আসানসোল, 9 জানুয়ারি : ইচ্ছাশক্তি থাকলেও প্রতিকূলতা জয় করা সম্ভব । তেমনই এক হার না মানা যুবতি ফাল্গুনী মণ্ডল । জন্মগতভাবে দুটি পা নেই । হাত থাকলেও তা প্রায় অকেজো । আঙুল থাকলেও না থাকার সমান । কিন্তু চোখে রয়েছে স্বপ্ন ৷ সমাজ গড়ার কারিগর শিক্ষক হতে চান। SSC পরীক্ষায় এবার বসবেন তিনি ।
শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন ফাল্গুনী । SSC পরীক্ষা দিয়ে সেই যোগ্যতা অর্জন করতে চান তিনি । তাই D.EL.ED- ট্রেনিং করছেন । মায়ের কোলে চেপে ১০টি বছর স্কুলে । কলেজে গিয়ে পড়াশোনা করে অবশেষে SSC পরীক্ষায় অংশ নিতে ইচ্ছুক জন্ম থেকে বিশেষভাবে সক্ষম এই শিক্ষার্থী । অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যেই বিভোর লড়াকু যুবতি ফাল্গুনী । হাত দিয়ে সেই ভাবে লিখতে পারেন না ফাল্গুনী । তাই পরীক্ষা হলে অণুলেখকের সাহায্য নিতে হয় তাঁকে । ফাল্গুনীকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মায়ের সাহায্যে চলতে হয় ।
ফাল্গুনী মণ্ডল ছোটো থেকেই মায়ের কোলে চেপে প্রাইমারি স্কুল, হাই স্কুল । এখনও কলেজে যেতে হয় মায়ের কোলে চেপেই । ফাল্গুনী মণ্ডল বলেন "স্কুল পৌছে দিতে বাবা অথবা বোন । আমি নিজে যেতে পারতাম না । বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মায়ের সাহায্যে আমাকে স্কুলে যেতে হয় ৷ মায়ের কোলে চেপেই স্কুল, কলেজ ও টিউশন । অনেক সময় খারাপ লাগে কিন্তু নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে কারণ অন্যান্য মেয়েদের মতো আমি স্বাভাবিক নই। পড়াশোনার ক্ষেত্রে অসুবিধা শুধুমাত্র লেখার জন্য । বেশি লেখা লিখতে পারি না কারণ হাতে ব্যথা করে । তাই পরীক্ষা হলে রাইটার নিতে হয় । মা বাবা ছাড়া আমার অস্তিত্ব নেই ।একটা ভালো চাকরি করব আর বাবা-মায়ের সঙ্গে সারা জীবন থাকব।''
ফাল্গুনীর মা সুচিত্রা মণ্ডল জানান " আমার মেয়ে জন্ম থেকে ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধী । মেয়েকে কোলে নিয়ে স্কুল ও টিউশন করিয়েছি । এখনও কোলে করেই কলেজে নিয়ে যেতে হয় মেয়েকে । আমাকে ছাড়া সে কিছুই কাজ করতে পারে না ।" তিনি আরও বলেন, "আমরা অতি দরিদ্র, আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন নেই ! মেয়ে প্রতিবন্ধী বলে তাঁকে বাড়িতে ফেলে রাখিনি । আরও পাঁচটি মেয়ের মতোই স্কুল-কলেজের পড়াশোনা করাচ্ছি ।"