হিরাপুর, 2 অক্টোবর: দুর্গাপুজো মানেই চোখ-ধাঁধানো থিমের বাহার । কে কাকে টেক্কা দেবে সেই প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে পুজো কমিটিগুলি । কে ছিনিয়ে নেবে সেরার সেরা পুরস্কার তা নিয়ে চলছে তরজা ৷ চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি । থিমের পুজোর মাঝেও গ্রামাঞ্চলে দুর্গাপূজায় আজও নানা পৌরাণিক গল্প কথার খোঁজ মেলে । তেমনি এক গল্পের সন্ধানে ETV ভারতের ক্যামেরা পৌঁছে গিয়েছিল হিরাপুরের বিদ্যানন্দপুর গ্রামে ।
এই গ্রামে মজুমদারদের পারিবারিক পুজোর রীতি রেওয়াজ অনেকটাই আলাদা । এখানে কোনও নবপত্রিকা নেই, কলা বউ স্নান হয় না এখানে । তবে রয়েছে প্রতিষ্ঠিত রত্নবেদি । শুধু তাই নয়, মজুমদারদের দুর্গামন্দিরে নাকি মা দুর্গার পায়ের ছাপ রয়েছে । পাথরে খোদাই ওই পায়ের ছাপ শুধুমাত্র সপ্তমীর দিন থেকে দশমীর দিন পর্যন্ত দেখা যায়, এমনটাই বিশ্বাস তাঁদের ।
আসানসোল পৌরনিগমের একেবারে প্রান্তিক অঞ্চলে অবস্থিত এই বিদ্যানন্দপুর গ্রাম । গ্রামের মজুমদার পরিবারের পুজো প্রায় 200 বছরের পুরোনো । পরিবারের চতুর্থ পুরুষ ডোমন মজুমদার এই পূজার প্রচলন করেছিলেন । এই পুজোর বিশেষত্ব হল এই পুজোতে কোন নবপত্রিকা নেই । সপ্তমীর দিন সকালে পুকুর বা নদীর থেকে যে নবপত্রিকা স্নান করিয়ে নিয়ে আসা হয়, এখানে সেই রীতি রেওয়াজ নেই । বরং সপ্তমীর দিন সকালে শুধুমাত্র দুর্গার ঘট নিয়ে আসা হয় মজুমদার পরিবারের দুর্গা মন্দিরে ।পরিবারের সদস্যরা জানান এখানে নবপত্রিকা প্রতিষ্ঠা করা আছে রত্নবেদিতে ।
গোলাকৃতি একটি বড় পাথর দেখিয়ে পারিবারিক সদস্য রাধারমন মজুমদার বলেন, ''ওটাই মন্দিরের রত্নবেদি । কলা বউ প্রতিষ্ঠা করা আছে বলে আর নতুন করে নবপত্রিকা নিয়ে আসা হয় না । প্রতিদিন পুজো হয় । অন্যদিকে রত্নবেদির ঠিক পাশেই লাল শালু কাপড় জড়ানো আরেকটি প্রস্তরখণ্ড রয়েছে ।'' রাধারমন বাবুর দাবি, মা দুর্গার পায়ের ছাপ রয়েছে এতে । এটি শুধুমাত্র সপ্তমীর দিন থেকে দশমীর দিন পর্যন্ত খোলা হয় ।
রাধারমন বাবু বলেন, ''প্রথমে প্রাচীন মন্দির ছিল মাটির । পরবর্তীকালে সেই মন্দির ভেঙে নতুন মন্দির করার সময় এই পায়ের ছাপ মন্দিরে পাওয়া যায় । তখন থেকে সেই পায়ের ছাপটি সারাবছর ঢাকা দিয়ে রাখা থাকে। পুজোর চারদিন শুধুমাত্র খোলা হয় ।'' বর্তমানে এই পুজো পরিবারের মিলনের উৎসব । দূর-দূরান্তে যে সমস্ত সদস্যরা রয়েছেন, তাঁরাও চলে আসে পুজোর চারদিন ৷ চলে খাওয়া-দাওয়া ।