ETV Bharat / briefs

বেহাল নিকাশি , ক্ষোভে ফুঁসছেন বহরমপুর পৌর এলাকার বাসিন্দারা

বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা । বারবার অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি । ক্ষোভে ফুঁসছেন বহরমপুর পৌরসভার বাসিন্দারা ।

MSD
MSD
author img

By

Published : Jun 22, 2020, 9:45 AM IST

Updated : Jun 24, 2020, 6:11 PM IST

বহরমপুর, 22 জুন : বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা । বারবার অভিযোগ জানিয়েও হয়নি সুরাহা । ফলে, ক্ষোভে ফুঁসছেন বহরমপুর পৌরসভার বাসিন্দারা । ড্রেনের জল ঢুকেছে বাড়িতে । আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার ।


কার্যত নোংরা আবর্জনায় মজে গিয়েছে বড় পাঁচটি নিকাশি নালাই । বর্ষার আগে সেগুলি সংস্কার না করার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন শহরের বাসিন্দারা । সামান্য বৃষ্টিতেই বহু জায়গায় জমছে হাঁটু জল । রাস্তার জল, ড্রেনের জল মিশে যাচ্ছে । অনেকের বাড়িতেও জল ঢুকছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা । তাঁদের অভিযোগ, ভোটের সময় প্রার্থীদের দেখা যায় । প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরতি করেন । তারপর আর কারও দেখা মেলে না । পরিস্থিতি খারাপ জেনেও নীরব প্রশাসনের কর্তারা ।

বহরমপুর পৌর কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, লকডাউনের জেরে থমকে রয়েছে নিকাশি নালার কাজ । যদিও বাসিন্দাদের অভিযোগ মেনে নিয়ে পৌরসভার প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “নিকাশি নালা সংস্কারের জন্য 'ডিজ়াইনিং হুইল অপারেটিং সিস্টেম' প্রকল্পে প্রথম ধাপে 120 কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে । ওয়ার্ক অর্ডারও হাতে এসেছে । লকডাউনের জেরে কাজ থমকে আছে । সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের মধ্যেই কাজ শুরু হয়ে যাবে । দ্বিতীয় ধাপে নিকাশি নালা সংস্কারে আরও 150 কোটি টাকার কাজ হবে । আমরুদ প্রকল্পের আওতায় যে যে শহরগুলি রয়েছে সেই সেই শহরের নিকাশি ব্যবস্থা হবে অত্যাধুনিক মানের । বহরমপুর পৌরসভা আমরুদ প্রকল্পের আওতায় পড়ছে ।”


1867 সালে তৈরি 28 ওয়ার্ডের বহরমপুর পৌরসভা বর্তমানে 'বি' গ্রেডের । ব্রিটিশ আমলে গোড়াপত্তন হলেও শহর কার্যত অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছিল । ভাগীরথীর তীরে অবস্থিত শহরের শুরুতে নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল ছিল না । শহরের পরিধি যত বিস্তার হয়েছে, জনঘনত্ব বেড়েছে । ততই বেহাল হতে শুরু করেছে এই শহরের নিকাশি ব্যবস্থা । দীর্ঘদিন পৌরসভার দখলদারি নিজের হেপাজতে রেখে শহরকে শাসন করেছেন অধীর চৌধুরি । এমনকী পরপর তিনবার বিরোধীশূন্য পৌরসভা গঠন করে নজির স্থাপন করেছিলেন তিনি । কিন্তু তখন শহর সাজানো শুরু হলেও নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে পৌরসভা মাথা ঘামায়নি বলে শহরের মানুষের অভিযোগ । আজ সেই নিকাশি ব্যবস্থা পৌর নাগরিকদের দুর্ভোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

