দুর্গাপুর, 7 সেপ্টেম্বর : একজন বা দু’জন নয় ৷ এ নিয়ে দুর্গাপুরে কর্মসূত্রে আসা তিনজন উচ্চপদস্থ ব্যাঙ্ক আধিকারিকদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ উঠেছে ৷ আর তাদের দেহ লোপাট করার চেষ্টা সুপারি কিলারদেরও লজ্জায় ফেলতে পারে ৷ গতকাল কাঁকসা থানার বামুনাড়ায় একটি বহুতল আবাসনের বাসিন্দা ব্যাঙ্ক আধিকারিক বিপ্লব পরিদা তার স্ত্রী ইপ্সা প্রিয়দর্শিনীকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে বলে অভিযোগ ওঠে ৷ তার পর সেনিজেই কাঁকসা থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে । দুর্গাপুরে গত এক দশকে তিনজন ব্যাঙ্ক আধিকারিকের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ উঠেছে ৷ যা ভাবাতে শুরু করেছে পুলিশ প্রশাসনকে ৷
2015 সালের 29 অগস্ট দুর্গাপুর নিউটাউনশিপ থানার মামড়া বাজারের এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখার ম্যানেজার সমরেশ দুর্গাপুর বিধাননগর সরকারি হাউসিং এর বাসিন্দা সুচেতা চক্রবর্তী ও তাঁর শিশুকন্যাকে খুন করে বলে অভিযোগ ৷ চপার দিয়ে টুকরো টুকরো করে একটি বড় ট্রলিতে দেহ ঢুকিয়ে হুগলি নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া চেষ্টা করেছিল সে ৷ তবে দেহ ভাসাতে গিয়ে নদীঘাটে মাঝি ও অন্যান্য যাত্রীদের হাতে ধরা পড়ে যায় ৷ তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছিল, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল সমরেশ এবং সুচেতার মধ্যে ৷ সুচেতা তাঁর স্বামীর সঙ্গে না থেকে বিধাননগরে বাপের বাড়িতে থাকতেন ৷ আর সেই সময় সমরেশ প্রায়ই সুচেতার কাছে যেত । পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সুচেতা চক্রবর্তী বিয়ের জন্য সমরেশকে লাগাতার চাপ দিচ্ছিলেন । কলকাতায় নিজের পরিবার থাকা সমরেশ এর পরেই সুচেতা এবং তাঁর ছোট্ট শিশুকন্যাকে খুনের চক্রান্ত করে বলে অভিযোগ ৷ আদালতের বিচারে দোষী সাব্যস্ত হয় সমরেশ ৷ যদিও পরবর্তী সময়ে সমরেশের আবেদনে মামলাটির এখনও শুনানি চলছে ৷
আরও পড়ুন : Behala Double Murder: বেহালা জোড়া খুনে মৃতের স্বামীর বয়ানে একাধিক অসঙ্গতি, নমুনা সংগ্রহ ফরেনসিকের
দ্বিতীয় ঘটনা 2018 সালের 11 ফেব্রুয়ারি ৷ বাঁকুড়ার মেজিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার রাজীব কুমার তাঁর স্ত্রী’র অনুপস্থিতিতে মেজিয়ার এক ব্যাঙ্ককর্মী শিল্পা আগরওয়ালকে নিজের ভাড়া নেওয়া বহুতল আবাসনে নিয়ে আসে ৷ শিল্পার সঙ্গে বহুদিন ধরেই রাজীবকুমারের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ৷ স্ত্রীর অবর্তমানে শিল্পার সঙ্গে নিজের ফ্ল্যাটে থাকছিল সে ৷ অভিযোগ 13 ফেব্রুয়ারি শিল্পার মাথায় ধাতব কিছু দিয়ে আঘাত করে খুন করে রাজীব ৷ অভিযোগ শিল্পার মৃত্যু নিশ্চিত করতে রাজীবকুমার তাঁর মুখে বালিশ চাপা দিয়েছিল । এর পর রাজীবকুমার শিল্পার দেহ লোপাটের চক্রান্ত শুরু করে ৷ শিল্পার দেহ ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখে সে ৷ এর পর বাজার থেকে ট্রলিব্য়াগ কিনে আনে এবং তার মধ্যে দেহ ভোরে পাচারের পরিকল্পনা করে ৷
আরও পড়ুন : Behala Double Murder : পর্ণশ্রী কাণ্ডের জট খুলতে মনস্তাত্ত্বিকের সাহায্য নিচ্ছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা
14 তারিখে রাজীবকুমারের স্ত্রী মনীষাদেবী বাপের বাড়ি থেকে ফেরেন । ওইদিন রাজীবকুমার বাঁকুড়ার মেজিয়া শাখায় কাজে যান ৷ ফিরে এসে তার স্ত্রী মনীষাদেবীকে বিস্তারিত ঘটনা বলেন। শিল্পা আগরওয়াল আসানসোলে তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে রাজীবকুমারের ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন । সেখানে গিয়েই মোবাইল বন্ধ করে দেওয়ার কারণে, তাঁর পরিবার খোঁজাখুঁজি শুরু করেছিল ৷ পুলিশ জানতে পারে শিল্পার মোবাইলের শেষ টাওয়ার লোকেশন বেনাচিতি নঈমনগর এলাকায় । শিক্ষিত ব্যাঙ্ক আধিকারিক রাজীবকুমার তাঁর স্ত্রী মনীষাদেবীকে শিল্পাকে খুন ও তাঁর দেহ লুকিয়ে রাখার কথা জানায় ৷ এর পরেই মনীষাদেবী দুর্গাপুর থানায় খবর দেন । পুলিশ ট্রলি সহ শিল্পার দেহ উদ্ধার করেছিল । রাজীবকুমার ও মনীষা দু’জনকেই গ্রেফতার করে দুর্গাপুর থানার পুলিশ ৷ পরে অবশ্য মনীষাদেবীর শিল্পা আগরওয়াল খুনে প্রত্যক্ষ যোগ না থাকায়, তাঁকে মুক্তি দেয় আদালত ৷ রাজীবকুমার বর্তমানে বিচারাধীন বন্দি ৷
আরও পড়ুন : Murder : নিত্য অশান্তি, মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে দিয়ে স্বামীকে খুন করার অভিযোগ কোলাঘাটে
এর পর গত রবিবার রাতে কাঁকসার বামুনাড়ায় ব্যাঙ্ক আধিকারিকের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে খুনের অভিযোগ উঠেছে ৷ ব্যাঙ্ক আধিকারিক বিপ্লব পরিদা অবশ্য নিজেই কাঁকসা থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে ৷ উচ্চশিক্ষিত, ব্যাঙ্কে মোটা মাইনে পাওয়া উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের এই অপরাধ প্রবণতা ভাবাচ্ছে পুলিশকেও । দুর্গাপুরে এই প্রোফাইলের 3 জনের অপরাধে একাধিক প্রশ্ন উঠছে ৷ ঠান্ডা মাথায় খুন, দেহ লোপাটের চেষ্টা এবং দেহ লোপাটের জন্য যা যা পরিকল্পনা তা কুখ্যাত খুনিদের ভাবনাকেও হার মানাচ্ছে । যা কার্যত সামাজিক অবক্ষয়ের উদাহরণ বলেই মনে করা হচ্ছে ৷