধ বিচরণ হলেও সংসদে নির্বাচিত হননি কখনও ৷ চারবার লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন ৷ প্রত্যেকবার হেরে যান ৷ শেষবার 2019 সালে বাঁকুড়া থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন ৷ হেরে যান বিজেপির সুভাষ সরকারের কাছে ৷ 2006 সালে রাজ্যসভার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও পরাজিত হয়েছিলেন ৷
আর রাজনীতির বাইরে তিনি ছিলেন বালিগঞ্জের একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাবের প্রাণপুরুষ ৷ তিনি ছিলেন ওই পুজোর মূল উদ্যোক্তা ৷ এবারও তাঁকে পুজোয় অংশ নিতে দেখা গিয়েছে ৷ বালিগঞ্জ বিধানসভার সঙ্গে সঙ্গে একডালিয়া এভারগ্রিনও অভিভাবকহীন হয়ে গেল ৷