কলকাতা, 6 ডিসেম্বর : মামলার নিথভুক্ত হওয়ার তারিখ দেখে আঁতকে উঠেছিলেন প্রধান বিচারপতি । মামলা নথিভুক্ত হয়েছিল আজ থেকে 23 বছর আগে । এত বছর কেন মামলাটি রেজিস্ট্রি বিভাগের কাছে ঝুলেছিল তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি টি বি এন রাধাকৃষ্ণণ । আর যে প্রশ্নের উত্তর হাতরাতে দিনভর নাকাল হলেন হাইকোর্টের আইনজীবীরা । সেটি হল এই 23 বছর ধরে মামলাকারীই কোথায় রয়েছেন? কেন তিনি এত বছর ধরে কোনওরকম আবেদন করেননি? তিনি কী আদৌ বেঁচে আছেন ? এমন একাধিক প্রশ্নই মামলাকে ঘিরে উঠে আসছে বারবার । একদিকে, প্রধান বিচারপতির কাছে স্পষ্ট নয় কেন 23 বছর মামলাটি নথিভুক্ত হল না । কেন 23 বছর সময় লাগল ? কার ব্যর্থতা, কার অপদার্থতা, কে বা কারা অভিযুক্ত ? গাফিলতি কোথায় ? তেমনই পুলিশ-প্রশাসন-আদালত কারওর কাছেই উত্তর নেই মামলাকারী কোথায় ! যে কারনে মামলা, সেটি কি সাধারণ ভাবে মিটে গিয়েছে ? স্পষ্ট নয় কোনও কিছুই ।
কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রি বিভাগের উপর ক্ষোভপ্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি টি বি এন রাধাকৃষ্ণণ বলেন, "এই ধরনের গাফিলতির জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসারদের বিরুদ্ধে আইনত পদক্ষেপ করা দরকার ।" 1997 সালের একটি মামলায় হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল তিন মাস পরে মামলাটি পুনরায় তালিকাভুক্ত করতে । কিন্তু সেই মামলা তালিকাভুক্ত হয় গতকাল । প্রধান বিচারপতি টি বি এন রাধাকৃষ্ণণ বলেন, "বিচারব্যবস্থা একটা নিয়মের মধ্যে দিয়ে চলে । সেখানে কিছু অফিসারের জন্য এই ধরনের আচরণ কোনওভাবেই বরদাস্ত করা যায় না । এদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ।"
1997 সালে সদ্যজাত শিশুকে তার মায়ের কাছে দেওয়াকে কেন্দ্র করে সমস্যার সৃষ্টি হয় । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে মায়ের কাছে দিতে ব্যর্থ হয় বিশেষ কোনও কারণে । এরপর ওই মহিলা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন । কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ পুলিশকে এই ব্যাপারে একটা মামলা দায়ের করার পাশাপাশি ঘটনার পূর্ণ তদন্তের নির্দেশ দেন । হাইকোর্টের রেজিস্ট্রি বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয় তিন মাস পরে মামলাটি ফের শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত করতে । কিন্তু সেই মামলা তালিকাভুক্ত হয় গতকাল । ঘটনায় প্রধান বিচারপতি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, "23 বছর পর একটা মামলা হাইকোর্টের আলমারি থেকে বেরোচ্ছে শুনানির জন্য !"
যাতে কোনও মামলা দিনের পর দিন পড়ে না থাকে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট । সেখানে 23 বছর পর একটি মামলা শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হচ্ছে - এমন ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই বিস্মিত কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বি এন রাধাকৃষ্ণণ ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ । এই ধরনের গাফিলতিতে রেজিস্ট্রি বিভাগের অফিসারদের বিরুদ্ধে আইনত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তাঁরা ।
আরও পড়ুন : আমফান দুর্নীতিতে ক্যাগের তদন্তের নির্দেশ পুর্নবহাল রাখল হাইকোর্ট