কলকাতা, 26 নভেম্বর : কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা 24 ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘটে মিশ্র প্রভাব পড়ল রাজ্য়ের বিভিন্ন জেলায় ৷ কোথাও জোর করে দোকান বন্ধের চেষ্টা, তো কোথাও টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ ৷ বেশকিছু জায়গায় বনধ সফল করতে গা জোয়ারি করতে দেখা গেল সমর্থকদের ৷ বনধ সফল করার নামে চলল ভাঙচুরও ৷ কলকাতার রাস্তায় বেসরকারি বাসের প্রায় দেখা নেই বললেই চলে ৷ চলছে হাতে গোনা কয়েকটি সরকারি বাস ৷ তাতেও শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে বিক্ষোভ বনধ সমর্থনকারীদের ৷ অন্য়দিকে শিয়ালদা ও হাওড়া শাখায় একাধিক স্টেশনে ট্রেন আটকে বিক্ষোভ দেখাল বাম ও কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা ৷ কোথাও চলল পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তাধস্তি ৷ উত্তরে কোচবিহারে এদিন ব্য়াপক প্রভাব পড়েছে বনধের ৷ প্রায় কোনও দোকানপাট খোলেনি বললেই চলে ৷ সর্বোপরি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা 24 ঘণ্টার ধর্মঘটে নাজেহাল রাজ্য়ের উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রায় সব জেলার মানুষ ৷
আজ বারাসতের কলোনি মোড় ও হেলাবটতলা মোড়ে জোর করে বনধ সফলের চেষ্টা ঘিরে ধুন্ধুমার বাধল ৷ এদিন এই দুই জায়গায় জোর করে দোকান বন্ধের চেষ্টা করেন বাম কর্মী-সমর্থকরা । এরপর 34 নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয় ৷ সেখানে গাড়ি থামিয়ে বনধ সফল করার মরিয়া প্রয়াস চলে । পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, লাঠিচার্জ বাদ গেল না কিছুই । রীতিমতো বনধ সমর্থককারীদের তাড়া করে লাঠিপেটা করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে । পুলিশের লাঠির আঘাতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে খবর । একপ্রকার লাঠিপেটা করে অবরোধ তুলে দেয় পুলিশ । এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বনধ সমর্থককারীরা । ধর্মঘটের সমর্থনে বারাসতের চাঁপাডালি মোড়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের মিছিল ও অবরোধ চলে । ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই অবরোধ করা হয় ৷ তবে শুধুই বারাসত নয় ৷ মধ্য়মগ্রামে পুলিশের সামনেই গায়ের জোরে দোকান বনধের অভিযোগ উঠল বনধ সমর্থককারীদের বিরুদ্ধে ৷ ঘটনার জেরে সাময়িক উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায় । মধ্যমগ্রাম চৌমাথার ঠিক পাশে একটি রেস্তরাঁয় শাটার জোর করে নামিয়ে দেন বনধ সমর্থনকারীরা । সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশকে কার্যত দর্শকের ভূমিকায় দেখা যায় । পাশাপাশি বনধ সফল করতে যশোর রোডে শুরু হয় অবরোধ । যার জেরে যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায় গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তায় । দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ ৷
কলকাতাতেও ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে ছড়াল উত্তেজনা ৷ শহরের একাধিক রাস্তায় বাম কর্মী সমর্থকদের বিক্ষোভে ব্য়াহত হল জনজীবন ৷ এন্টালি বাজার, মৌলালি এবং মল্লিক বাজার চত্বরে পথ অবরোধের জেরে যান চলাচল সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যায় । পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় ৷ তবে, মাঝে মধ্য়েই বিভিন্ন বাম সংগঠনের পতাকা হাতে ধর্মঘট সফল করতে রাস্তায় নেমে পড়ে বনধ সমর্থকরা ৷ মৌলালিতে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয় ৷ এমনকী কয়েকটি দোকানে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে বনধ সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে ৷ অন্য়দিকে RSP নেতা অশোক ঘোষ জানিয়েছেন, ‘‘আজকের এই ধর্মঘট সরকারকে বাধ্য করাবে শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে।’’ নিউটাউনের রাস্তায় কাঠের গুঁড়ি, টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন বাম কর্মী-সমর্থকরা । জোর করে বনধ সফল করাতে গিয়ে নিউটাউনের গৌরাঙ্গনগর অটো স্ট্যান্ডে অটোচালকদের সঙ্গে বাম কর্মী সমর্থকদের বচসা, ধাক্কাধাক্কি শুরু হয় ৷ অন্যদিকে লেকটাউনের যশোর রোডে বামেদের পক্ষ থেকে রাস্তা অবরোধ করা হয় । সেখানে পুলিশের সঙ্গে বচসা হয় আন্দোলনকারীদের ।