আগে শহরের সমস্ত জল ভাগীরথী নদীতে এসে পড়ত । পরে গোবর নালা, বড় মুড়ি, উসমান খালি, লক্ষ্মীজলা, এন ডি কার্ড নালা খনন করার পর সেগুলিই হয়ে ওঠে শহরের প্রধান পাঁচটি নিকাশি নালা । জল গিয়ে পড়ে চালতিয়া বিল , কোনটা বিষ্ণুপুর কালীবাড়ি বিলে । বর্তমানে দুইটি বিলেই ব্যাপক হারে মাছ চাষ হয় । মাছ চাষিরা শহরের নিকাশি জলকে আর বিলে পড়তে দেন না । এইদিকে সংস্কারের অভাবে সবকটি নালাই মজে গিয়েছে । প্লাস্টিক, পলিথিন, জলের বোতল জলের গতিকেই আটকে দিয়েছে জায়গায় জায়গায় । এর ফলে সুতির মাঠ, খাগড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা এখন কার্যত বর্ষার সময় জলের তলায় চলে যায় । নোংরা আবর্জনাময় জল পেরিয়ে বাসিন্দাদের যাতায়াত করতে হয় । একদিকে চরম দুর্গন্ধ, পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে । দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়ার মতো রোগের প্রকোপ ।

শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, পৌরসভা এলাকায় নয়, তাঁরা কার্যত বাস করছেন নরকে । অনেকে অতিষ্ঠ হয়ে বাড়ি বিক্রি করার পরিকল্পনা নিয়েছেন । এই অবস্থা আজ নয়, দীর্ঘদিনের । একদিকে করোনার আতঙ্ক । এখন নতুন করে আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করেছে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার ।

পূজা হাজরা, সঞ্চারি রায়, গৌতম ঘোষ, নিয়তি রায় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বুলু সাহা সহ অন্যান্যদের অভিযোগ, “ভোটের সময় প্রার্থীদের দেখা যায় । ভোটের পর আর তাঁদের দেখা যায় না । জানি না কবে নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে ।”

বহরমপুর পৌরসভাকে পৌরনিগম করার দাবি নিয়ে এক সময় যাঁরা সুর চড়িয়েছিলেন, পৌরসভার বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা দেখে আজ তাঁরাও পিছু হটেছেন । কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেই আশাতেই দিন গুনছেন শহরের কয়েক লাখ মানুষ । তবে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের মধ্যেই নিকাশি ব্যবস্থার কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে পৌরসভা ।

বহরমপুর, 22 জুন : বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা । বারবার অভিযোগ জানিয়েও হয়নি সুরাহা । ফলে, ক্ষোভে ফুঁসছেন বহরমপুর পৌরসভার বাসিন্দারা । ড্রেনের জল ঢুকেছে বাড়িতে । আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার ।


কার্যত নোংরা আবর্জনায় মজে গিয়েছে বড় পাঁচটি নিকাশি নালাই । বর্ষার আগে সেগুলি সংস্কার না করার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন শহরের বাসিন্দারা । সামান্য বৃষ্টিতেই বহু জায়গায় জমছে হাঁটু জল । রাস্তার জল, ড্রেনের জল মিশে যাচ্ছে । অনেকের বাড়িতেও জল ঢুকছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা । তাঁদের অভিযোগ, ভোটের সময় প্রার্থীদের দেখা যায় । প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরতি করেন । তারপর আর কারও দেখা মেলে না । পরিস্থিতি খারাপ জেনেও নীরব প্রশাসনের কর্তারা ।

বহরমপুর পৌর কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, লকডাউনের জেরে থমকে রয়েছে নিকাশি নালার কাজ । যদিও বাসিন্দাদের অভিযোগ মেনে নিয়ে পৌরসভার প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “নিকাশি নালা সংস্কারের জন্য 'ডিজ়াইনিং হুইল অপারেটিং সিস্টেম' প্রকল্পে প্রথম ধাপে 120 কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে । ওয়ার্ক অর্ডারও হাতে এসেছে । লকডাউনের জেরে কাজ থমকে আছে । সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের মধ্যেই কাজ শুরু হয়ে যাবে । দ্বিতীয় ধাপে নিকাশি নালা সংস্কারে আরও 150 কোটি টাকার কাজ হবে । আমরুদ প্রকল্পের আওতায় যে যে শহরগুলি রয়েছে সেই সেই শহরের নিকাশি ব্যবস্থা হবে অত্যাধুনিক মানের । বহরমপুর পৌরসভা আমরুদ প্রকল্পের আওতায় পড়ছে ।”


