নয়াদিল্লি, 15 ডিসেম্বর: স্বেচ্ছামৃত্যু চেয়ে দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের কাছে খোলা চিঠি লিখলেন উত্তরপ্রদেশের একটি আদালতের মহিলা বিচারক ৷ অভিযোগ, তাঁর থেকে উচ্চ পদমর্যাদায় থাকা ব্যক্তি এবং তাঁর সহযোগীরা মহিলা বিচারককে যৌন হেনস্তা করেছে ৷ গত দেড় বছর ধরে এই নির্যাতন সহ্য করে তিনি ক্লান্ত, অবসন্ন ৷ তিনি মনে করছেন, এভাবে আর বেঁচে থাকতে পারবেন না ৷ তাই প্রধান বিচারপতির কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়েছেন ৷ নির্যাতিতা মহিলা বিচারক লিখেছেন, "আমি অনুরোধ করছি, সম্মানের সঙ্গে আমায় আমার জীবন শেষ করতে দিন ৷ আমার জীবন শেষ হোক ৷" এই চিঠি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে ৷
ইতিমধ্যে এলাহাবাদ হাইকোর্ট থেকে রিপোর্ট তলব করেছেন দেশের প্রধান বিচারপতি ৷ মহিলা বিচারকের অভিযোগ, তিনি বারাবাঁকিতে থাকাকালীন এক জেলা বিচারক এবং তাঁর সঙ্গীরা মহিলা বিচারকের উপর যৌন হেনস্তা চালায় ৷ নির্যাতিতা লিখেছেন, "যৌন হেনস্তা আমার সহ্যসীমা অতিক্রম করে গিয়েছে ৷ আমাকে জঞ্জালের মতো ব্যবহার করা হয়েছে ৷"
প্রধান বিচারপতির নির্দেশ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেল অতুল এম কুরহেকার এলাহাবাদ হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে চিঠি লেখেন ৷ মহিলা বিচারকের করা অভিযোগগুলির ভিত্তিতে এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চেয়েছেন তিনি ৷
তবে জানা গিয়েছে, এলাহাবাদ হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিও এই খোলা চিঠির বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিয়েছেন ৷ এদিকে মহিলা বিচারক আরও জানিয়েছেন, তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে 2023 সালের জুলাই মাসে হাইকোর্টের ইনটার্নাল কমপ্লেন্টস কমিটি তদন্তের নির্দেশ দেয় ৷ কিন্তু এই তদন্তকে তিনি 'মিথ্যা এবং ভুয়ো' বলে উল্লেখ করেছেন ৷ তদন্ত সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, "এই ঘটনার তদন্তে সাক্ষ্য দিয়েছেন অভিযুক্ত জেলা বিচারকের অধস্তন কর্মীরা ৷ তাঁদের সরাসরি ওই বিচারকের অধীনে কাজ করতে হয়। এই অবস্থায় কমিটি কীভাবে আশা করে যে, সাক্ষী তার ঊর্ধ্বতনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে ? এটা আমার ভাবনার বাইরে ৷"
এই অবস্থায় নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের স্বার্থে তদন্ত চলাকালীন মহিলা বিচারক ওই জেলা বিচারকের বদলির কথা জানিয়েছিলেন ৷ তবে হাইকোর্টে মাত্র 8 সেকেন্ডে তার নিষ্পত্তি হয়ে যায় এবং বিচারকের আবেদন খারিজ করা হয় ৷ তিনি প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়কে লেখেন, "আমি অনুরোধ করেছিলাম, এই তদন্ত চলাকালীন জেলা বিচারককে বদলি করা হোক ৷ এই সামান্য প্রার্থনাটুকুও শোনা হয়নি ৷" নিজের মৃত্যু চাওয়া প্রসঙ্গে মহিলা বিচারক লেখেন, "আমি আর বাঁচতে চাই না ৷ গত দেড় বছরে আমি একটা মৃতদেহে পরিণত হয়েছি ৷ এই আত্মাহীন এবং প্রাণহীন শরীরটাকে বয়ে নিয়ে চলার কোনও কারণ দেখছি না ৷ আমার বেঁচে থাকার আর কোনও উদ্দেশ্য নেই ৷"
আরও পড়ুন: