বর্ধমান, 9 অক্টোবর : তখন জমিদারি আমল। বর্ধমানের তেজগঞ্জ এলাকার জমিদার ছিলেন ব্রজেন্দ্রলাল দাস। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। একদিন তিনি স্বপ্ন দেখেন, দেবী তাঁকে আদেশ করছেন বাড়িতে শিব-দুর্গার পুজো করলে তিনি সন্তান লাভ করবেন। তারপরই এই জমিদার বাড়িতে তাঁর হাত ধরে সূচনা হয় দুর্গাপুজোর ৷ বাড়িতে আনা হয় শিব-দুর্গার মূর্তি । তবে দেবী এখানে সিংহ বাহিনী নন । ষাঁড়ের উপরে উপবিষ্ট শিব-দুর্গা। একচালার দেবী মূর্তি। সঙ্গে আছেন লক্ষ্মী,গণেশ,কার্তিক,সরস্বতী।
দাসবাড়ির পরিবার সূত্রে জানা যায়, বর্ধমানের মহারাজা বিজয় চাঁদের সঙ্গে ব্রজেন্দ্রলাল দাসের ভাল সম্পর্ক ছিল। সেই সময় পুজো হত খুব ধুমধাম করে। পঞ্চমীতে ঘট এনে পুজো শুরু হত। সপ্তমীতে দামোদর নদে কলা বউকে স্নান করিয়ে মপে আনা হত। সেই রীতি আজও বর্তমান৷ অষ্টমীর দিন আকাশে ওড়ানো হয় শঙ্খচিল। তবে এখানে পশুবলি দেওয়া হয়না, পরিবর্তে ছাঁচি কুমড়ো বলি দেওয়া শুরু হয়।
আরও পড়ুন : 350 বছরের বুড়িমার পুজোয় শুধু ঐতিহ্য নয়, রয়েছে সম্প্রীতির ছোঁয়াও
দিনে দিনে দাস বাড়ির দেওয়ালে ক্ষয় ধরতে শুরু করেছে। বিশাল জমিদার বাড়ির বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়েছে। তবে এখনও সেই বাড়ির সামনে গেলেই আভিজাত্যের ছাপ চোখে পড়বে। বাড়ির সামনে বিশাল আকারের সদর দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেই মিলবে বিশাল উঠোন। সামনেই দুর্গা দালান। সেখানে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। আগে কৃষ্ণনগর থেকে শিল্পীরা আসতেন দেবী মূর্তি তৈরি করতে। এখন অবশ্য বর্ধমানের শিল্পীরাই এই প্রতিমা তৈরি করেন। ব্রজেন্দ্রলাল দাসের নাতি শিবশংকর দাস বলেন, "আমার দাদু নিঃসন্তান ছিলেন। মায়ের স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পরে তিনি পুজো শুরু করেন। তারপর বাবার জন্ম হয়। এখানে মা দুর্গা মহাদেবকে সঙ্গে নিয়ে ষাঁড়ের পিঠে চড়ে আসেন। অষ্টমীর দিনে আকাশে শঙ্খচিল ওড়ে। দশমীর দিন হয় প্রতিমা নিরঞ্জন।"