একই রকম চিত্র রাজ্য়ের অন্য়ান্য় জেলাতেও ৷ জলপাইগুড়ি জেলা জজকে আদালতে ঢুকতে বাধা দিলেন বাম ও কংগ্রেস সমর্থকরা । পুলিশ ধর্মঘটীদের বাধা দিতে গেলে, তাঁদের সাথে বনধ সমর্থকদের ধস্তাধস্তি হয় । কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা 24 ঘণ্টার ধর্মঘটে ব্য়াপক প্রভাব পড়ল কোচবিহারে ৷ এদিন সকাল থেকে কোচবিহারে কোনও দোকানপাট খোলেনি । খোলেনি হাট-বাজারও । বেসরকারি বাসও পথে নামেনি । তবে পুলিশি প্রহরায় কিছু কিছু এলাকায় উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার বাস চলেছে । এদিন ধর্মঘটের সমর্থনে কোচবিহার শহরে মিছিল করে CPI(M)-এর শ্রমিক সংগঠনসহ বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন । বিভিন্ন এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেন বনধ সমর্থকরা। ধর্মঘটের সমর্থনে আজ আসানসোল বাজার অঞ্চলে মিছিল করে বামেরা । যদিও বলপূর্বক বনধের চেষ্টা চোখে পড়েনি । একদিকে যেমন বামেরা রাস্তায় নামে, তেমনি অন্যদিকে তৃণমূলের নেতারাও রাস্তায় নেমে মানুষকে বনধ ব্যর্থ করার আবেদন জানান । তবে রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক, যান চলাচলও করেছে । যদিও অন্যান্য দিনের তুলনায় রাস্তাঘাটে কম লোকজন ছিল ৷
অন্য়দিকে এদিন শিয়ালদা ও হাওড়া শাখায় একাধিক স্টেশনে অবরোধ করে বাম সংগঠনগুলি ৷ যাদবপুর স্টেশনে ট্রেন অবরোধ করেন বনধ সমর্থকরা । ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন তাঁরা । দলীয় পতাকা নিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায় বাম ও কংগ্রেস সমর্থকদের । CPI(M)-এর বেলঘরিয়া এরিয়া কমিটি এবং পূর্ব বেলঘরিয়া এরিয়া কমিটির যৌথ উদ্যোগে বেলঘরিয়া স্টেশনে এক নম্বর লাইনে আটকানো হল আপ কল্যাণী সীমান্তকে ৷ অন্যদিকে বনগাঁ-বাগদা সড়কে পাইকপাড়ায় অবরোধ করে বামেরা । রাস্তায় বেঞ্চ পেতে স্লোগান দেন বাম কর্মী-সমর্থকরা ৷ ট্রেড ইউনিয়ন ও গণ সংগঠনের ডাকা বনধে সারাদিন রাস্তায় থেকে ধর্মঘট সার্থক করা হবে বলে জানান কৃষক সভার নেতৃত্ব ৷ উত্তর 24 পরগনার মধ্যমগ্রাম স্টেশনে চলন্ত ট্রেনে পাথরবৃষ্টি করেন বনধ সমর্থকরা । বনগাঁ-শিয়ালদা শাখার লোকাল ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারা হয় । কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা সাধারণ ধর্মঘটে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ডোমজুড় স্টেশনে বামেদের রেল অবরোধ চলে । সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ CPI(M) কর্মীরা লাইনে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেন । আটকে পড়ে আমতা থেকে হাওড়াগামী লোকাল ট্রেন । ঘটনাস্থানে যায় রেলপুলিশ । সকাল থেকে হুগলির বিভিন্ন জায়গায় অবরোধে শামিল হন ধর্মঘটের সর্মথকরা । হুগলি স্টেশনে রেললাইনে অবরোধ করেন ধর্মঘটীরা। বেশ কিছুক্ষণ অবরোধ চলে, ফলে আটকে পড়ে বর্ধমান মেইন লাইনের লোকাল ট্রেন । পরে রেলপুলিশ অবরোধ তুলে দিলে পুনরায় ট্রেন পরিষেবা চালু হয় ৷
তবে, ব্য়তিক্রমী চিত্র দেখা গেল শিল্পশহর দুর্গাপুরে ৷ ধর্মঘটের সেরকম প্রভাব চোখে পড়ল না । নিত্য়দিনের মতো শ্রমিকরা কারখানায় যোগ দিয়েছেন । এমনকী বনধ সমর্থনকারীদের দুর্গাপুর স্টিল টাউনশিপের রাস্তায় দেখা যায়নি । উলটে রাস্তায় নেমে বনধের বিরোধিতা করতে দেখা গেল শাসকদলের শ্রমিক সংগঠন INTTUC-কে । পাশাপাশি পর্যাপ্ত পুলিশ ও কমব্যাট ফোর্স মোতায়েন করা আছে দুর্গাপুর স্টিল টাউনশিপ এর বিভিন্ন রাস্তায় ।