মালদা, 9 অগস্ট : মেয়ে প্রতিবেশী এক কিশোরের লালসার শিকার হয়ে মাস চারেকের অন্তঃসত্ত্বা । খবরটি চাউর হতেই ধর্ষিতার পরিবারকে থানায় অভিযোগ না জানানোর নিদান দেয় এলাকার মাতব্বররা । তারা জানিয়েছিল, এই ঘটনার মীমাংসা তারাই করে দেবে। কিন্তু দিন পেরিয়ে গেলেও মাতব্বররা কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত প্রায় লুকিয়ে থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন ধর্ষিতার মা । তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে 17 বছরের অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ । কিন্তু তারপরই অন্য খেলা শুরু হয়ে যায় । পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগ প্রত্যাহার করার চাপ আসছে ওই পরিবারের উপর। তৃণমূলের নাম করে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পরিবারের । এদিকে পেট চালাতে ভ্যানচালক বাবাকে বাইরে বেরোতেই হচ্ছে । নিজেদের প্রাণ রক্ষায় ফের থানার দ্বারস্থ হয়েছেন ধর্ষিতার বাবা । বিষয়টি জানতে পেরে আজ বাড়িতে গিয়ে ধর্ষিতার পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক বুলবুল খান । হরিশ্চন্দ্রপুরের এক প্রত্যন্ত গ্রামের এই ঘটনা নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে কথার লড়াইও শুরু হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছিল গত 21 ফেব্রুয়ারি । ধর্ষক কিশোর 16 বছর বয়সী মেয়েটিরই প্রতিবেশী । ওই কিশোরী জানায়, সেদিন ছেলেটির দিদি তাদের বাড়িতে আসে । তাকে নিজেদের বাড়ি ডেকে নিয়ে যায়। প্রতিবেশী হওয়ায় ওই বাড়িতে তার যাতায়াত ছিল । কিছুক্ষণ পর ছেলেটির দিদি তাকে বাড়িতে বসিয়ে রেখে দিদার বাড়ি যায় । সে জানত না, সেই সময় ছেলেটি পাশের ঘরে ছিল। দিদি বেরিয়ে যাওয়ার পরেই ছেলেটি ঘর থেকে বেরিয়ে আসে । তাকে পাশের ঘরে নিয়ে যায় । ছুরি হাতে নিয়ে তাকে শাসায় । সেখানেই সে তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ । সে কাঁদতে কাঁদতে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিলে ছেলেটি তাকে হুমকি দেয়, একথা কাউকে বললে সে তাদের পরিবারের সবাইকে খুন করে দেবে । কেউ তার কিছু করতে পারবে না । ভয়ে সে কাউকে কিছু বলতে পারেনি। কিন্তু ধর্ষণের জেরে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে । তার শরীরের পরিবর্তন দেখে মা তাকে প্রশ্ন করলে সে সব কথা খুলে বলে । মাতব্বরদের কথায় তার মা সাত দিন অপেক্ষা করেন । কিন্তু তারপরও কোনও ব্যবস্থা না হওয়ায় তিনি 1 অগস্ট লুকিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন । সেকথা জানতে পেরে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত । গোপন সূত্রে খবর পেয়ে 8 অগস্ট তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ । জুভেনাইল আদালতের নির্দেশে আপাতত তাকে সরকারি হোমে রাখা হয়েছে ।
আরও পড়ুন, Malda Rape : পড়শির লালসায় অন্তঃসত্ত্বা অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী, থানায় যেতে বাধা মাতব্বরদের !
এদিকে অভিযুক্ত গ্রেফতার হতেই শুরু হয় নতুন খেলা । অভিযোগ প্রত্যাহার না করা হলে ধর্ষিতার বাবাকে খুন করা হবে বলে অহরহ হুমকি আসতে থাকে । ফলে ফের হরিশ্চন্দ্রপুর থানার দ্বারস্থ হন কিশোরীর বাবা । এমন খবর পেয়ে আজ ওই কিশোরীর বাড়িতে যান জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক বুলবুল খান । সঙ্গে ছিলেন দলের অঞ্চল চেয়ারম্যান সঞ্জীব গুপ্তা । কিশোরীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বুলবুল জানান, “শুনেছিলাম, তৃণমূলের কিছু লোকজন নাকি এই পরিবারটিকে হুমকি দিচ্ছে । এই পরিবারের নাবালিকা মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে । গোটা ঘটনাটাই বিজেপির চক্রান্ত । তারা তৃণমূলের নাম করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে । আজ আমি পরিবারটিকে আশ্বস্ত করেছি। এনিয়ে আইসির সঙ্গেও কথা বলব । পরিবারটির অবস্থা খুবই খারাপ । এমন একটি পরিবারে এমন ঘটনা খুব দুঃখজনক। তৃণমূলের জেলাস্তর থেকে শুরু করে অঞ্চল স্তর পর্যন্ত প্রত্যেক কর্মী এই পরিবারটির পাশে থাকবে । এটুকু আশ্বাস আমি দিয়ে যাচ্ছি । আমাদের অনেকের ফোন নম্বর পরিবারটিকে দিয়ে যাচ্ছি । যে কোনও সমস্যায় যে কোনও সময় তাঁরা আমাদের ফোন করতে পারেন ।”
বুলবুলের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিজেপির মণ্ডল সভাপতি রূপেশ আগরওয়াল বলেন, “বিজেপির প্রতিটি কর্মীর একটা সম্মান রয়েছে । তাই এই দলের কেউ কখনও এমন কাজ করবে না। তৃণমূল যদি এই ঘটনায় জড়িত না থাকে, তবে ওই দলের নেতারা ধর্ষিতার বাড়িতে বারবার যাচ্ছেন কেন ? তাঁরা কী বোঝাতে চাইছেন ? কী মগজধোলাই করতে চাইছেন ? নিশ্চয়ই ওই দলেরই লোকজন এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। একুশের ভোটের পর তৃণমূল কী করছে, রাজ্যের মানুষ তা দেখতে পাচ্ছেন ।”
এদিকে কিশোরীর মা আজ বলেন, “স্বামী ভ্যান চালায়। বাড়ি ফিরতে রাত 11টা বেজে যায়। হুমকি দেওয়া হচ্ছে, অভিযোগ প্রত্যাহার না করলে তাকে খুন করা হবে। গ্রামেরই কিছু লোকজন হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু অভিযোগ তুলে নিলে মেয়েটার কী হবে ! ওকে আর কে বিয়ে করবে? তাই অভিযোগ তুলতে পারছি না । এখন ওকে যদি খুন করে দেয়, তবে আমরা খাব কী? বাড়িতে আমাদের সঙ্গে বৃদ্ধা শাশুড়ি আর ছেলেমেয়ে রয়েছে। কী হবে আমাদের? আজ বুলবুল খান এসেছিলেন। তাঁকে সব বলেছি। তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।”