কলকাতা, 12 এপ্রিল : গবেষণায় চুরি অর্থাৎ প্লেজিয়ারিজ়ম নিয়ে নীতি তৈরি করতে কমিটি গঠন করল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের গাইডলাইন মেনে এই কমিটি গঠন করা হয়। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নীতি তৈরির জন্য পরশু ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের প্রথম বৈঠকে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি ফ্যাকাল্টির ডিনরা ও লাইব্রেরিয়ান। এছাড়া, গতকাল ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের প্রথম বৈঠকে PhD রেগুলেশন নিয়ে কয়েকটি সমস্যা নিয়েও আলোচনা করা হয়। যার মধ্যে একটি ছিল আন্তঃবিভাগীয় PhD-এর ক্ষেত্রে কয়েকটি শব্দের ভুল ব্যাখ্যা। সেই বিষয়েও বিশদে আলোচনা হয়েছে। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের PhD রেগুলেশন রি-ড্রাফ্ট করার জন্য একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে দীর্ঘ সাত বছর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল হওয়ায় খানিকটা স্বস্তি পেল অধ্যাপক মহল।
কিছুদিন আগেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেখানে কোনও নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকলেও রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি ফ্যাকাল্টির ডিনরা। এছাড়াও আছেন সমস্ত বিভাগীয় প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকরা। কাউন্সিলের শীর্ষে রয়েছেন উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় ও সহ-উপাচার্য দীপক কর। গতকাল সেই ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের প্রথম বৈঠক হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পার্থিব বসু বলেন, "প্লেজিয়ারিজ়ম নিয়ে একটি আলোচনা হয়েছে। প্লেজিয়ারিজ়ম নিয়ে UGC-র একটা গাইডলাইন আছে। কিন্তু, তা নিয়ে প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা নিজস্ব পলিসি থাকা উচিত। এরকম কোনও সুনির্দিষ্ট নীতি এতদিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছিল না। যদিও, সফ্টওয়্যার ব্যবহার করা হত। লাইব্রেরিতে গবেষকরা বিভিন্ন পেপার বা থিসিস পাঠিয়ে দিলে তাঁরা একটা প্লেজিয়ারিজ়ম রিপোর্ট দিতেন। কিন্তু, তার কতটা আমরা মানব, কতটা মানব না প্লেজিয়ারিজ়ম তার সুনির্দিষ্ট একটা রূপরেখার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। সেটা এই আলোচনায় এসেছে। এই কারণেই একটা কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির ডিনেরা এবং লাইব্রেরিয়ান একটা নীতি তৈরি করবেন। সেটা আবার আমাদের আলোচনার জন্য আবার রাখা হবে।"
এছাড়া, ওই দিনের আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের PhD-এর নিয়ম নিয়ে সমস্যার কথাও উঠে আসে। পার্থিববাবু বলেন, "আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় PhD সংক্রান্ত নিয়ম রয়েছে সেটার কিছু আপডেটিংয়ের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। অনেকগুলো জায়গায় বিশদ ক্ল্যারিফিকেশনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। কতগুলো নির্দিষ্ট অসুবিধে তৈরি হয়েছিল। আমরা আগেই উপাচার্যকে বিষয়টি আরও সংশোধন দরকার বা পরিমার্জন করার কথা বলেছিলাম। আলোচনায় উঠে এল এবং সমস্ত অধ্যাপকরা এটা নিয়ে মত দিয়েছেন। রেগুলেশনকে আরও কী করে উন্নততর করা যায়, পরিষ্কার করা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। উপাচার্য বলেছেন একটি ছোটো কমিটি করে দেওয়া হবে। ওই কমিটি ওই পুরো রেগুলেশনটাকে রি-ড্রাফ্ট করবে।"
PhD রেগুলেশনের কোনও জায়গা নিয়ে সমস্যা দেখা দিচ্ছে বা কোন অংশটা পরিমার্জন করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে? এই বিষয়ে পার্থিববাবু বলেন, "আমাদের একটা বিভাগের অধ্যাপক বা অধ্যাপিকার আর একটা বিভাগে পূর্ণ সময়ের সুপারভাইজ়ার হিসেবে গবেষণা করাতে অসুবিধা হচ্ছিল। সেক্ষেত্রে PhD নিয়মের কয়েকটি জায়গাতে শব্দচয়নের ত্রুটিটি থাকাতে সেটা করতে অসুবিধা তৈরি হচ্ছিল। কারণ, কতগুলো জায়গার ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছিল। সেইগুলোকে সংশোধন করার প্রয়োজন নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে। আশা করছি সংশোধন করা হবে। খুব সমৃদ্ধ আলোচনা হয়েছে পরশু। এই আলোচনার মধ্যে দিয়ে রেগুলেশনের চরিত্র কী হওয়া উচিত তার একটি অভিমুখ উঠে এসেছে। সেই অনুযায়ী আমার বিশ্বাস একটা ত্রুটিহীন রেগুলেশন তৈরি হবে।"
দীর্ঘ সাত বছরের দাবি ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল। অবশেষে পূরণ হল সেই দাবি। যদিও, এই কাউন্সিলে কোনও নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই, তবু কি বলা যেতে পারে যে এর মধ্য দিয়ে অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের কথা বলার একটা জায়গা তৈরি হল? পার্থিববাবু বলেন, "এটাই তো আমরা চাইছিলাম এতদিন ধরে যে, অধ্যাপক অধ্যাপিকাদের কথা বলার কোনও গণতান্ত্রিক পরিসর নেই। শিক্ষা সংক্রান্ত, পঠন-পাঠন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে অধিকার যদি কারও থেকে থাকে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। সুতরাং তাদের কথা বলার জায়গাটা ভীষণ দরকার ছিল। সেইটা যে হয়েছে অবশেষে তাতে আমরা খুশি। বিষয়টিকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে এখনও ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্যদের জায়গাগুলো খালি আছে। সহযোগী অধ্যাপক, সহকারি অধ্যাপকদের নির্বাচিত হয়ে আসার প্রয়োজন আছে। সেই দাবিটাও আমাদের থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য সমস্ত যে গভর্নিংবডিগুলো রয়েছে যেমন, সিন্ডিকেট, সেনেট সেখানেও নির্বাচন হওয়ার প্রয়োজন আছে।"