নয়াদিল্লি, 21 জানুয়ারি : নায়কদের ভাবমূর্তি কখনও মলিন হয় না ৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা শুধু উজ্জ্বলতাই ছড়িয়ে যান ৷ 77 বছর আগে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অন্তর্ধান ঘটেছে ৷ তার পরও তিনি সারা দেশের অনুপ্রেরণা ৷ সারা দেশকে বিভিন্নভাবে পথ দেখিয়ে চলেছেন ৷ আগামী রবিবার নেতাজির সেই ঐতিহ্য দেশের ইতিহাসকে সত্য ও যুক্তি সার্চলাইটে আলোকিত করবে ৷
আগামী রবিবার নয়াদিল্লির ইন্ডিয়া গেটের কাছে নেতাজির একটি হলোগ্রাম মূর্তি উন্মোচিত হবে (Netaji statue at India Gate) ৷ একসময় যেখানে ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম জর্জের 70 ফুট উচ্চতার মূর্তি থাকত ৷ 1968 সালে তা সরিয়ে দেওয়া হয় ৷ কিন্তু নেতাজির হলোগ্রাম মূর্তিটি ওখানে সাময়িকভাবে রাখা হবে, যতদিন না সেখানে 6 ফুট দৈর্ঘ্য এবং 28 ফুট প্রস্থের গ্রানাইট পাথরের নেতাজি মূর্তি এনে বসানো হচ্ছে ৷
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র টুইট করে নেতাজির মূর্তি বসানোর কথা ঘোষণা করেন (PM Modi on Netaji statue at India gate) ৷ টুইটারে তিনি লেখেন, ’’সারা দেশ যখন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের 125 তম জন্মজয়ন্তী পালন করছে, তখন এটা ঘোষণা করতে পেরে আমি আনন্দিত যে গ্রানাইট পাথরের তৈরি তাঁর একটি মূর্তি বসানো হবে ইন্ডিয়া গেটে ৷ ভারত যে তাঁর কতটা ঋণী, তার প্রতীক হিসেবে থাকবে ওই মূর্তি ৷’’
পরের একটি টুইটে প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘‘যতদিন ওই মূর্তি তৈরি হচ্ছে, ততদিন একটা হলোগ্রাম মূর্তি সেখানে বসানো হবে ৷ আমি আগামী 23 জানুয়ারি নেতাজির জন্মজয়ন্তীতে ওই মূর্তি উন্মোচন করব ৷’’ ইম্পিরিয়াল ওয়ার গ্রেভস কমিশন বা আইডাব্লজিসি ইন্ডিয়া গেট তৈরি করেছিল ৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ শাসিত ভারতের যে সেনারা মারা গিয়েছিলেন, তাঁদের স্মরণেই ওই সৌধ তৈরি করা হয় ৷
পরে 1971 সালে সেখানে তৈরি হয় অমর জওয়ান জ্যোতি ৷ অর্থাৎ যে অগ্নিশিখা নেভে না ৷ 1971-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সামিল হয়ে ভারতীয় সেনার যে সৈনিকরা শহিদ হয়েছিলেন, তাঁদের বলিদানকে অমর করে রাখতে ওই জ্যোতির সূচনা হয়েছিল ৷ ফলে 1971 সালের পর যে ভারতীয় সৈনিকরা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁদের জন্য ইন্ডিয়া গেটে কোনও স্মারক ছিল না ৷ যাকে ‘ঐতিহাসিক অসঙ্গতি’ বলা যেতেই পারে ৷
নেতাজির ওই হলোগ্রাম মূর্তি ইতিহাসের অন্ধকারকে আলোকিত করার পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে ৷ তার সঙ্গে সংশোধন করা হল আরও একটি ঐতিহাসিক ত্রুটি ৷ 'অমর জওয়ান জ্যোতি'-র শিখা স্থানান্তরিত হয়েছে ৷ তা জাতীয় যুদ্ধ স্মৃতিসৌধের জ্বলন্ত শিখার সঙ্গে মিশে গিয়েছে ৷ এই জাতীয় যুদ্ধ স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়েছে 2019 সালে ৷
আরও পড়ুন : Chandra Bose on Netaji Statue : নেতাজির সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ মেনে চলতে মোদি সরকারকে পরামর্শ চন্দ্র বোসের
প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রকের একটি সূত্রের দাবি, 1971 ও অন্য যুদ্ধের শহিদদের শ্রদ্ধা জানানো হত ‘অমর জওয়ান জ্যোতি’-তে ৷ অথচ সেখানে কারও নাম থাকত না ৷ এটা খুবই অস্বস্তিকর ছিল ৷ ইন্ডিয়া গেটে যে নামগুলি আছে, সেই জওয়ানরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধে শহিদ হয়েছিলেন ৷ সেটা আমাদের ঔপ্যনিবেশিকতার অতীতের প্রতীক ছিল ৷’’
পিএমও-র ওই সূত্রের আরও দাবি, ‘‘জাতীয় যুদ্ধ স্মৃতিসৌধে 1971 এবং তার আগে ও পরের সমস্ত যুদ্ধে ভারতীয় শহিদ সেনানিদের নাম উল্লেখ করা রয়েছে ৷ তাই সেখানে অগ্নিশিখা মিশিয়ে দিয়ে শহিদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হল ৷’’
আরও পড়ুন : Netaji's 125th Birth Anniversary : জন্মজয়ন্তীতে সংসদে শ্রদ্ধা জানানো হবে নেতাজিকে, বিজ্ঞপ্তি সচিবালয়ের