কলকাতা, 24জুলাই : সামনের বছরেই বিধানসভানির্বাচন । আর তার আগে দলে বড়সড় সাংগঠনিক রদবদলের সিদ্ধান্ত তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ।
দলের21 জনের রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি তৈরি হয়েছে । এই কো-অর্ডিনেশন কমিটির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য 21 জন সদস্যের মধ্যে সাত জনকে নিয়ে তৈরি হয়েছে স্টিয়ারিং কমিটি । জেলাস্তরেও একাধিক সাংগঠনিক পরিবর্তন আনা হয়েছে । ভোটের আগে দলের সাংগঠনিক ভিতকে আরও শক্তিশালী করতেই আজকের এই রদবদল । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দলীয় কর্মী ও বাংলার রাজনীতির প্রাঙ্গণে যেন এই বার্তাই দিয়ে রাখলেন । 21 সদস্যের এই কোঅর্ডিনেশন কমিটি ছাড়াওপৃথক একটি রাজ্য কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে আজ ।
সম্প্রতি বাংলার আমফান বিধ্বস্ত এলাকাগুলিতে ত্রাণ সামগ্রী ও আর্থিক অনুদানের ক্ষেত্রে বেশকিছু অনিয়মের ছবি সামনে এসেছিল । স্বজন পোষণ থেকে শুরু করে ত্রাণ বিলিতে একাধিক দুর্নীতির ছবি সামনে এসেছিল । প্রশ্ন চিহ্নের মুখে পড়তে শুরু করেছিল মমতাবন্দ্যোপাধ্যায়ের সততার প্রতিরূপ । আজ এই দলীয় রদবদলের মধ্যে দিয়ে তিনি স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিলেন যে, তাঁর সততার ভাবমূর্তিকে তিনি কোনওভাবেই কালিমালিপ্ত হতে দেবেন না ।
সাতসদস্যের যে স্টিয়ারিং কমিটি তৈরি করা হয়েছে, তাতে থাকছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরএকেবারে ঘনিষ্ঠ নেতারা । কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ফিরহাদ হাকিম থেকে শুরু করে রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও শান্তা ছেত্রীরয়েছেন স্টিয়ারিং কমিটিতে । এছাড়াও থাকছেন, দলের দীর্ঘদিনের সঙ্গী সুব্রত বক্সি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও লোকসভার সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ।
দলের বেশ কিছু নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছিল, ব্লকস্তরেরও পঞ্চায়েত স্তরের কাজের দিকে সেভাবে নজর দিচ্ছিলেন না । একইসঙ্গে উঠছিলপক্ষপাতিত্ব ও দুর্নীতির অভিযোগও । লকডাউনে চাল-ডাল বিলি করার সময়েও বেশ কিছুঅভিযোগ সামনে এসেছিল । এই ধরনের অভিযোগ যাঁদের বিরুদ্ধে এসেছিল, নতুন কমিটি থেকে তাঁদের নাম ছেঁটেফেলা হয়েছে ।
বদলে দেওয়া হয়েছে হাওড়া, নদিয়া, দক্ষিণ দিনাজপুর ও কোচবিহারের তৃণমূলের জেলা সভাপতি । সম্প্রতি এই জেলার গ্রামাঞ্চলগুলি থেকে বেশ কিছু দুর্নীতির খবর সামনে এসেছিল । নদিয়া, দক্ষিণ দিনাজপুর ও কোচবিহারেও BJP তাদেরসাংগঠনিক শক্তি বাড়াচ্ছে বলে একাধিক খবর সামনে এসেছিল । শেষ লোকসভা নির্বাচনে 18 টি আসন নিয়ে উত্তরবঙ্গে নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছিল গেরুয়া শিবির । এরপর আর নিজের পায়ের তলার মাটি খোয়াতে চাইছেন না তৃণমূল সুপ্রিমো । এই কারণেই দক্ষিণ দিনাজপুরে অর্পিতা ঘোষের বদলে নিয়ে আসা হয়েছে গৌতম দাসকে । নদিয়ার গৌরি শংকর দত্তের বদলে নিয়ে আসা হয়েছে মহুয়া মৈত্রকে । অন্যদিকে পার্থপ্রতিম রায়কে করা হয়েছে কোচবিহারের জেলা সভাপতি ।
হাওড়ার যে নতুন জেলা কমিটি তৈরি করা হয়েছে, তাতে কোঅর্ডিনেটর হিসেবে রাখা হয়েছে দলের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে । সম্প্রতি তৃণমূলের দলীয়স্তরে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রকাশ্যে এনেছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় । পাশাপাশি রাজ্য কমিটিতে রাখা হয়েছে ছত্রধর মাহাতকে । অনেকটাই অবাক করার মতো বিষয়টি । এককালে মাওবাদীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তাঁর পরিচয় ছিল । এছাড়া CPI(M) ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কেও রাখা হয়েছে নতুন রাজ্য কমিটিতে ।
রাজ্যের পশ্চিমের জেলাগুলি অর্থাৎ, জঙ্গলমহলেও বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে সাংগঠনিক স্তরে । শ্যামল সাঁতরাকে করা হয়েছে বাঁকুড়ার জেলা সভাপতি । ঝাড়গ্রামের দায়িত্ব পেয়েছেন দুলাল মুর্মু । পুরুলিয়ায় তৃণমূলের জেলা সভাপতি হয়েছেন গুরুপদ টুডু । ঝাড়খণ্ডের এই সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলিও BJP বেশ সাফল্য পেয়েছে । সেই কারণেই এই জেলাগুলিতে নিজের ভিত আরও মজবুত করতে চাইছেন মমতাবন্দ্যোপাধ্যায় ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতোই রাজ্যে এখন দল কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, তা পর্যালোচনা করতে দিল্লিতে বৈঠক চলছে BJP-র। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, দলীয় সাংসদ, বিধায়ক ও অন্যান্য নেতাদের নিয়ে ম্যারাথন বৈঠক শুরু হয়েছে । চলবে এক সপ্তাহ ধরে । বৈঠকে থাকবেন অমিত শাহ ও BJP-র সর্ব ভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাও । এছাড়াও BJP-র সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক বি এল সন্তোষ, বাংলার BJP পর্যবেক্ষক শিবপ্রকাশ, অরবিন্দ মেনন ও কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ও উপস্থিত থাকবেন বৈঠকে ।