আলিপুরদুয়ার, 8 এপ্রিল : ঘড়িতে সকাল দশটা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফালাকাটার সভাস্থানে তখনও কেউ আসেনি। মাঠ পুরো ফাঁকা। নিরাপত্তা বাহিনী ঢিমেতালে সবেমাত্র কাজ শুরু করেছে। সেভাবে দেখা যাচ্ছে না দলের কর্মী-সমর্থকদেরও। কিন্তু কোলে 2 বছরের শিশু নিয়ে মাঠে হাজির বছর তিরিশের এক যুবতি। কারণ? তিনি একবারটি দেখা করতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। জানাবেন সাহায্যের আর্তি। একটু সাহায্যে পেলেই বেঁচে যাবে পরিবার। সেই আশায় কোলে বাচ্চা নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন ফালাকাটার শিশাগোড়ের বাসিন্দা মালঞ্চ বিশ্বাস।
সময় গড়িয়েছে। ধীরে ধীরে মাঠ ভরতে শুরু হয়েছে। নেতাদের তৎপরতা তুঙ্গে। কারণ আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চে উপস্থিত রাজীব ব্যানার্জি, অরূপ বিশ্বাস। অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে নিরাপত্তা বাহিনীও। মহিলাদের বসার নির্দিষ্ট স্থানে ক্রমশ বাড়ছে ভিড়। ধাক্কাধাক্কিও শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু, তখনও কোলে শিশু নিয়ে বাঁশের ব্যারিকেড ধরে একেবারে সামনের দাঁড়ানোর জায়গাটা আগলে রেখেছেন মালঞ্চ। ইতিমধ্যেই মাইকে ঘোষনণা শুরু, "আর কিছুক্ষণের মধ্যেই গরিবের নেত্রী, গরিবের বন্ধু হেলিকপ্টার করে সভাস্থানে প্রবেশ করবেন।" শব্দগুলো দিদির সাথে দেখা করার ইচ্ছেটাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল মালঞ্চর। অবশেষে সভাস্থানে হেলিকপ্টার করে এলেন দিদি। সোজা উঠে গেলেন মঞ্চে।
এবার শুরু হল ভাষণ। মাঠে নিরাপত্তার কড়া বেষ্টনী। কয়েক হাজার সমর্থকদের সামনে মোদিকে বিঁধছেন মমতা। একদিকে চড়া মাইকের শব্দ অন্যদিকে সমর্থকদের উল্লাসে চাপা পড়ে যাচ্ছিল দিদির সাথে দেখা করার মালঞ্চের চেষ্টা। ধৈর্যের বাধ ক্রমশ ভাঙ্গছিল তাঁর। করতালির জোরে অনেকটা অসহায়ও বোধ করছিলেন তিনি। মালঞ্চর সেই কান্নার স্বর শুনতে পারছিল কেবল কোলের শিশুটিই। তখন গাল বেয়ে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছিল চোখের জল।
মালঞ্চের কান্নার মৃদু শব্দ কানে পৌঁছায় সংবাদমাধ্যমের। ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা। মঞ্চে ভাষণ দিতে দিতে দিদির নজর পড়ে সামনের জটলায়। দিদি মাইকে ধমক দিলেন। বললেন, "অত ছবি তোলার কী আছে?" মালঞ্চ ওই ভিড়ের মধ্যে থেকেই হাত নেড়ে দিদিকে বলতে চেষ্টা করলেন, দিদি আমার কিছু কথা আছে। সে কথা যদিও পৌঁছাল না দিদির কানে। নিরাপত্তা বাহিনীর রক্তচক্ষু ততক্ষণে দমিয়ে দিয়েছে মালঞ্চের কান্না।
কেন তিনি দিদির সাথে দেখা করতে হাজির হয়েছিলেন? মালঞ্চ জানান, বছর খানেক আগে ময়নাগুড়িতে সেতুর কাজ করতে গিয়ে এক দুর্ঘটনায় তাঁর স্বামী কৃষ্ণ বিশ্বাসকে দুটি পা হারাতে হয়। মালঞ্চের দুই সন্তান। বড় ছেলে বছর সাতেকের। ছোটো ছেলে মালঞ্চের কোলেই। সংসার চালাতে এখন মালঞ্চ অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। স্বামীর চিকিৎসা বন্ধ। সংসার টানতে মালঞ্চ অন্যের বাড়ি কাজে গেলে দুই বাচ্চা বাড়িতে কার্যত অনাথ। তাই দিদির কাছে সাহায্য চাইতে এসেছিলেন মালঞ্চ। হয়নি আশাপূরণ। সংবাদমাধ্যমের তৎপরতায় দিদি চলে যাবার পর মন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জি মালঞ্চকে ডেকে কথা বলেন। দিয়েছেন সাহায্যের আশ্বাসও। আর এতেই কিছুটা আশার আলো দেখছেন মালঞ্চ।