নয়াদিল্লি, 11 অগস্ট: সংঘাতের সময় মহিলাদের উপর যৌন হিংসা নৃশংসতা ছাড়া আর কিছুই নয় ৷ মণিপুর প্রসঙ্গে শুক্রবার এ কথা বলল সুপ্রিম কোর্ট ৷ মণিপুর নিয়ে গঠিত দুটি কমিটিকে দুই মাসের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করতে বলেছে শীর্ষ আদালত ৷
মণিপুর নিয়ে কমিটি: প্রাক্তন উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও মহারাষ্ট্র পুলিশের প্রাক্তন ডিজি দত্তাত্রেয় পদসালগিকার এবং হাইকোর্টের তিনজন অবসরপ্রাপ্ত মহিলা বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটিকে তদন্ত এবং মণিপুরে ত্রাণ ও পুনর্বাসন ব্যবস্থার কার্যকারিতা সম্পর্কে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে ।
7 অগস্টের নির্দেশ অনুসারে শীর্ষ আদালত পাদসালগিকারকে মণিপুরে সংঘাতের সময় হিংসার (যৌন সহিংসতা সহ) ঘটনায় অপরাধীদের সঙ্গে পুলিশ আধিকারিকদের যোগসাজশের অভিযোগের তদন্ত করতে বলেছে ।
কেন্দ্র, রাজ্য সহযোগিতা করবে: সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার এই তদন্ত চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনও সহায়তা প্রদান করবে । ফলাফল একটি রিপোর্ট আকারে এই আদালতে জমা দেওয়া হবে ৷
এর আগে, মণিপুরী মহিলাদের নগ্ন হয়ে প্রকাশ্য রাস্তায় হাঁটানোর ভিডিয়োর বিষয়ে শীর্ষ আদালত বলেছে যে, সেই ভিডিয়ো ক্লিপ আদালতকে গভীরভাবে বেদনা দিয়েছে এবং মিডিয়াতে যা চিত্রিত হয়েছে তা ব্যাপক ভাবে সাংবিধানিক লঙ্ঘন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইঙ্গিত দেয় । নির্দেশে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ মণিপুরে সাম্প্রদায়িক বিবাদের সময় নারীরা যেভাবে গুরুতর যৌন হিংসার শিকার হয়েছে তার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করে ।
আরও পড়ুন: মণিপুরে পুনর্বাসনে হাইকোর্টের প্রাক্তন 3 মহিলা বিচারপতির কমিটি গঠনের প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্টের
বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং মনোজ মিশ্রের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বলেছে যে, মহিলাদের উপর যৌন অপরাধ এবং হিংসা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য ও এটি মর্যাদা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং স্বায়ত্তশাসনের সাংবিধানিক মূল্যবোধের গুরুতর লঙ্ঘন করে, যেগুলি মৌলিক অধিকার হিসাবে সুরক্ষিত রয়েছে সংবিধানের তৃতীয় খণ্ডে ।
বেঞ্চ বলেছে, "সাম্প্রদায়িক হিংসার সময়ে সম্প্রদায়ের কাছে পরাধীনতার বার্তা পাঠাতে জনতা যৌন হিংসা ব্যবহার করে । সংঘাতের সময় নারীর প্রতি এমন দৃশ্যমান হিংসা নৃশংসতা ছাড়া আর কিছুই নয় । এটি রাষ্ট্রের বাধ্যতামূলক কর্তব্য যে, জনগণকে এই ধরনের নিন্দনীয় হিংসা থেকে বিরত রাখা এবং হিংসা যাঁদের লক্ষ্য করে হচ্ছে, তাঁদের রক্ষা করা ৷"
কী করবেন পদসালগিকার? পদসালগিকার মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অন্তত 12টি ক্ষেত্রে সিবিআই দ্বারা পরিচালিত তদন্তের তত্ত্বাবধান করবেন ৷ তিনি হিংসার ঘটনায় রাজ্যে নথিভুক্ত 6,500 টিরও বেশি এফআইআর তদন্তের জন্য মণিপুর সরকার কর্তৃক গঠিত 42টি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান করবেন ।
মহিলা কমিটির ভূমিকা: 36-পৃষ্ঠার আদেশে শীর্ষ আদালত বলেছে যে, হাইকোর্টের তিনজন প্রাক্তন বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত মহিলা কমিটি মহিলাদের বিরুদ্ধে হিংসার ধরণ সম্পর্কে তদন্ত করবে, ত্রাণশিবিরে মর্যাদার শর্ত নিশ্চিত করবে, বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের জন্য অতিরিক্ত শিবিরের পরামর্শ, ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং হিংসার শিকার ব্যক্তিদের পুনরুদ্ধার ও ত্রাণশিবিরে মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করবে ।
সত্য-অনুসন্ধানের প্রয়োজন: শীর্ষ আদালত বলেছে যে, হিংসার শিকার ব্যক্তিদের অবশ্যই তাঁদের সম্প্রদায় নির্বিশেষে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং হিংসার উত্স নির্বিশেষে অবশ্যই হিংসায় অপরাধীদের জবাবদিহি করতে হবে। হিংসা নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং অপরাধীদের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে... এই ধরনের অভিযোগগুলির জন্য বস্তুনিষ্ঠ সত্য অনুসন্ধান করা প্রয়োজন ৷
তদন্তের ধীর গতির জন্য শীর্ষ আদালত এন বীরেন সিং সরকারের সমালোচনা করেছে ৷ 13 অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে ফের শুনানি করবে ৷