কলকাতা, 26 মে : দুর্যোগের রাজ্য়ে কি ঘুচল রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ? ঘুচে গেল কেন্দ্র-রাজ্য দড়ি টানাটানি ? নাহ ! এতটাও কিছু হয়নি হয়তো ৷ তবুও যশের খাঁড়া পার করে কিছুটা হলেও যেন নমনীয় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ৷ যা নজর কেড়েছে অনেকেরই ৷
বুধবার ওডিশার বালেশ্বরের দক্ষিণ উপকূলে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় যশ ৷ আবহবিদদের পূর্বাভাস ছিল, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ফের একবার নাস্তানাবুদ হতে হবে বাংলাকে ৷ তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগে থেকেই সতর্ক ছিল প্রশাসন ৷ মাঠে নামানো হয়েছিল 3 লাখেরও বেশি রাজ্য সরকারি কর্মী ও আধিকারিককে ৷ সেচ, বিদ্য়ুৎ থেকে শুরু করে পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ার, রাজ্য় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, সকলকেই লাগানো হয়েছিল কাজে ৷ প্রাণহানি এড়াতে উপকূলীয় এলাকা থেকে আগেভাগেই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় 15 লাখেরও বেশি মানুষকে ৷ আপদকালীন পরিস্থিতিতে মেরামত করা হয় বাঁধ ৷ চলে কঠোর নজরদারি ৷
মুখ্যমন্ত্রীর মতে, এই তৎপরতাই সুফল মিলেছে হাতেনাতে ৷ যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, যশের ফলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার তুলনায় অনেকটাই কম ৷ এদিন যশের প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পরই নবান্নে ভার্চুয়াল বৈঠকে বসেন মমতা ৷ সেখানেই প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মী ও আধিকারিকদের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি ৷ আর তখনই ওঠে কেন্দ্র-রাজ্য প্রসঙ্গ ৷ এক সাংবাদিকের প্রশ্নের মুখে যে উত্তর দেন মুখ্যমন্ত্রী, তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের ৷
মমতাকে প্রশ্ন করা হয়, যশ মোকাবিলায় কি কেন্দ্রের যথাযথ সাহায্য পেয়েছে নবান্ন ? নাকি পুরোটাই সামলাতে হয়েছে রাজ্য সরকারকে ৷ এর উত্তরে মমতা যা জানান, তার সারমর্ম হল, এটা দুর্যোগের সময়, কেন্দ্র-রাজ্য দড়ি টানাটানি করার সময় নয় ৷ তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, রাজ্য়ের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী সকলেই যশ মোকাবিলায় কোমর বেঁধেছিল ৷ কাজ করেছিল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ৷ আর সেই কারণেই এত বড় একটা দুর্যোগ পেরোনো গিয়েছে বড় কোনও অঘটন ছাড়াই ৷ প্রসঙ্গত, এদিন দুপুর পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় চলাকালীন শুধুমাত্র একজনের মৃত্য়ুর খবর পাওয়া গিয়েছে ৷ প্রশাসনিক সূত্রের খবর, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দুর্যোগের সময় মাছ ধরতে বেরিয়ে প্রাণ খোয়াতে হয়েছে একজনকে ৷
আরও পড়ুন : ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় ম্য়ানগ্রোভ অরণ্য তৈরিতে জোর মুখ্যমন্ত্রীর
একুশের ভোটপর্ব মিটেছে একমাসও হয়নি ৷ নির্বাচনের আগের সময় থেকে রাজ্য়জুড়ে কার্যত লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পরও নানা ইস্যুতে কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে রাজ্য সরকার ৷ নারদ কাণ্ডে চার হেভিওয়েটের গ্রেফতারি হোক, কিংবা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীদের অপমান করার অভিযোগ, এমনকী, যশ মোকাবিলায় কেন্দ্রের দেওয়া আগাম ত্রাণের অর্থমূল্য নিয়ে কেন্দ্রের তুলোধনা করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ৷ তুলেছেন প্রতিহিংসা ও বঞ্চনার অভিযোগ ৷ সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের মুখেই এদিনের কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ প্রচেষ্টায় যশের মোকাবিলার তত্ত্ব শুনে বিষম খেয়েছেন অনেকেই ৷ ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ অবশ্য এই ঘটনাকে প্রশাসক মমতার পরিণত আচরণ বলেই মনে করছেন ৷ যিনি তাঁর রাজধর্মের মধ্যে খুব সতর্কভাবেই রাজনীতিকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রকাশ্য বার্তা দিয়েছেন ৷