জেনেভা, 11 মে: ভারত করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে ৷ প্রতিদিনই সংক্রমণের সংখ্যা তিন থেকে চার লক্ষের মধ্যে থাকছে ৷ এই পরিস্থিতিকে "দুশ্চিন্তাজনক" বলে অভিহিত করলেন হু-র প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন ৷ তিনি ভারত সরকারকে সংক্রমণ ও মৃত্যুর আসল সংখ্যা জানার সঠিক ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন ৷
সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানান অগস্টে ভারতে মৃতের সংখ্যা 10 লক্ষে পৌঁছাতে পারে, ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিকস অ্যান্ড এভালুয়েশন (আইএইচএমই)-র তৈরি মডেল আর সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী এই পরিসংখ্যান দিয়েছে তারা ৷ এমন নয় যে এটা ভবিষ্যদ্বাণী, পরিবর্তন হতেই পারে ৷
স্বামীনাথনের উদ্বেগ
এই মুহূর্তে পরিস্থিতি খুবই দুশ্চিন্তার ৷ ভারত-সহ দক্ষিণপূর্ব অঞ্চলের দেশগুলিতে প্রতিদিন যে সংখ্যক রোগী সংক্রামিত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে, তাতে আমাদের ভীষণ চিন্তা হচ্ছে ৷ আর আমরা এটা বুঝতে পারছি যে এই সংখ্যাটা কমিয়ে বলা হচ্ছে ৷ এমনকি বিশ্বের প্রতিটি দেশই তাদের প্রকৃত সংখ্যা থেকে কমিয়ে জানাচ্ছে ৷ তাই ভারত সরকারের উচিত সঠিক সংখ্যা জানানোর ব্যবস্থা করা ৷
ভারতে পাওয়া কোভিড-19 ভ্যারিয়ান্ট
সোমবার হু জানিয়েছে, গত বছর ভারতে করোনাভাইরাসের প্রথম যে ভ্যারিয়ান্ট শনাক্ত করা হয়েছিল, তা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, তাই সারা বিশ্বের জন্য তা চিন্তার ৷ "আমরা এই ভ্যারিয়ান্টকে বিশ্বের জন্য চিন্তার বলে চিহ্নিত করছি", ঘোষণা করেছেন মারিয়া ভান কেরখোভ, কোভিড-19-এর হু-র টেকনিক্যাল প্রধান ৷
এ বিষয়ে সৌম্যা জানান, বি.1.617 ভ্যারিয়ান্ট "বিশ্বব্যাপী চিন্তার বিষয়ে" চতুর্থ ভ্যারিয়ান্ট ৷ এর জন্য উচ্চস্তরের ট্র্যাকিং, বিশ্লেষণ আর তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা অবশ্য প্রয়োজনীয়, তবে তা স্বচ্ছ উপায়ে করতে হবে ৷
"এটা করতেই হবে আর আমাদের সচেতন থাকতে হবে কারণ যত ভালো করে তথ্য সংগ্রহ করা যাবে, অবস্থা সামলাতে নীতিও তত উন্নত করা যাবে ৷ এটা মনে রাখুন যে, মানুষ শুধুমাত্র কোভিডেই মারা যাচ্ছে না, অন্য অসুখের চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়েও মারা যাচ্ছে", ব্যাখ্যা স্বামীনাথনের ৷
ভারতের সংক্রমণের হার আটকাতে সরকারকে আবারও লকডাউনের পথ বেছে নিতে হয়েছে ৷ এর সমাধানে হু-র এই বিজ্ঞানী বলছেন, "এই ভ্যারিয়ান্টের ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা, এর প্রভাব কতটা ভয়ানক, এমনকি ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও শরীরে অ্যান্টিবডির সঙ্গে লড়বার ক্ষমতা কীরকম, এই বিষয়গুলি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে ৷ তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যা হচ্ছে, তাতে "জিনোম সিকুয়েন্সিং করলে পুরো ছবিটা পরিষ্কার হবে না ৷ জানা যাবে না এর সংক্রমণের তীব্রতা কেমন, কতটা বিপজ্জনক বা তোমার চিকিৎসায় এর প্রভাব কতটা ৷" বরং উপায় এই রোগের মহামারী নিয়ে হাতেনাতে পর্যবেক্ষণ ৷
প্যানডেমিকের সময়ে যাতায়াত
এ বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন, রিভিউ কমিটি অন ইন্টারন্যাশনাল হেলথ রেগুলেশনস (আইএইচআর) কোথাও যাওয়ার ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট সঙ্গে রাখা আবশ্যিক করেছে ৷ তবে "কেউ ভ্যাকসিন নিল মানেই তার আর সংক্রমণের সম্ভাবনা নেই, এমনটা নয় ৷ কোথাও যাওয়ার ক্ষেত্রে হয় আপনি সংক্রমণটা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন অথবা অ্যাসিম্পটোমেটিক হলে অন্যকে সংক্রামিত করতেই পারেন ৷ আর এর নৈতিক বিতর্ক হল যে সবাই ভ্যাকসিনেশনের সুবিধা পাননি এখনো ৷"
স্বামীনাথনের সমাধানের পরামর্শ
বিজ্ঞান, জনগণের স্বাস্থ্যনীতি সংক্রান্ত তথ্যের উপর নির্ভর করে সবার আগে একটা শক্তিশালী নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে ৷ আর চিকিৎসা চললেও সেটাকে সময়ে সময়ে আপডেট করা দরকার ৷
ট্রেড রিলেটেড অ্যাসপেক্টস অফ ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস (টিআরআইপিএস)
হু বিশ্বাস করে ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকা কোভিড-19 ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে টিআরআইপিএস স্বত্ত্ব ত্যাগ করার দাবি তুলেছে, সেটা অবশ্যই করা উচিত ৷ এই প্যানডেমিকের সময় পেটেন্ট আর লাভ নিয়ে চিন্তা না করাই ভালো, জানিয়েছেন হু-র বিজ্ঞানী ৷ গত বছর অক্টোবরে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা আর ডব্লিউটিও-র 57টি সদস্য দেশ কোভিড-19 সংক্রান্ত টিআরআইপিএস-এর চুক্তিগুলি শিথিল করার দাবি তুলেছিল ৷
তবে অ্যান্থনি ফসির মতো স্বামীনাথনেরও মত গণ ভ্যাকসিনেশনই এই প্যানডেমিককে হারানোর একমাত্র উপায় ৷