তমলুক ,9 অক্টোবর : একাধিক দুর্নীতি-সহ সরকারি আধিকারিককে মারধরের অভিযোগে তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী পূর্বেই দল থেকে সাসপেন্ড করেছিলেন তৃণমূল নেতা দিবাকর জানাকে । পরে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে । সভাপতি পদের দায়িত্ব দেওয়া হয় শোভা সাউকে । দীর্ঘ সাত মাস কেটে গেলেও গুরুতর অপরাধের কারণে সাসপেনশন প্রত্যাহার করেনি জেলা তৃণমূল কংগ্রেস । তা সত্ত্বেও দলের সমস্ত নির্দেশিকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ফের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পদে বসলেন তৃণমূলের এই সাসপেন্ডেড নেতা দিবাকর জানা । যদিও দলের অনুমোদন ছাড়াই তিনি পদে পুনর্বহাল হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী । ঘটনায় প্রকাশ্যে তৃণমূলকে কটাক্ষ জেলা BJP-র ।
প্রশাসন ও দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের 6 ফেব্রুয়ারি কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেরের ভিতর দলীয় একটি কর্মসূচি থেকে সরকারি আধিকারিককে মারধরের অভিযোগ ওঠে দিবাকর জানা ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে । তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনেরাল ম্যানেজার কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তীর অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তীকালে দিবাকর জানা ও তাঁর এক ঘনিষ্ঠকে গ্রেপ্তার করে তমলুক থানার পুলিশ । অভিযোগ গুরুতর হওয়ায় তমলুক আদালতের বিচারকের নির্দেশে জেল হেপাজত হয় দিবাকর জানার । কয়েকদিন পরেই ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন পান তিনি । দলীয় ভাবে বহিষ্কৃত হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই কোনও দলীয় কর্মসূচিতে তাঁকে দেখা যায়নি ।
অন্যদিকে পঞ্চায়েত সমিতির কাজকর্ম চালানোর জন্য জেলাশাসক পার্থ ঘোষ 17 ফেব্রুয়ারি ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেন শোভা সাউকে । যদিও সেই দায়িত্বভার প্রত্যাহার এবং নতুন দায়িত্ব বণ্টনের আগেই দলীয় কর্মীদের নিয়ে মিছিল করে সভাপতির আসনে বসলেন তৃণমূলের বহিষ্কৃত নেতা দিবাকর জানা । আর এই ঘটনাকে ঘিরে ফের জেলাজুড়ে দলের অন্দরেই শুরু হয়েছে গুঞ্জন ।
যদিও দিবাকরবাবুর দাবি, তিনি আইনজীবী মারফত পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক ও মহকুমা শাসককে লিখিত আকারে নিজের দায়িত্বভার ফেরত চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন ।
আজ প্রায় হাজার খানেক দলীয় কর্মী ,সমর্থক ও নেতাদের নিয়ে কাকটিয়া বাজার থেকে মিছিল করে পঞ্চায়েত সমিতির অফিসে হাজির হন দিবাকর জানা । পরে সভাপতির ঘরে গিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, "কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের গন্ডগোলকে কেন্দ্র করে আমাকে দল থেকে যে সাসপেন্ড করা হয়েছিল তা এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি । আমি বারবার এ বিষয়ে জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী ও মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাঁরা কোনও উত্তর দেননি । কিন্তু আমি সাধারণ মানুষের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি । আমার দায়িত্ব রয়েছে তাঁদের পরিষেবা দেওয়ার । পদ থেকে সরে যাওয়ার পর পঞ্চায়েত সমিতির অফিস কার্যত শ্মশানে পরিণত হয়েছে । সাধারণ মানুষ কেউ পরিষেবা পাচ্ছিলেন না । যে কারণে আমি পঞ্চায়েত সমিতির অন্য সদস্য ও এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত গুলির প্রধান দের অনুরোধে আজ সভাপতির আসনে বসলাম । জেলাশাসক ও মহকুমা শাসককে দায়িত্বভার গ্রহণের আবেদন জানিয়েছে । দেখা যাক ওঁরা কবে সেই দায়িত্ব দেন আমাকে ।"
যদিও এ বিষয়ে জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আধিকারিককে মারধর ও মাস্তানির অভিযোগে দিবাকর জানাকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল । এখনও দিবাকর জানা দলের কেউ নেন । উনি গায়ের জোরে পদে বসেছেন । এ বিষয়ে দলের কোনও অনুমোদন নেই এবং কোনও আলোচনাই হয়নি । দলের তরফ থেকে কয়েক দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে ।
ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে তমলুক সাংগঠনিক জেলা BJP-র সহ-সভাপতি তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন," তৃণমূল কংগ্রেস আগাগোড়াই একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দল । আর সেই কারণেই দল বলছে সভাপতি হওয়া যাবে না, প্রশাসন বলছে আপনি হতে পারেন । সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত এদের দুর্নীতিগুলি দেখছে । আগামী দিনে এই দলটাই আর থাকবে না ।"