ETV Bharat / briefs

ধ্বংসের মুখে বিদ্যাসাগরের স্মৃতি বিজড়িত চাঁদনি মহল

author img

By

Published : May 15, 2019, 11:38 PM IST

Updated : May 17, 2019, 7:02 PM IST

মেমারি-তারকেশ্বর রোড ধরে যাওয়ার পথে ডানদিকে পড়বে একটি বিশাল জমিদার বাড়ি । প্রিয় বন্ধু জমিদার সারদাপ্রসাদ সিংহ রায়ের এই বাড়িতে প্রায়ই আসতেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর । এই বাড়ির চাঁদনি মহলে ছড়িয়ে রয়েছে বিদ্যাসাগরের স্মৃতি । সেই মহল এখন ধ্বংসের মুখে ।

সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের মুখে বিদ্যাসাগরের প্রিয় বন্ধুর বাড়ি

জামালপুর, 17 মে : চুন-সুরকির পলেস্তারা বহুকাল আগেই খসে পড়েছে । ভেঙে পড়া ছাদ আর দাঁত বের করা ইটের দেওয়ালের দখল নিয়েছে বট-অশ্বত্থেরা । পুকুরঘাটের দিকে যাওয়ার রাস্তা বলতে এখন আর কিছু নেই । জঙ্গলে ঢেকে গিয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন ভবনের ইতিহাস বিজড়িত মহল ।

মেমারি-তারকেশ্বর রোড ধরে যাওয়ার সময় পড়বে চকদিঘি মোড় । সেখান থেকে কিছুটা ডানদিকে গেলেই চকদিঘি জমিদার বাড়ি । এই বাড়ির চাঁদনি মহলে দিনের পর দিন কাটিয়েছেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর । প্রিয় বন্ধু জমিদার সারদাপ্রসাদ সিংহ রায়ের এই বাড়িতে প্রায়ই আসতেন তিনি । সিংহ রায় পরিবারের সমস্ত আচার-অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন । শুধু তাই নয়, গ্রামে শিক্ষার আলো পৌঁছাতে তৈরি করেছিলেন চকদিঘি সারদাপ্রসাদ ইন্সস্টিটিউট ।

চাঁদনি মহলে বিদ্যাসাগরের জন্য একটি আলাদা ঘরও ছিল । সেখানে ছিল আরামকেদারাও । বাড়ির তিনদিক পুকুরে ঘেরা । একটি পুকুরে বাড়ির পুরুষরা স্নান করতেন । অপরটি ছিল মহিলাদের জন্য । কিন্তু, সেই পুকুর, মহল, ঘাট সবই ধ্বংসের মুখে । চাঁদনি মহলে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে বহুকালের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের সুস্পষ্ট ছবি । দালানের বেশিরভাগ ছাদই ভেঙে পড়েছে । ইটের দেওয়াল আর মোটা মোটা থামগুলিকে আষ্টেপিষ্টে বেঁধে রেখেছে বট-অশ্বত্থেরা । জংলি গুল্মের দখলে চলে গেছে মহলের বারান্দা থেকে বৈঠকখানা ।

insert
এই বাড়ির চাঁদনি মহলে বিদ্যাসাগর থাকতেন

শুধু ইতিহাস নয়, বাংলা সিনেমার একাধিক ফ্রেমে ধরা পড়েছে এই বাড়ির নানা মহল । সত্যজিৎ রায়ের ঘরে-বাইরে ছাড়াও পাঁচের দশকে নির্মিত "বিদ্যাসাগর" সিনেমার শুটিং হয়েছে এই বাড়িতেই । সিনেমার সংলাপেও ছিল সিংহ রায় পরিবারের কথা । সিনেমায় দেখা গেছে, বিদ্যাসাগর রাত করে বাড়ি ফিরছেন । তাঁর মা তাঁকে জিজ্ঞাসা করছেন যে, তিনি কেন রাত করে ফিরেছেন । তার উত্তরে বিদ্যাসাগর বলেছিলেন, আমার বন্ধু সারদাপ্রসাদ সিংহ রায় একটি স্কুল তৈরি করেছে । ওই স্কুলের উদ্বোধন করে বাড়ি ফিরতে দেরি হয়েছে ।

সারদাপ্রসাদ সিংহ রায় প্রয়াত হওয়ার পর বিদ্যাসাগর তাঁর "গোল্ডেন বুক অফ বিদ্যাসাগর" বইতে লিখেছিলেন, "আমার অভিন্ন হৃদয় বন্ধু সারদাপ্রসাদ সিংহ রায় আজ চলে গেলেন ।"

