নয়াদিল্লি, 23 সেপ্টেম্বর: 'ভারতীয় এজেন্টদের' দ্বারা কানাডার মাটিতে একজন খালিস্তানিপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীকে হত্যার অভিযোগকে ঘিরে ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে ৷ এই পরিস্থিতিতে উভয় দেশের কৃষক ও রাজনীতিবিদদের জন্য কৃষিতে পুনরায় মনোযোগ দেওয়া জরুরি । অবিলম্বে সম্পর্ক ঠিক করতে ব্যর্থ হলে ভারতের খাদ্য অর্থনীতিতে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে ।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই ঘটনার জন্য পার্লামেন্ট এবং মিডিয়ার মাধ্যমে ভারত সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন ৷ যার ফলে ভিসা স্থগিতাদেশ এবং অন্যান্য কূটনৈতিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ভারতের তরফে ৷ এর জেরে শুল্ক ও বাণিজ্য বিধিনিষেধ এবং এমনকি কূটনীতিকদের প্রত্যাহার করার বিষয়ও তীব্র হতে পারে ৷ কিন্তু এটা কীভাবে কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত ?
রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব শুরু হওয়ার পর থেকে সারের দাম বেড়েছে ৷ সম্প্রতি ডি-অ্যামোনিয়াম ফসফেটের (ডিএপি) দাম 25 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এনপিকে (নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাসিয়াম) সারেরও একইভাবে দাম বেড়েছে । এখানে সংযোগ হল, কানাডা বিশ্বের বৃহত্তম পটাশ মজুত করে, যা শিল্প কৃষি ও মিউরিয়েট অফ পটাশ (এমওপি) সার উৎপাদনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ধারণ করে । গ্লোবাল পটাশ রিজার্ভের 30 শতাংশেরও বেশি ও শীর্ষ উৎপাদক হওয়ায় গত বছর কানাডা প্রাথমিক এমওপি সরবরাহকারী ছিল ।
যুদ্ধের কারণে, রাশিয়ান সার সরবরাহ সীমাবদ্ধ ৷ ভারতে পটাশের সীমিত উৎস রয়েছে। চিন ও কানাডা উভয়ই, প্রধান পটাশ উৎপাদক ৷ সম্পর্কের অবনতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কানাডা ভারতের কাছ থেকে এই ক্ষেত্রে ছাড় চাইতে পারে ৷ এর মাধ্যমে তারা লাভ করতে পারে ৷ আবার ভারতে কানাডিয়ান পটাশ রফতানির উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার জন্য চাপ দিতে পারে ।
আরও পড়ুন: 'হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যায় জড়িত ভারত', ট্রুডোর অভিযোগে উদ্বিগ্ন আমেরিকা
এই ধরনের পদক্ষেপ ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা ও ফসলের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে । এই সারের ঝুঁকি স্বীকার করে ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা কানাডাকে নিরবিচ্ছিন্ন পটাশ সরবরাহ নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছেন । যতক্ষণ না ভারত রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে আমদানি বৃদ্ধি করছে, ততক্ষণ আমরা গুরুত্বপূর্ণ কৃষি উপকরণগুলির সম্ভাব্য ঘাটতির সম্মুখীন হতে পারি ৷ যা উল্লেখযোগ্যভাবে রবি মরসুম ও গমের ফসলকে প্রভাবিত করবে । কানাডা ঐতিহাসিকভাবে পটাশের একটি নির্ভরযোগ্য উৎস ।
সার থেকে খাদ্যে সরবরাহ, কানাডা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে মূল্যবান কৃষি পণ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারীর ভূমিকা পালন করেছে ৷ যার মধ্যে রয়েছে মসুর ডাল, তৈলবীজ, ক্যানোলা তেল ও ফিড অয়েল কেক । মুসুর ডালের 95 শতাংশ ভারত কানাডা থেকে রফতানি করে৷ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কানাডা ভারতে মুসুর ডালের প্রধান সরবরাহকারী হিসেবে ডালের দাম স্থিতিশীল করে রেখেছে । ছোলা এবং সাদা ও হলুদ মটরও কানাডা থেকেই সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হয় ৷
ভারতীয় কৃষির চ্যালেঞ্জ বিবেচনা করে বিশেষ করে মসুর ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদনে মন্দার জেরে অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ইতিমধ্যেই চাপে পড়েছে । সামনে অনিশ্চিত ফসলের পরিপ্রেক্ষিতে, ভারতকে অবশ্যই তার প্রোটিন ও তৈলবীজ সরবরাহকে অগ্রাধিকার দিতে হবে । পরিস্থিতি সামলাতে ঘুরপথে কানাডার কূটনীতি ভারত বজায় রাখলে ভালো হবে ৷
আরও পড়ুন: হরদীপ-হত্যায় ঘুরপথে ফের ভারতকে নিশানা করেও একসঙ্গে পথচলার বার্তা ট্রুডোর
কানাডায় রফতানির ক্ষেত্রে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কিত রাষ্ট্রসংঘের কমট্রেড ডাটাবেস অনুসারে, ভারত 2022 সালে প্রায় 4.25 বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেকর্ড রফতানি করেছে। এই রফতানিতে দুই সম্পর্কের সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রভাব পড়তে পারে ৷ তার ফল দুই দেশকেই ভুগতে হবে ৷
সব শেষে বলা যায়, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে ভারত-কানাডার সম্পর্ক একটি ঠান্ডা পর্যায়ে প্রবেশ করতে পারে । যাই হোক, এই অস্থিরতা আমাদের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করতে না দেওয়াই লক্ষ্য হওয়া উচিত । কৃষিকে অবহেলা করা শুধু উভয় সরকারকেই নয়, নিজ নিজ দেশের কৃষক ও ক্রেতাদেরও ক্ষতি করবে ।