কলকাতা, 17 সেপ্টেম্বর : আজ আপামর বাঙালির ঘুম ভেঙেছে কাকভোরে । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় মহিষাসুরমর্দিনী শুনে শুরু হয়েছে দিন । কোরোনা আবহে যখন সবকিছুতে নিউ নর্মাল, তখন এই একটা বিষয়ে কিন্তু কোনও নড়নচড়ন নেই । মহালয়াতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রই "নর্মাল" । বাঙালি তৈরি হচ্ছে মহামায়াকে ধরাধামে স্বাগত জানাতে ।
চলছে শেষমুহূর্তের প্রস্তুতি । বিধি মেনে আজকের দিনেই মায়ের চক্ষুদান করা হয় । কিন্তু চারিদিকে যে কোরোনা । ভ্যাকসিন কবে আসবে... কেউ জানে না । কোরোনাকে হারাতে তাই এবার আপামর বাঙালি মহামায়া দুর্গার শরণাপন্ন । মায়ের চক্ষুদানেও আজ সেই ছবি ধরা পড়ল । টালাপার্ক প্রত্যয় দুর্গাপূজা কমিটি । এবছর আর মায়ের প্রতিমায় নয়, বরং চক্ষুদান করা হল স্যানিটাইজ়ার মেশিনের গাড়িতে ।
স্যানিটাইজ়ার মেশিনটাই যেন হয়ে উঠেছে শক্তিরূপিনী মহামায়ার প্রতীক । কোরোনাসুরকে বধ করতে তাই স্যানিটাইজ়ার মেশিনের গাড়িতেই মায়ের চক্ষুদান করল টালাপার্ক প্রত্যয় দুর্গাপূজা কমিটি ।
গোটা বিশ্ব এখন জর্জরিত কোরোনার সংক্রমণে । জর্জরিত দেশ । জর্জরিত বাংলাও । এই পরিস্থিতিতে বাঙালির সাধের দুর্গা পুজো নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে । কিন্তু এই অস্থির অনিশ্চিত পরিবেশের মধ্যেও দুর্গা পুজো কমিটিগুলি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সামাজিক দূরত্ব ও কোরোনা প্রতিরোধক সবরকম বিধিনিষেধ মেনে এবছর পুজো করা হবে । তাই কোরোনা সংক্রমনের সঙ্গে বিরুদ্ধে লড়াই করতে নেমে পড়েছে টালা পার্ক প্রত্যয় দুর্গাপুজো কমিটি।
আরও পড়ুন : আটের দশকও সাক্ষী, কেন মহালয়ার 1 মাস পর দুর্গাপুজো ?
এবছর টালা পার্ক প্রত্যয়ের পুজোর ভাবনা লোকহিত । বর্তমানে যে প্যানডেমিক চলছে তার থেকে সভ্যতাকে রক্ষা করতে এই ভাবনা এবছরের পুজোর । পুজো কমিটির প্রেসিডেন্ট তরুণ সাহা জানিয়েছেন, এই কঠিন পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষকে সাহায্য করাই আমাদের লক্ষ্য । তাই এ বছরে আমাদের পুজোর ভাবনা লোকহিত । বর্তমানে যে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে মানবজাতি যাচ্ছে, তাতে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এটাই সময় বলে মনে করছে টালা পার্ক প্রত্যয় । তাই এই জীবাণু নাশক গাড়িতে মা দুর্গার চক্ষুদান করা হয় । এই জীবাণুনাশক গাড়িটি বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে জীবাণুনাশক স্প্রে করবে ।"
এবছর 95 বছরে পা রাখল টালা পার্ক প্রত্যয় দুর্গাপূজো কমিটি । যে গাড়িটিতে মায়ের চক্ষুদান করা হয়েছে, সেটি বিনামূল্যে বিভিন্ন এলাকায় স্যানিটাইজ়েশনের কাজ করবে । 743 96 18190 । এই নম্বরে ফোন করলেই কোরোনাসুর বধে পৌঁছে যাবে মহামায়ার চক্ষুদান করা স্যানিটাইজ়ার গাড়ি ।
আরও পড়ুন : পান্তা আর ল্যাটা মাছ পোড়া খেয়ে বাপের বাড়ি থেকে বিদায় নেন উমা
পুজো কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা অভিজিৎ বসাক জানিয়েছেন, “যে কোনও বাড়ি, ফ্ল্যাট, আবাসন, দোকান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, রাস্তা যেখানে প্রয়োজন পড়বে সেখানেই এই গাড়িটি পৌঁছে যাবে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে । একটি টোল ফ্রি নম্বর চালু করা হয়েছে । এই নম্বরে ফোন করলেই গাড়িটি পৌঁছে যাবে সংশ্লিষ্ট জায়গায় । ফোন নম্বর হল 7439618190 ।” তিনি আরও জানিয়েছেন, এবছর মণ্ডপ অনেক বেশি খোলা-মেলা তৈরি করা হচ্ছে । যাতে মানুষ রাস্তা থেকেই দাঁড়িয়ে মণ্ডপ প্রতিমা দর্শন করতে পারেন । এছাড়াও মণ্ডপে প্রবেশ করতে হবে বেশ কয়েকটি জীবাণুনাশক স্প্রে টানেলের মধ্যে দিয়ে । মণ্ডপে প্রবেশ করতে গেলে মাস্ক ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক । রাজ্য সরকার যে গাইডলাইন দেবে সেই নির্দেশিকার মেনে এবছর পুজো করা হবে ।
টালা পার্ক প্রত্যয়ের প্রতিমাশিল্পী সুশান্ত পাল । আজ জীবাণুনাশক গাড়িতে তিনিই চক্ষুদান করেন । এইরকম একটি উদ্যোগী অংশগ্রহণ করতে পেরে তিনি খুবই আনন্দিত । এই অভিনব ভাবনার জন্য পুজো উদ্যোক্তাদের সাধুবাদ দিয়েছেন শিল্পী সুশান্ত পাল।