দেখুন ভিডিয়ো

সিংহ রায় পরিবারের বর্তমান প্রজন্মই বাড়িটির দেখাশোনা করেন । কিন্তু, এই বিশাল ভবনের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না । ফলে তিলে তিলে মুছে যাচ্ছে বহুকালে ইতিহাস, ঐতিহ্য । জমিদার বাড়ির এস্টেট সুশান্ত দত্তের কথায় ঝড়ে পড়ল আক্ষেপ । তাঁর কথায়, যদি সরকার এগিয়ে আসত, দায়িত্ব নিত , তাহলে হয়তো এই দিন দেখতে হত না ।

রাজ্যজুড়ে বিদ্যাসাগর মশাইের স্মৃতিবিজড়িত চিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে । রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তার বেশিরভাগই হারিয়ে যাচ্ছে । মুছে যাচ্ছে তার একাধিক স্মৃতি । অনেকে বলছেন, সরকারের উচিত দায়িত্ব নিয়ে ইতিহাস আগলানোর । না হলে হয়তো অচিরেই হারিয়ে যাবে বাংলার গৌরবময় অধ্যায় ।

জামালপুর, 17 মে : চুন-সুরকির পলেস্তারা বহুকাল আগেই খসে পড়েছে । ভেঙে পড়া ছাদ আর দাঁত বের করা ইটের দেওয়ালের দখল নিয়েছে বট-অশ্বত্থেরা । পুকুরঘাটের দিকে যাওয়ার রাস্তা বলতে এখন আর কিছু নেই । জঙ্গলে ঢেকে গিয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন ভবনের ইতিহাস বিজড়িত মহল ।

মেমারি-তারকেশ্বর রোড ধরে যাওয়ার সময় পড়বে চকদিঘি মোড় । সেখান থেকে কিছুটা ডানদিকে গেলেই চকদিঘি জমিদার বাড়ি । এই বাড়ির চাঁদনি মহলে দিনের পর দিন কাটিয়েছেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর । প্রিয় বন্ধু জমিদার সারদাপ্রসাদ সিংহ রায়ের এই বাড়িতে প্রায়ই আসতেন তিনি । সিংহ রায় পরিবারের সমস্ত আচার-অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন । শুধু তাই নয়, গ্রামে শিক্ষার আলো পৌঁছাতে তৈরি করেছিলেন চকদিঘি সারদাপ্রসাদ ইন্সস্টিটিউট ।

চাঁদনি মহলে বিদ্যাসাগরের জন্য একটি আলাদা ঘরও ছিল । সেখানে ছিল আরামকেদারাও । বাড়ির তিনদিক পুকুরে ঘেরা । একটি পুকুরে বাড়ির পুরুষরা স্নান করতেন । অপরটি ছিল মহিলাদের জন্য । কিন্তু, সেই পুকুর, মহল, ঘাট সবই ধ্বংসের মুখে । চাঁদনি মহলে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে বহুকালের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের সুস্পষ্ট ছবি । দালানের বেশিরভাগ ছাদই ভেঙে পড়েছে । ইটের দেওয়াল আর মোটা মোটা থামগুলিকে আষ্টেপিষ্টে বেঁধে রেখেছে বট-অশ্বত্থেরা । জংলি গুল্মের দখলে চলে গেছে মহলের বারান্দা থেকে বৈঠকখানা ।

insert
এই বাড়ির চাঁদনি মহলে বিদ্যাসাগর থাকতেন

শুধু ইতিহাস নয়, বাংলা সিনেমার একাধিক ফ্রেমে ধরা পড়েছে এই বাড়ির নানা মহল । সত্যজিৎ রায়ের ঘরে-বাইরে ছাড়াও পাঁচের দশকে নির্মিত "বিদ্যাসাগর" সিনেমার শুটিং হয়েছে এই বাড়িতেই । সিনেমার সংলাপেও ছিল সিংহ রায় পরিবারের কথা । সিনেমায় দেখা গেছে, বিদ্যাসাগর রাত করে বাড়ি ফিরছেন । তাঁর মা তাঁকে জিজ্ঞাসা করছেন যে, তিনি কেন রাত করে ফিরেছেন । তার উত্তরে বিদ্যাসাগর বলেছিলেন, আমার বন্ধু সারদাপ্রসাদ সিংহ রায় একটি স্কুল তৈরি করেছে । ওই স্কুলের উদ্বোধন করে বাড়ি ফিরতে দেরি হয়েছে ।

সারদাপ্রসাদ সিংহ রায় প্রয়াত হওয়ার পর বিদ্যাসাগর তাঁর "গোল্ডেন বুক অফ বিদ্যাসাগর" বইতে লিখেছিলেন, "আমার অভিন্ন হৃদয় বন্ধু সারদাপ্রসাদ সিংহ রায় আজ চলে গেলেন ।"

