আসানসোল, 17 মে : বিজ্ঞানকর্মী, যুক্তিবাদীদের কাছে নিছকই ধর্মান্ধতা হতেই পারে । কিন্তু কুলটির মিঠানীতে শতাব্দী প্রাচীন ধর্মরাজ পুজোর 'ঝুপাল' যাত্রার উন্মাদনা এলাকার মানুষের কাছে আবেগ । তাই তাঁরা আজও এই উৎসবে মাতেন । আশ্চর্যের দৃশ্য এই পুজোয় অংশগ্রহণকারী ভক্তকূল প্রায় 50 ঘন্টা উপবাসে থাকেন । তারপরেও ঢাকের তালে এই দৌড়, উন্মাদনা, নিছকই কি ধর্মান্ধতা?
বছরের পর বছর এই চিত্রের বদল হয়নি । মিঠানী গ্রামের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষও আজও মাতেন প্রাচীন এই উৎসবে । আসানসোলের কুলটির মিঠানী গ্রাম হল মহকুমার অন্যতম বর্ধিষ্ণু গ্রাম । শিক্ষিত মানুষজনের বসবাস । এই গ্রামের রুচি, সংস্কৃতি ও একতাবোধ শহরের এলিটদেরও হার মানায় । গ্রামে বেশ কয়েকটি প্রাচীন উৎসব আছে । তার মধ্যে এই ধর্মরাজ পুজো অন্যতম । আর ধর্মরাজ পুজোর অন্যতম আকর্ষণ, পুজোর রাতে ঝুপাল যাত্রা (Dharmaraj puja in Asansol)।
গ্রামবাসী ও স্থানীয় লোকাচার নিয়ে তথ্য সংগ্রহকারী রুদ্রপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, "ধর্মরাজ হলেন গ্রাম্য দেবতা । পশ্চিম বর্ধমান জেলার মিঠানী গ্রামে এই দেবতা অধিষ্ঠিত রয়েছেন । শাস্ত্রমতে ধর্মরাজ হলেন যমরাজ । পোড়া মাটির তৈরি ঘোড়া হল ধর্মরাজের বাহন । দূরারোগ্য ব্যাধি নিরাময়ের জন্য ও অন্যান্য নানান জটিল সমস্যা থেকে সুরহা পেতে অনেকেই এই ঘোড়া ধর্মরাজকে মানত হিসেবে দান করে থাকে । ধর্মরাজ পূজা সাধারণত বুদ্ধপূর্ণিমার দিনে পালিত হয়ে থাকে । ধর্মরাজ পূজার সঙ্গে শিবেরও যোগসূত্র রয়েছে । সেই কারণ মন্দিরে ধর্মরাজের সঙ্গে লৌহশলাকা যুক্ত একটি কাঠের পাটাতনকে রাখা হয়, যা বাণেশ্বর নামে পরিচিত । পুজোর রাতে ধর্মরাজের গ্রাম পরিক্রমা করার রীতিকে স্থানীয় ভাষায় 'ঝুপাল' বলা হয় ।"
তিনি আরও বলেন, "ঝুপালে লালশালুতে বাঁধা ধর্মরাজ দেবতা গ্রামীন পুষ্করিনীতে যান মুক্তালয় রীতি পালন করতে । যাওয়ার সময় লাঠির মাঝে, আর ফিরে আসার সময় বেতের ঝুড়ি বা স্থানীয় ভাষায় ডালায় । যাঁরা ওই লাঠি ও বেতের ঝুড়ি ধরেন, তাদের ভর আসে । এরপর ঢাকের তালে, ধুনোর ধোঁয়ায়, তাদের বারবার জাগানো হয় । তাঁরা গ্রামজুড়ে ছুটতে থাকে । আর তাদের সঙ্গে অনান্য ভক্তকূল ও গ্রামবাসীরা ।"
আরও পড়ুন : Kacha Badam Part 2 : আসছে কাঁচা বাদাম পার্ট টু, আশাবাদী ভুবন
ধর্মরাজ পূজা বুদ্ধপূর্ণিমার দিনে অনুষ্ঠিত হলেও এই পূজা সম্পন্ন হতে সময় লাগে তিনদিন । পুজোর আগেরদিন থেকেই ভক্তরা উপবাস করতে শুরু করে । ভক্তদের লোটন, ডণ্ডি দেওয়া, প্রায় 50 ঘন্টার উপবাস ধর্মরাজ পূজার বিশেষ অংশ । গ্রামবাসীদের কাছে বিশ্বাস জাগ্রত দেবতা ধর্মরাজ । তাই বিষয়টির বিস্তারে কেউই যেতে রাজি নয় । স্থানীয় বিজ্ঞান মঞ্চের নেতারাও ধর্মরাজ পুজোর ঝুপাল নিয়ে কখনও মন্তব্য করতে চাননি । তাদের মতে, মানুষের বিশ্বাসে আঘাত দিতে নেই । এই রীতি তো সমাজের কোনও ক্ষতি করে না ।