হায়দরাবাদ, 21 জুন : 9 কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে 20 মিনিটে পৌঁছে দিয়েছিলেন অর্ডার ৷ তা দেখে হতবাক হয়েছিলেন গ্রাহক ৷ তারপর ওই গ্রাহকের উদ্যোগে হায়দরাবাদের এক জোম্যাটো কর্মীকে বাইক উপহার দিল নেটিজেনরা । গত সোমবার সন্ধ্যাবেলা রবিন মুকেশ নামে একজন অনলাইনে খাবার অর্ডার করেন জোম্যাটো অ্যাপের মাধ্যমে ৷ তাঁর বাড়ি হায়দরাবাদের কোটি এলাকায় । ডেলিভারি বয় সাইকেল চালিয়ে খাবার পৌঁছে দেন ওই ব্যক্তিকে । ডেলিভারি বয়ের নাম মহম্মদ আকিল ।
হায়দরাবাদে কর্মরত আইটি সেক্টরে কর্মচারী হলেন রবিন মুকেশ । গত সোমবার জোম্যাটো অ্যাপের মাধ্যমে চা অর্ডার করেছিলেন তিনি । রবিন মুকেশ জানান, "আমি বাড়ি থেকে অফিসের কাজ করছিলাম এবং রাত দশটার সময় হায়দরাবাদের লকড়ি-কা-পুল এলাকার একটি হোটেল থেকে চা অর্ডার করি । আমি যখন অর্ডারটি করি তখন আমার কাছে মেসেজ আসে যে মহম্মদ আকিল নামে একজন ডেলিভারি করতে আসবেন মেহদীপত্তনম থেকে ।"
তিনি আরও জানান, অর্ডার করার 20 মিনিটের মধ্যেই ডেলিভারি বয়ের কাছ থেকে ফোন আসে যে অর্ডার নিয়ে কোটির ওই অ্যাপার্টমেন্টে মহম্মদ আকিল চলে এসেছেন । ডেলিভারি বয় তাঁকে অর্ডারটি সংগ্রহ করতে আসতে বলেন । তিনি বলেন, "আমি যখন তাঁর কাছে যাই তখন দেখলাম একটি অল্প বয়সী ছেলে, বৃষ্টিতে ভিজে মাত্র 20 মিনিটের মধ্যে সাইকেল চালিয়ে এত তাড়াতাড়ি কীভাবে চলে এল । তাকে জিজ্ঞাসা করতে সে বলে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সাইকেল চালিয়ে খাবার ডেলিভারি করছে । আমি তখন তাকে বলি যে যদি তোমার কোনও ছবি তুলি অসুবিধা হবে না তো । আকিল তখন সম্মতি জানায় ছবি তোলার জন্য এবং আমি জানতে পারি যে আকিল বিটেকের ছাত্র । আমি পরে আকিলের এই জীবনকথা ও ছবি ফেসবুক পেজে পুরো আপলোড করি । আপলোড করার সঙ্গে সঙ্গেই অনেকেই প্রশংসা ও কমেন্ট আসে এবং বেশ কয়েকজন আকিলকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন । "
আরও পড়ুন.. যোগদিবসে "এক বিশ্ব, এক স্বাস্থ্য" নীতিতে জোর প্রধানমন্ত্রীর
রবীন বলেন, "আমি যখন আকিলকে তার কী কী সাহায্য দরকার জানতে চাই তখন আকিল বলে যে একটি মোটরবাইক পাওয়া গেলে খুবই ভাল হয় । তাই আমি আর দেরি না করে পরদিনই অর্থাৎ মঙ্গলবার রাতে টাকা একত্রিত করার পরিকল্পনা করি ও তা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানাই ৷ এবং আশ্চর্যজনকভাবে পরের দিন সকালে অনেকেই আকিলকে সাহায্য করার জন্য অনুদান দিয়েছে এবং সর্বোপরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক মহিলা বাসিন্দা 30,000 টাকা পাঠিয়েছেন । তার ঠিক 12 ঘণ্টার মধ্যে, আকিলকে সহায়তা করার জন্য অনলাইন তহবিল সংগ্রহের মাধ্যমে 73,000 টাকা সংগ্রহ হয়েছে ।"
তিনি আরও বলেন, "তহবিল সংগ্রহের টাকা অনেকের থেকে আসতে শুরু করার পরে আমি জোর করে তহবিল বন্ধ করে দিই । সংগ্রহের টাকা থেকে একটি টিভিএস এক্সএল মোটরবাইক আকিলের জন্য কিনে দিই । করোনা প্যানডেমিকের জন্য ফেস মাস্ক , স্যানিটাইজার এবং তার জন্য একটি হেলমেট দেওয়া হয় । এই সমস্তকিছু কেনার পরেও 5000 টাকা ছিল যা আকিলের কলেজ ফি বাবদ তার হাতে দেওয়া হয় ।"
আরও পড়ুন...আদালতের সমালোচনার পরও সোমবার থেকে দিল্লিতে খুলছে বার-পার্ক
রবিন গত দু'বছর ধরে সামাজিক কাজে জড়িত এবং শহর জুড়ে বেশ কয়েকটি এনজিওর সাথেও জড়িত । রবিন জানিয়েছেন, ফেসবুকের মাধ্যমে আকিলেক সাহায্য করতে পেরে তিনি খুবই আনন্দিত । সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি খারাপ ব্যবহারের পরিবর্তে ভাল ব্যবহার যা কোনও অভাবী লোকেদের সহায়তা করার কাজে লাগতে পারে ।
যারা বাইকটি পেতে তাঁকে সাহায্য করেছে তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান আকিল ৷ এবং বলেন যে তিনি এই সাহায্য পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত । আরও বলেন, যখনই সম্ভব হবে এগিয়ে আসবেন ও মানুষকে সাহায্য করবেন তিনি ।