আসানসোল, 14 মে : তাঁর জন্মের পর পরিবারের সমস্ত রঙ যেন ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল ৷ সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত সুকল্পকে নিয়ে বাবা-মা তখন আকুল ৷ কী করে মানুষ করবেন ছেলেকে ? কীভাবেই বা তাঁকে বড় করে তুলবেন ? কিন্তু, জীবনের রঙ নিজেই খুঁজে নিয়েছেন সুকল্প ঘটক ৷ রঙ-তুলিই তাঁর প্রথম ভালবাসা ৷ ছবি এঁকেই জীবনের মূলস্রোতে ফিরেছেন তিনি ৷ কঠিন পথচলায় বাবা-মায়ের সঙ্গেই বন্ধু হিসাবে পাশে পেয়েছিলেন আঁকার প্রশিক্ষককে ৷ সেই সুকল্প ঘটকের আঁকা ছবি এবার চিত্র প্রদর্শনীতে জায়গা করে নিল ৷ আর জীবনের প্রথম চিত্র প্রদর্শনীতেই তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সুকল্প (Cerebral Palsy affected Sukalpa Ghatak has found a new way of life through painting) ৷ বিশিষ্টরা জানাচ্ছেন, তাঁর ছবির মধ্যে গভীর জীবনবোধ উঠে এসেছে ৷
সুকল্প ঘটক ৷ আসানসোলের বার্নপুর শিল্পশহরে জন্ম তাঁর ৷ জন্মের পরেই জানা যায় সুকল্প সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত ৷ একটু বড় হতেই, তাঁর পড়াশোনা জন্য সপরিবার দুর্গাপুরে চলে যেতে হয় তাঁদের ৷ তাঁকে প্রথমে বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের স্পেশাল স্কুলে ভর্তি করানো হয় ৷ সেখানেই পড়াশোনা এবং অন্যান্য কাজকর্মের মধ্যে বড় হচ্ছিলেন তিনি ৷ তাঁর বাবা-মা জানিয়েছেন, মাত্র 4 বছর বয়সে ছবি আঁকা শুরু করেন সুকল্প ৷ আর সেখানেই ঘটে মিরাকেল ৷ ধীরে ধীরে জীবনের মূলস্রোত ফিরতে শুরু করেন তিনি ৷ সঙ্গে পেয়েছিলেন বাবা-মা এবং আঁকার শিক্ষক শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়কে ৷
এর পর স্পেশাল চাইল্ডদের স্কুল থেকে সাধারণ স্কুলে ভর্তি হন সুকল্প ৷ বর্তমানে তিনি কলাবিভাগের স্নাতকের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ৷ কিন্তু, আঁকা তাঁর সঙ্গ ছাড়েনি ৷ রং-তুলিই সুকল্পকে জীবনের যুদ্ধে জিততে শিখিয়েছে ৷ তাঁকে আনন্দ দিয়েছে, খুশি দিয়েছে ৷ তাই ছবিই তাঁর প্রিয় বন্ধু ৷ তাঁর নিকটজনদের মতে, ছবিপ গভীর ভাবনা থেকেই সুকল্পের বিকাশ ঘটেছে ধীরে ধীরে ৷ তাঁর আঁকা ছবিতেও সেই ভাব স্পষ্ট বলে মনে করেন সুকল্পর প্রশিক্ষক ৷
শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ‘‘আমি শুধু ওকে গাইড করেছি ৷ চ্যালেঞ্জটা ও নিজেই নিয়েছিল ৷ আর আমি ওকে আমার ফর্মে শেখাইনি বলেই ওর ছবির নিজস্বতা তৈরি হয়েছে ৷ সমাজ, পরিবেশ, মানুষের গভীর অনুভূতি উঠে এসেছে সুকল্পর ছবিতে ৷’’ সুকল্পর বাবা তরুণ ঘটক অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক ৷ মা জয়শ্রী ঘটক বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের স্কুলে শিক্ষিকা ৷ তাঁরা একসময় সুকল্পের বড় হয়ে ওঠা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন ৷ আজ সুকল্প ঘটকের নিজের আঁকা ছবি প্রদর্শনীতে জায়গা পেয়েছে ৷ প্রসংশা পাচ্ছে তাঁর ছবির ভাবনা ৷ ছেলের এই সাফল্যে আজ তাই চিন্তা নয়, খুশি তাঁরা ৷