নয়াদিল্লি, 12 অক্টোবর: ছাব্বিশ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা এক মহিলাকে গর্ভপাতের সিদ্ধান্তের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ বৃহস্পতিবার আদালত ওই মহিলাকে আরও কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে বলেছে, যাতে তাঁর গর্ভস্থ সন্তান কোনও বিকৃতি নিয়ে না জন্মায় ৷
ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে এবং বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও মনোজ মিশ্রের নেতৃত্বে একটি বেঞ্চ শুনানির সময় জানিয়েছে, অনাগত শিশুরও অধিকার রয়েছে এবং অবশ্যই নারীরও স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ । বেঞ্চ বলেছে যে 21 ধারার অধীনে ওই মহিলার অধিকার আছে ৷ কিন্তু একইভাবে অনাগত সন্তানের অধিকার প্রভাবিত যাতে না করে সেই দিকেও খেয়াল রাখতে হবে ৷
বেঞ্চ আবেদনকারীর আইনজীবীকে বলেছে, "কে অনাগত সন্তানের পক্ষে হাজির হচ্ছেন ? আপনি মায়ের জন্য... আপনি কীভাবে অনাগত সন্তানের অধিকারের ভারসাম্য বজায় রাখবেন ? এটি একটি জীবন্ত ভ্রূণ । আজ তাঁর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আছে… ৷”
প্রধান বিচারপতি আবেদনকারীর আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, শিশুটিকে হত্যা করাই কি একমাত্র বিকল্প ? বিচারবিভাগীয় আদেশে কীভাবে একটি শিশুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যায় ? আবেদনকারীর আইনজীবী বলেছেন যে তার ক্লায়েন্ট সন্তানের হৃদস্পন্দন বন্ধ করতে চান না এবং গর্ভাবস্থার পুরো মেয়াদ অতিক্রম করতে চান না ।
প্রধান বিচারপতি বলেন, “এটা খুব স্পষ্টভাবে বলা যাক, হয় আমরা শিশুটিকে মেরে ফেলি, অথবা আমরা নিশ্চিত করি যে শিশুটি বিকৃত হয়ে যাতে জন্মগ্রহণ না করে এবং সারাজীবনের জন্য বিকৃত হয়ে না যায় ৷ আমরা শিশুকে হত্যা করতে পারি না... ৷’’
অবশ্যই, একটি প্রদত্ত ক্ষেত্রে আমরা এখনও সেই ওভাররাইডিং বিচক্ষণতা ব্যবহার করব । একটি শিশু, যে শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে । একটি মেয়ে, যে জানে না যে তাকে জোরপূর্বক সহবাসের শিকার করা হয়েছিল... বিচারকদের কাজটি ভারসাম্য বজায় রাখা । অধিকারের ভারসাম্য রাখা, কর্তব্যের ভারসাম্য রাখা, সমাজের ভালোর জন্য ভারসাম্য রাখা ৷ আমি আসলে এই নির্দেশ দেওয়ার পরিস্থিতিকে খুব কঠিন বলে মনে করি... ৷”
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, “আজ যদি শিশুটি বিকৃত হয়ে প্রসব হয়, তাহলে কেউ শিশুটিকে দত্তক নেবেন না । আমাদের দেশে মানুষ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের দত্তক নিতে পছন্দ করে না, এটা খুবই কঠিন সত্য । মাঝে মাঝে ব্যতিক্রম থাকে ৷ কিন্তু সাধারণত এই ধরনের মানুষ আমাদের দেশে নেই । কিন্তু ঘটনাটি হল যে শিশুটির কেউ থাকবে না, কোনও সাহায্যের উৎস থাকবে না... ৷"
আরও পড়ুন: 29 সপ্তাহের গর্ভাবস্থায় বিশেষভাবে সক্ষম ধর্ষিতাকে গর্ভপাতের অনুমতি বম্বে হাইকোর্টের
আবেদনকারীর আইনজীবী উল্লেখ করেন, তার মক্কেলের সঙ্গেও একই জিনিস ঘটবে ৷ তিনি তাঁর দুই সন্তানের যত্ন নিতে অক্ষম এবং তাঁর শাশুড়ি এখন তাঁর সন্তানদের যত্ন নিচ্ছেন ৷ এবং তৃতীয় সন্তানের যত্ন নেওয়া সম্ভব নয় এবং আবেদনকারীর জীবনও নষ্ট হবে । তৃতীয় সন্তানের জন্মের পরে, দু’টি জীবন নষ্ট হয়ে যাবে ।
প্রধান বিচারপতি আবেদনকারীর আইনজীবী এবং কেন্দ্রের প্রতিনিধিত্বকারী অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বরিয়া ভাটিকে বৃহস্পতিবার আবেদনকারীর সঙ্গে কথা বলতে বলেন এবং শুক্রবার আদালত আবার এই নিয়ে শুনানি হবে ৷ প্রাথমিক পর্যায়ের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে চাঞ্চল্যকর কোনও রায় দিতে চায় না ৷
আইনজীবী বলেন, এই মামলাটি নিয়ে যদি নাবালিকা বা অবিবাহিত মেয়ে আদালতে আসত, তাহলে এখানে ভ্রুণহত্যার প্রশ্নই উঠত না । প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন যে সেটা পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল ৷ তখন আইনজীবী তাঁর মক্কেল যে বিবাহিত সেই বিষয়টি উল্লেখ করেন ৷ উত্তরে প্রধান বিচারপতি বলেন, “এটা কি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য তৈরি করে না ?’’ আবেদনকারীর আইনজীবী 29-সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বাকে গর্ভপাতের অনুমতি সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের একটি রায়ের কথা বলেন ৷ প্রধান বিচারপতি তখন বলেন, “আমি জানি, কিন্তু আমরা সুপ্রিম কোর্ট ৷”
বুধবার এই নিয়ে একদফা শুনানি হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে ৷ তখন দু’জন বিচারপতি গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন ৷ তার পর বিষয়টি যায় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে ৷ যাতে বিষয়টির শুনানি নিয়ে বৃহত্তর বেঞ্চ তৈরি করা হয় ৷ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে এই নিয়ে শুনানি হয় ৷
এর আগে 9 অক্টোবর সর্বোচ্চ আদালত ওই মহিলাকে গর্ভপাতের অনুমতি দিয়েছিল তাঁর আর্থিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বিচার করে ৷ কিন্তু আদেশ প্রত্যাহার করার জন্য কেন্দ্রের তরফে আবার আবেদন করা হয়৷ বুধবার সেই নিয়ে এক দফা শুনানি হয় ৷ তার পর বৃহস্পতিবার শুনানি হল৷ শুক্রবারও এই নিয়ে শুনানি হবে ৷
আরও পড়ুন: 26 সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা বিবাহিতাকে গর্ভপাতে অনুমতি ? দ্বিধাবিভক্ত সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