দিল্লি, 14 সেপ্টেম্বর : ভারত-চিন সীমান্তে সংঘাতের বাতাবরণ এখনও প্রশমিত হয়নি । লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় যে সংঘর্ষ হয়েছিল তাতে শহিদ হয়েছিলেন 20 জন ভারতীয় জওয়ান । সেই থেকে একাধিক দফায় কর্পস কমান্ডার স্তরে বৈঠক হয়েছে দুই দেশের । কিন্তু কোনও সমাধানসূত্র এখনও মেলেনি । এদিকে দফায় দফায় এখনও পর্যন্ত শতাধিক চিনা অ্যাপ বাতিল করেছে কেন্দ্র । ভারতের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে ক্ষতিকর বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে ওই অ্যাপগুলির বিরুদ্ধে । এই পরিস্থিতিতে চিনের একাধিক তথ্য ও প্রযুক্তি সংস্থা ভারতের বিভিন্ন বিষয়ে নজরদারি চালাচ্ছে বলে খবর সামনে এসেছে ।
সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে, ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে 10 হাজার মানুষের উপর নজরদারি চালাচ্ছে চিনের এক তথ্য ও প্রযুক্তি সংস্থা । তালিকায় রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে ভারতের কিংবদন্তী ক্রিকেটার সচিন তেন্ডুলকরও ।
প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়েছে, চিনের ওই সংস্থাটি শি-চিংপিনের সরকার, পিপলস লিবারেশন আর্মি ও চিনের কমিউনিস্ট পার্টিকেও বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করে । ফলে, এই নজরদারিতে ওই সংস্থা যে তথ্য পাচ্ছে, তা চিনের প্রশাসনের হাতেও চলে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে ।
শেনহুয়া ডেটা ইনফরমেশন টেকনোলজি কম্পানি লিমিটেড নামের ওই চিনা সংস্থার হাতে রাজনীতি, বিনোদন, ক্রীড়াজগৎ, সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে বেশ কিছু অপরাধীদের সম্পর্কেও তথ্য রয়েছে বলে ওই সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে ।
আরও পড়ুন : হিমাচলের চিন সীমান্তে উচ্চ-সতর্কতা
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিনের শেনহুয়ার ওই তথ্য প্রযুক্তি সংস্থার নজরদারির তালিকায় রয়েছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, কংগ্রেসে অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধি-সহ হেভিওয়েট ব্যক্তিত্বরা । রয়েছেন রাজনাথ সিং, নির্মলা সীতারমনের, স্মৃতি ইরানি, পীযূষ গোয়েলের মতো একাধিক মন্ত্রীও । শুধু তাই নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে ওড়িশা, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র ও পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর নামও রয়েছে সেই তালিকায় । বাদ নেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের নামও । বিশিষ্ট শিল্পপতি রতন টাটা, গৌতম আদানি, PMO-র প্রাক্তন মিডিয়া উপদেষ্টা সঞ্জয় বারু-সহ বেশ কিছু সাংবাদিকেরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে ।
আর সবথেকে বড় যে চিন্তার বিষয়, তা হল এই সংস্থার অন্যতম গ্রাহক শি চিংপিনের সরকার । ফলে তথ্যের হাতবদল হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না । তবে সর্বভারতীয় ওই সংবাদমাধ্যমের তরফে শেনহুয়ার ওই সংস্থাকে যে প্রশ্নগুলি করা হয়েছিল, তার কোনওটিরই সদুত্তর মেলেনি । সংস্থার অভ্যন্তরীণ বিষয় ও বাণিজ্যিক গোপনীয়তার কথা বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে প্রশ্নগুলিকে ।
আরও পড়ুন : চিন সীমান্তে গ্রাম খালি করার খবর ভুয়ো, জানাল ভারতীয় সেনা
কীভাবে তথ্য সংগ্রহ করছে এই চিনা সংস্থা ?
তথ্যসংগ্রহের প্রধান উৎস হল বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও সোশাল নেটওয়ার্ক । পাশাপাশি বিভিন্ন গবেষণাপত্র ও প্রতিবেদন থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে । সংস্থাটির একটি নিজস্ব মনিটরিং ম্যাপও রয়েছে । প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শুধু ভারতই নয়, অ্যামেরিকা, ব্রিটেন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর মতো দেশগুলির উপরেও নজর রাখছে ওই সংস্থা ।
দিল্লিতে চিনের দূতাবাসের এক আধিকারিকে এ-বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "লুকিয়ে বা স্থানীয় আইনকে অগ্রাহ্য করে চিনের সরকার কোনও সংস্থা বা ব্যক্তির থেকে দেশের বাইরের কোনও তথ্য নেয় না ।" তবে শেনহুয়ার ওই সংস্থার থেকে চিনের সরকার তথ্য সংগ্রহ করে কি না সেবিষয়ে সরাসরি কোনও উত্তর করেননি তিনি ।