নয়াদিল্লি, 1 জানুয়ারি : নতুন বছরের প্রথম দিনে লাগু হচ্ছে চিনের নতুন সীমান্ত আইন 'ল্যান্ড বর্ডার ল অফ দ্য পিপল'স রিপাবলিক অফ চিন' (Land Border Law of the People’s Republic of China) ৷ এতে ভারত-চিন সীমান্ত নিয়ে দু'দেশের সম্পর্ক আরও তিক্ত হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা
সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য 2021-এ আইনটি পাশ করেছিল চিন ৷ এতে ভারত-চিন সীমান্তে অবস্থিত গ্রামাঞ্চলে বিশাল পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পারবে চিনের পিএলএ (People's Liberation Army, PLA) বাহিনী ৷ এর সঙ্গে আবার 27 ডিসেম্বর, 2021 তারিখে চিন অরুণাচল প্রদেশ সংলগ্ন 15টি এলাকার নতুন নামকরণ করেছে ৷ এর মধ্যে অরুণাচল প্রদেশের বসতি এলাকা, পাহাড়, নদী রয়েছে ৷ এই অঞ্চলটি তাদের বলে দাবি করেছে চিন এবং নাম দিয়েছে 'দক্ষিণ তিব্বত' (South Tibet) ৷
ইটিভি ভারতের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রবীণ যুদ্ধ ও সামরিক বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) ডাঃ জিডি বক্সি এ বিষয়ে বলেন, "লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (Line of Actual Control, LAC) নিয়ে চিনের যে চিন্তাভাবনা রয়েছে, তা কার্যকর করতেই চিনের এই নতুন সীমান্ত আইন ৷ চিন ভাবছে ওই অঞ্চল থেকে আমাদের উৎখাত করে দিতে পারবে ৷ কিন্তু ভারত খুব দৃঢ়তার সঙ্গে এর জবাব দিয়েছে ৷ চিনের ট্যাঙ্কের পর ট্যাঙ্ক, বন্দুকের পর বন্দুকের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে প্রথম ভুটানে, তারপর সিকিম আর এখন লাদাখেও ৷"
আরও পড়ুন : Rahul Gandhi on Chinese Occupation : এবার চিনা দখলদারির সত্যতাও মেনে নেওয়া উচিত কেন্দ্রের, দাবি রাহুলের
কাশ্মীরে ভারতকে চাপের মুখে রাখতে চিন বহুবার চেষ্টা করেছে ৷ সেই সব অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মিশনে ছিলেন মেজর জেনারেল বক্সি ৷ এলএসি নিয়ে ভারতের সঙ্গে সরাসরি বিতর্কে জড়িয়েছে চিন ৷ এই পরিস্থিতি শান্তি ফিরতে পারে কি না, জিজ্ঞেস করায় মেজর জেনারেল বলেন, "ওদের কাছে লোকশক্তি কম, এটা একটা সমস্যা ৷ তাই ওরা সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে গ্রাম গড়ছে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স এবং রোবট, এসব দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ৷ এগুলো তামাশা, কিন্তু পাহাড়ে রোবট কাজ করে না ৷"
তিনি আরও বলেন, "বিশ্বে চিনের জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি ৷ কিন্তু ওই জনসংখ্যায় প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বেশি ৷ আর দুনিয়ায় আমাদের জনসংখ্যায় তরুণরা সবেচেয়ে বেশি ৷ তাই খুব বেশিদিন পর্যন্ত চিন সামরিক বাহিনীর শক্তি দিয়ে পেরে উঠতে পারে না ৷"
প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর প্রশংসা
দু'দেশের মধ্যে সম্পর্ক যখন ক্রমাগত তিক্ত হয়ে চলেছে, সেই সময় হিমালয় সংলগ্ন সীমান্তে পরিকাঠামোর অভাব একটা জটিলতা তৈরি করেছে ৷ এতে নয়াদিল্লির স্বার্থ এবং সার্বভৌমত্ব চিনের রেডারে ধরা পড়ছে ৷
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের (Defence Minister Rajnath Singh) প্রশংসা করে মেজর বক্সি বলেন, "তিনি একদম ঠিক ৷ হিমালয় সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পরিকাঠামোর অভাব একটা বড় সমস্যা ৷" মঙ্গলবার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী দেশকে 24টি নতুন সেতু এবং 3টি নতুন রাস্তা দিয়েছেন ৷ এগুলি জম্মু ও কাশ্মীর, লাদাখ, অরুণাচল প্রদেশ, হিমাচলপ্রদেশে বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন (Border Roads Organisation, BRO) নির্মাণ করেছে ৷
আরও পড়ুন : Tricolour on China Border: চিন-নেপাল সীমান্তে 100 ফুটের তেরঙ্গা উত্তোলন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর
ভারত-চিন সম্পর্কে আরও চাপের মধ্যে রাখতে চাইছে চিন ৷ এ প্রসঙ্গে মেজর বক্সি বলেন, "চিন এগুলো করছে শুধুমাত্র তাদের মালিকানা দেখানোর জন্য এবং জোর করে দাবি চাপিয়ে দিচ্ছে ৷ আকসাই চিনের (Aksai Chin) ক্ষেত্রে যা করেছিল, ঠিক তাই করছে ৷ তখন 30 হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে নিয়েছে ৷ আর কৌশলগত ভাবে তিব্বত থেকে জিনজিয়াংয়ের (Tibet to XINJIANG) মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী একটা রাস্তা বানিয়ে ফেলেছে ৷"
1962 সালের কথা বলতে গিয়ে প্রবীণ যোদ্ধা বলেন, "1962 থেকে ভারতের নিরাপত্তা ক্ষেত্রে একটা পরাজয়ের মানসিকতা চলে আসছে, আমরা রাস্তা তৈরি করব না ৷ কারণ চিন সেগুলো ব্যবহার করে এগিয়ে আসবে ৷ যার কোনও মানে হয় না! ইজ়রায়েলিরা প্রায়শ একটা কথা বলে ৷ দামাসকাস থেকে তেল আভিভ পর্যন্ত যে রাস্তাটা গিয়েছে, সেটাই আবার তেল আভিভ থেকে দামাসকাসে এসেছে ৷ তাই রাস্তার দুটো দিক থাকে ৷ আমরা তাকে আক্রমণ করার জন্য ব্যবহার করতে পারি ৷"
তিনি উল্লেখ করেন, শেষবার চিন ভিয়েতনামের সঙ্গে সামরিক যুদ্ধে জড়িয়েছিল এবং তাতে হেরেছিল ৷