দেখুন ভিডিয়ো

সিংহ রায় পরিবারের বর্তমান প্রজন্মই বাড়িটির দেখাশোনা করেন । কিন্তু, এই বিশাল ভবনের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না । ফলে তিলে তিলে মুছে যাচ্ছে বহুকালে ইতিহাস, ঐতিহ্য । জমিদার বাড়ির এস্টেট সুশান্ত দত্তের কথায় ঝড়ে পড়ল আক্ষেপ । তাঁর কথায়, যদি সরকার এগিয়ে আসত, দায়িত্ব নিত , তাহলে হয়তো এই দিন দেখতে হত না ।

রাজ্যজুড়ে বিদ্যাসাগর মশাইের স্মৃতিবিজড়িত চিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে । রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তার বেশিরভাগই হারিয়ে যাচ্ছে । মুছে যাচ্ছে তার একাধিক স্মৃতি । অনেকে বলছেন, সরকারের উচিত দায়িত্ব নিয়ে ইতিহাস আগলানোর । না হলে হয়তো অচিরেই হারিয়ে যাবে বাংলার গৌরবময় অধ্যায় ।

Intro:বিদ্যাসাগরের স্মৃতি বিজড়িত চকদিঘির জমিদার বাড়ির চাঁদনি মহল আজ ধ্বংসের দিকে, উদাসীন সরকার

পুলক যশ, জামালপুর

জামালপুরের চকদিঘী জমিদার বাড়িতে দিনের পর দিন রাত কাটিয়েছেন পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্মৃতি বিজড়িত চকদিঘী জমিদার বাড়ীর চাঁদনী মহলে রাতে থাকতেন। চাঁদনী বাড়ির তিন দিকে ছিল পুকুর দিয়ে ঘেরা। একটি পুকুরে বাড়ি ছেলেরা স্নান করত, অন্য পুকুরে ছিল মেয়েদের জন্য। অথচ সেই বাড়ি সংরক্ষণের জন্য সরকারি ভাবে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর বিধানসভার অবস্থিত এই জমিদার বাড়ি। মেমারি তারকেশ্বর রোড ধরে যাওয়ার সময় চকদিঘী মোড়ে ডান দিকে পরবে এই জমিদার বাড়ি। গাছ-গাছালি এবং পুকুর দিয়ে ঘেরা এই জমিদার বাড়ি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ জন আসেন। চকদিঘী জমিদার বাড়ির সিংহ রায় পরিবারের জমিদার সারদা প্রসাদ সিংহ রায়ের অভিন্নহৃদয় বন্ধু ছিলেন পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। পারিবারিক সূত্রে তাদের বন্ধুত্ব বাড়তে থাকায় সিংহ রায় পরিবারের দুর্গাপুজো সহ অন্যান্য আচার-অনুষ্ঠানে বিদ্যাসাগর উপস্থিত থাকতেন। এমনকি ওই পরিবারের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার দেখভাল তিনি করেছেন। কিন্তু জমিদার বাড়ির সেই চাঁদনী মহল আজ ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে। জমিদার বংশ জমিদারদের বংশধর প্রসেনজিৎ সিংহ রায়, অম্বরিশ সিংহরায় নিজেরাই সেই জমিদার বাড়ির দেখভাল করেন। কিন্তু সরকারি তরফে এখনো পর্যন্ত সেই জমিদার বাড়ি সংরক্ষণের জন্য কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি সরকার এবং পাবলিকের যৌথ উদ্যোগে সংরক্ষণের জন্য কোন চিন্তা ভাবনা করে নেই রাজ্য সরকার। যা নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন বর্তমান জমিদার বাড়ির স্টেট ম্যানেজার সুশান্ত দত্ত। অথচ এই জমিদার বাড়ি সম্পর্কে পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তার বইতে অনেক রকম গল্প লিখে গেছেন। 5 এর দশকে বিদ্যাসাগর নামে একটি বাংলা সিনেমায় দেখা গেছে বিদ্যাসাগর রাত করে বাড়ি ফিরছেন। তখন তার মা তাকে জিজ্ঞাসা করেছেন যে তিনি কেন রাত করে বাড়ি ফিরেছেন। তার উত্তরে বিদ্যাসাগর বলেছিলেন আমার বন্ধু সারদা প্রসাদ সিংহ রায় একটি স্কুল তৈরি করেছেন। ওই স্কুলের উদ্বোধন করে ফিরতে গিয়ে তার রাত হয়ে যায়। পরবর্তীকালে সারদা প্রসাদ সিংহ রায় যখন প্রয়াত হন তখন বিদ্যাসাগরের গোল্ডেন বুক অফ বিদ্যাসাগর বইতে তিনি লিখেছেন আমার অভিন্নহৃদয় বন্ধু ছাড়া তো প্রসাদ সিংহ রায় আজ চলে গেলেন।Body:বিদ্যাসাগর Conclusion:চাঁদনি বাড়ি
Last Updated : May 17, 2019, 7:02 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.