কলকাতা, 21 জানুয়ারি : রাজ্যে সংক্রমণ নিম্নমুখী হলেও জারি রয়েছে করোনা প্রকোপ । সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার । এই অবস্থায় ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বিভিন্নমহলে । 2 বছরের বেশি সময় ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশ স্কুলমুখো না-হওয়ায় তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত অভিভাবকেরা । এই অবস্থায় চিকিৎসকমহলের একটা বড় অংশ মনে করছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি এভাবে বন্ধ রেখে করোনার সংক্রমণ রোখা যাবে না । তাঁদের পরামর্শ, ভেবে দেখা উচিত যাতে স্কুল খুলে দেওয়া যায় ।
একাংশ এই চিকিৎসকদের যুক্তি, এমনিতেই বর্তমান পরিস্থিতিতে ছোটরা বিভিন্ন জায়গায় অভিভাবকদের সঙ্গে ঘুরতে যাচ্ছে । তাতে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকলেও তারা কিন্তু বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকছে না । অথচ সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত হতে পারে এই ভয়ে স্কুল তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রাখা হচ্ছে । স্কুলে না গিয়েও ছাত্রছাত্রীদের আক্রান্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে । এই অবস্থায় ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন, স্কুল বন্ধ রাখার যৌক্তিকতা কী ?
সাধারণত চিকিৎসকেরা স্কুল খোলার ক্ষেত্রে যে যুক্তি দেখাচ্ছেন তা হল- প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ঢেউয়ের ক্ষেত্রেই বড়দের পাশাপাশি আক্রান্ত হয়েছে ছোটরাও । তবে বড়দের তুলনায় ছোটদের আক্রান্ত হওয়ার নজির কম । আক্রান্ত হলেও তাদের অবস্থা মারাত্মক হচ্ছে না । এখানেই শেষ নয়, আইসিএমআর বলছে, বড়দের তুলনায় ছোটদের করোনা সামলানোর ক্ষমতা বেশি । বহু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ছোটরা বেড়াতে যাচ্ছে আবার উৎসবে শামিল হচ্ছে । তাহলে স্কুলে যেতে আপত্তি কোথায় ? প্রশ্ন তুলছেন চিকিৎসকেরা । যেহেতু রাস্তায় বেরোচ্ছে তারা, তখন তাদের সংক্রমণ আটকে রাখা যাচ্ছে না । বড়দের থেকেও আক্রান্ত হচ্ছে ছোটরা ।
মহারাষ্ট্র প্রথম দিন থেকেই সংক্রমণের শীর্ষে । অথচ এই অবস্থাতেও স্কুল খোলার মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে উদ্বব ঠাকরে সরকার । এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারেরও কি স্কুল তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা ভাবা উচিত ? বিশিষ্ট চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলছেন, “প্রথম অবস্থায় আমরা অর্থাৎ চিকিৎসকরাই বলেছিলাম সংক্রমণ থেকে বাঁচতে স্কুল বন্ধ রাখা উচিত । কারণ তখন আমরা জানতাম না সংক্রমণ থেকে কীভাবে বাঁচা যাবে ? কিন্তু এখন আমরা দেখছি সর্তকতা সত্ত্বেও ছোটরা আক্রান্ত হচ্ছে । আবার তারা বাইরেও বেরোচ্ছে । যেহেতু আমরা জানি না, এই সংক্রমণ কতদিন চলবে, এই অবস্থায় সরকারের উচিত প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া । প্রায় দু'বছর হতে চলল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাচ্চারা না যাওয়ার ফলে স্কুল জীবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা সময় তাদের ফসকে যাচ্ছে । স্কুলেই বাচ্চাদের মানসিক গঠন ও শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি ঘটে । তাই এতগুলো দিন স্কুলের বাইরে থাকা শিশুমনের জন্য খুবই ক্ষতিকর।”
চিকিৎসক গোপালকৃষ্ণ ঢালী বলেন, “এখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা উচিত নাকি উচিত নয়, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার । বিজ্ঞানের দিক থেকে আমি বলব, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের জীবন যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করা দরকার । মহারাষ্ট্রে সংক্রমণ থাকা সত্ত্বেও যখন স্কুল খুলতে পেরেছে তখন আমার মনে হয় এই রাজ্যের সরকারেরও বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখা উচিত ।”
বিশিষ্ট চিকিৎসক সৌমিত্র ঘোষ এখনই সরাসরি স্কুল নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে আসতে নারাজ । তিনি বলেন, “বিশ্বের অনেক দেশ এই মুহূর্তে লকডাউন ছেড়ে সাধারণ জীবনযাপনের দিকে এগোচ্ছে । আমাদের দেশের রাজ্যগুলি কী ভাবছে সেটা জানা জরুরি । স্কুল খোলা থাকুক অথবা বন্ধ থাকুক সংক্রমণকে ছোটদের কাছে পৌঁছনো থেকে আটকানো সম্ভব নয় । স্কুল বন্ধ না রেখে কীভাবে ছোটদের সুরক্ষিত করা যায় সে বিষয় ভাবনা চিন্তা করা যেতে পারে ।”
আরও পড়ুন : Corona Update in Bengal : আরও কমল দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, নিম্নমুখী সংক্রমণের হারও