আসানসোল, 17 অগস্ট : রাতে আবির মাখলেন জেলার শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্ব পেয়ে, আর সকালে কেড়ে নেওয়া হল প্রশাসনিক পদ। তৃণমূলের এক ব্যক্তি এক পদ নীতি কার্যকর করাতেই এই ওঠানামা । অভিজিৎ ঘটককে সরানো হল আসানসোল পৌরনিগমের প্রশাসনিক বোর্ড থেকে । শুধু তিনিই নন, বিতর্কিত তবাসুম আরা-সহ পদ খুইয়েছেন আরও তিনজন ৷ পৌরনিগমের হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে গুঞ্জন তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে ৷
সাংগঠনিক স্তরে যাতে আরও সময় দিতে পারেন সে কারণেই প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যহতি ? নাকি অন্য কারণ রয়েছে ? অভিজিৎ ঘটক ছাড়াও প্রশাসনিক বোর্ড থেকে সরানো হয়েছে তবাসুম আরা, অঞ্জনা শর্মা এবং পূর্ণশশী রায়কেও । তাঁদের জায়গায় আনা হয়েছে আসানসোল বিবি কলেজের অধ্যক্ষ অমিতাভ বসু, বিশিষ্ট সমাজকর্মী চন্দ্রশেখর কুণ্ডু এবং প্রাক্তন কাউন্সিলর মানস দাসকে ।
কয়েকদিন আগে নিজের হাতে ভ্যাকসিন দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন আসানসোল পৌরনিগমের প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তথা প্রশাসনিক বোর্ডের সদস্য তবাসুম আরা । তারপর থেকেই তাঁকে নিয়ে 'মাথাব্যথা' তৈরি হয়েছিল পৌরনিগমের । মঙ্গলবার তবাসুম আরাকে প্রশাসনিক বোর্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হল । তবে তবাসুম জানিয়েছেন, "দলীয় সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিয়েছি ।"
কিন্তু অভিজিৎ ঘটককে কেন সরানো হল, তার উত্তর মিলছে না । গতকালই তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বে ব্যাপক রদবদল হয় । অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের জায়গায় জেলা সভাপতি পদে বসানো হয় বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়কে । বিধানসভা ভোটে কুলটির পরাজিত প্রার্থী তথা প্রাক্তন বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়কে বসানো হয়েছে তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান পদে । অভিজিৎ ঘটককে নিয়ে আসা হয়েছে তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের (INTTUC) জেলা সভাপতি পদে ৷ এই খবর আসার পরেই উৎসবে চেহারা হয় আসানসোলে । গতকাল রাতেও অভিজিৎ ঘটককে নিয়ে মিছিল বের করা হয় । সবুজ আবির মাখানো হয় । বাজি পুড়িয়ে বিজয়োল্লাস করে বাস শ্রমিক সংগঠন ।
কিন্তু তারপরে হঠাৎ খবর আছে আসানসোল পৌরনিগমের প্রশাসনিক বোর্ড থেকে চারজনকে সরানো হয়েছে । কলকাতা থেকে এই চিঠি আসার পরেই পৌরনিগমজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় । অভিজিৎ ঘটকের অনুগামীরা মনমরা হয়ে পড়েন ।
অভিজিৎ ঘটক এবং বাকি অপসারিতদের মধ্যে তবাসুম আরা গত পুরভোটের ডেপুটি মেয়র ছিলেন । বাকি তিনজন মেয়র পারিষদ পদে ছিলেন । অন্যদিকে তাঁদের জায়গায় নতুন যাঁদের নিয়ে আসা হয়েছে তাঁরা কোনও দিন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন । কাউন্সিলরও ছিলেন না । এমনই একজন হলেন, আসানসোল বিবি কলেজের অধ্যক্ষ অমিতাভ বসু ও বিশিষ্ট সমাজসেবী চন্দ্রশেখর কুণ্ডুকে নিয়ে আসা হয়েছে ৷ রাজনীতির সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগাযোগ নেই । মনে করা হচ্ছে, সামাজিক বার্তা দেওয়ার জন্যই বুদ্ধিজীবীদের স্থান করে দেওয়া হয়েছে পৌরনিগমের প্রশাসনিক বোর্ডে । চার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে সরিয়ে তথাকথিত অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের আনলেও গত পৌরবোর্ডের কাউন্সিলর মানস দাসকেও ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে ৷ তার কারণ জানা যায়নি ৷
আসানসোল পৌরনিগমের মুখ্য প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, অভিজিৎকে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৷ সেখানে সাংগঠনিক কাজ যাতে তিনি ভালভাবে করতে পারেন তার জন্য তাঁকে অন্য দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে ৷ এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, বিধান উপাধ্যায় বিধায়ক পদে থাকার পরও তাঁকে জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৷ তাহলে অভিজিৎ ঘটককে কেন সরিয়ে দেওয়া হল ? সে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি ৷
আরও পড়ুন : Fake vaccination : আসানসোল পৌরনিগমের নামে ভুয়ো ভ্যাকসিন কেন্দ্রের ঠিকানা সোশ্যাল মিডিয়ায়