ডিজিটাল ঋণ অ্যাপের স্টাফ সদস্যরা জোঁকের থেকেও খারাপ । জোঁক যেখানে নিজেরাই মানুষের রক্ত চুষে খায়, সেখানে অ্যাপ অর্গানাইজ়াররা তাদের শিকারদের জীবন ছারখার করে দেয় । ডিজিটাল ঋণ অ্যাপের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলায় তেলেঙ্গানা হাইকোর্ট কঠোরভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে । ঋণগ্রহণকারীদের বাড়াবাড়ি ইতিমধ্যেই অনেককে আত্মহত্যা করতেও বাধ্য করেছে । এই ধরনের অ্যাপগুলি তাদের শিকারদের প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের ফাঁদে ফেলে কোনও তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই তাৎক্ষণিক ঋণ দেয় । হাইকোর্ট ডিরেক্টর, জেনারেল অফ পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে এই ধরনের অ্যাপ সরাতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ।
ঋণ অ্যাপের সমস্যা কেবলমাত্র কোনও রাজ্য বা এলাকায় সীমাবদ্ধ নেই । ডিজিটাল ঋণ অ্যাপজনিত কার্যকলাপের কারণে হওয়া হইচইয়ের জেরে চেন্নাই এবং বেঙ্গালুরু পুলিশ, শিকার হওয়া মানুষদের সাইবার অপরাধ উইংয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে । একটি বিশেষ ক্রাইম ব্রাঞ্চ তৈরি করা হয়েছে, এই ধরনের ঋণ অ্যাপজনিত সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য । দুই তেলেগু রাজ্যে পর পর হওয়া আত্মহত্যার ঘটনার পর রাজ্যের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং গুগলের সঙ্গে কথা বলতেও শুরু করেছে ।
আরবিআই নিজের তরফে জনগণকে একটি উপদেশ দিয়েছে যাতে তারা সেই সব মানুষদের টোপে না পড়ে, যারা ডিজিটাল ঋণের আশ্বাস দেয় । কিন্তু তারা মানুষকে অজানা–অচেনা কাউকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা আধার তথ্য না জানানোর বিষয়ে সাবধান করা ফোন করার দায়িত্ব পালনে ব্রতী হয়নি । অন্যদিকে গুগল আবার নিজেদের তরফে জানিয়েছে, তারা শয়ে শয়ে ঋণ অ্যাপের কার্যকলাপ নিয়ে তদন্ত করেছে এবং গুগল প্লে-স্টোর থেকে কিছু অ্যাপ সরিয়েও দিয়েছে । বাকি যে অ্যাপগুলি রয়ে গিয়েছে, সেগুলির স্থানীয় আইন মেনে চলা উচিত, এমনটাই এক বিবৃতিতে জানিয়েছে তারা । এক্ষেত্রে এটা উল্লেখ করা যেতে পারে যে, অনেক অ্যাপ প্রথমে প্লে-স্টোর থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও তারা পরে অন্য নাম নিয়ে ফিরে এসেছে ।
কেবলমাত্র আইন মানতে হবে বলে হুঁশিয়ারি জারি করাই যথেষ্ট নয় । সেই সব ঋণ অ্যাপের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করতে হবে যারা মানুষকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করছে । এই ধরনের অ্যাপের অর্গানাইজারদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে খুনের অভিযোগে আইনি পদক্ষেপ করা উচিত এবং এদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা উচিত । এ বিষয়ে কোনও নজরই না দেওয়ার যে অভিযোগ আরবিআই–এর বিরুদ্ধে উঠেছে, তার প্রেক্ষাপটে আরবিআই একটি বিশেষ দল গঠনের ঘোষণা করেছে যা অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলির কার্যকলাপ খতিয়ে দেখবে, যারা নজরদারি কর্তৃপক্ষের আওতায় এসেছে এবং তার পাশাপাশি ডিজিটাল ঋণ অ্যাপগুলিরও কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখা হবে । ঋণ দেওয়ার উপযোগী হতে প্রতিটি ডিজিটাল অ্যাপকে নন-ব্যাঙ্কিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে চুক্তিতে প্রবেশ করতে হবে । আরবিআই তখনও কোনও পদক্ষেপ করেনি যখন এই নিয়মটির লঙ্ঘন হয়েছে । আমরা জানি না কখন নিজের শীতঘুম থেকে জেগে উঠে এই মর্মে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে । লোকসভার কক্ষে ঋণ অ্যাপ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় ইলেক্ট্রনিক্স ও ইনফর্মেশন টেকনোলজি মন্ত্রী কোনও তাপ-উত্তাপই দেখাননি । শুধু এটুকু জানিয়েছেন যে পুলিশ এবং জনগণ সংক্রান্ত নির্দেশিকা রাজ্যের বিষয় ।
আরও পড়ুন : শেয়ারবাজারে জারি বাজেটের তেজ, সেনসেক্স ছুঁল 50 হাজারের সূচক
একজন চিনা নাগরিক, যিনি জাকার্তায় (ইন্দোনেশিয়া) ছিলেন, তাকেই ঋণ অ্যাপের স্রষ্টা হিসাবে ধরে নেওয়া হয় । ভারতের বেশকিছু শহর, যেমন দিল্লিতে এই নিয়ে তদন্ত চলেছে । অনেককে গ্রেফতারও করা হয়েছে । তখনই আবিষ্কার করা যায় যে, মাত্র সাত মাসের ব্যবধানে এই ধরনের অ্যাপের মাধ্যমে 25000 কোটি টাকার লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে । আরবিআই ছাড়াও কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের মধে্য অর্থবহ সংযোগ, যথাযথ নজরদারি এবং পুলিশ বাহিনী দরকার এই র্যাকেটের নেপথে্য থাকা কিংপিনগুলিকে খুঁজে বের করার জন্য ।
আরও পড়ুন : প্রতিবেশী দেশগুলিতে ভারতের অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলি আটকে দিতে চিনের অপচেষ্টা
গুগল বলে, তাদের সব গ্রাহকদের নিরাপদ পরিষেবা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তারা । কিন্তু এই সত্যের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে যে একাধিক ঋণ অ্যাপ যা গুগল থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল, অন্য নামে আবার ফিরে এসেছে । শেষপর্যন্ত ধাক্কাটা এসে পড়ে নাগরিকদের স্বার্থের উপর । এই ধরনের অনলাইন মৃত্যু–পরোয়ানা গঠনকারীদের দৌরাত্ম্য তখনই দূর করা যাবে যখন কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার একজোট হয়ে কাজ করবে এবং সরকারি সংস্থাগুলি তাদের সমর্থন করবে ।