1867 সালে তৈরি 28 ওয়ার্ডের বহরমপুর পৌরসভা বর্তমানে 'বি' গ্রেডের । ব্রিটিশ আমলে গোড়াপত্তন হলেও শহর কার্যত অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছিল । ভাগীরথীর তীরে অবস্থিত শহরের শুরুতে নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল ছিল না । শহরের পরিধি যত বিস্তার হয়েছে, জনঘনত্ব বেড়েছে । ততই বেহাল হতে শুরু করেছে এই শহরের নিকাশি ব্যবস্থা । দীর্ঘদিন পৌরসভার দখলদারি নিজের হেপাজতে রেখে শহরকে শাসন করেছেন অধীর চৌধুরি । এমনকী পরপর তিনবার বিরোধীশূন্য পৌরসভা গঠন করে নজির স্থাপন করেছিলেন তিনি । কিন্তু তখন শহর সাজানো শুরু হলেও নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে পৌরসভা মাথা ঘামায়নি বলে শহরের মানুষের অভিযোগ । আজ সেই নিকাশি ব্যবস্থা পৌর নাগরিকদের দুর্ভোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

আগে শহরের সমস্ত জল ভাগীরথী নদীতে এসে পড়ত । পরে গোবর নালা, বড় মুড়ি, উসমান খালি, লক্ষ্মীজলা, এন ডি কার্ড নালা খনন করার পর সেগুলিই হয়ে ওঠে শহরের প্রধান পাঁচটি নিকাশি নালা । জল গিয়ে পড়ে চালতিয়া বিল , কোনটা বিষ্ণুপুর কালীবাড়ি বিলে । বর্তমানে দুইটি বিলেই ব্যাপক হারে মাছ চাষ হয় । মাছ চাষিরা শহরের নিকাশি জলকে আর বিলে পড়তে দেন না । এইদিকে সংস্কারের অভাবে সবকটি নালাই মজে গিয়েছে । প্লাস্টিক, পলিথিন, জলের বোতল জলের গতিকেই আটকে দিয়েছে জায়গায় জায়গায় । এর ফলে সুতির মাঠ, খাগড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা এখন কার্যত বর্ষার সময় জলের তলায় চলে যায় । নোংরা আবর্জনাময় জল পেরিয়ে বাসিন্দাদের যাতায়াত করতে হয় । একদিকে চরম দুর্গন্ধ, পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে । দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়ার মতো রোগের প্রকোপ ।

শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, পৌরসভা এলাকায় নয়, তাঁরা কার্যত বাস করছেন নরকে । অনেকে অতিষ্ঠ হয়ে বাড়ি বিক্রি করার পরিকল্পনা নিয়েছেন । এই অবস্থা আজ নয়, দীর্ঘদিনের । একদিকে করোনার আতঙ্ক । এখন নতুন করে আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করেছে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার ।

পূজা হাজরা, সঞ্চারি রায়, গৌতম ঘোষ, নিয়তি রায় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বুলু সাহা সহ অন্যান্যদের অভিযোগ, “ভোটের সময় প্রার্থীদের দেখা যায় । ভোটের পর আর তাঁদের দেখা যায় না । জানি না কবে নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে ।”

বহরমপুর পৌরসভাকে পৌরনিগম করার দাবি নিয়ে এক সময় যাঁরা সুর চড়িয়েছিলেন, পৌরসভার বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা দেখে আজ তাঁরাও পিছু হটেছেন । কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেই আশাতেই দিন গুনছেন শহরের কয়েক লাখ মানুষ । তবে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের মধ্যেই নিকাশি ব্যবস্থার কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে পৌরসভা ।

Last Updated : Jun 24, 2020, 6:11 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.