মুম্বই, 30 জুন : সরকারের মেয়াদ শেষ হতে আড়াই বছরের কিছুটা কম সময় বাকি ছিল ৷ তার আগেই সপ্তাহভর নাটক শেষে বুধবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন উদ্ধব ঠাকরে ৷ আর তাঁর এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই পতন হল মহারাষ্ট্রের মহাবিকাশ আঘারি সরকারের ৷ গতকাল গভীর রাতে রাজ্যপালের ভগত সিং কোশিয়ারির হাতে নিজের পদত্যাগপত্র তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে ৷ তারপর দুই ছেলেকে নিয়ে মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা সারেন সদ্য প্রাক্তন-মুখ্যমন্ত্রী ৷
16 জন বিদ্রোহী শিবসেনা বিধায়কের সদস্যপদ খারিজের বিষয়টির এখনও কোনও সমাধান হয়নি, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন ৷ তা সত্ত্বেও বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আস্থা ভোটের মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ দেয় উদ্ধব ঠাকরেকে ৷ এরপরই ভার্চুয়ালি মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন উদ্ধব ঠাকরে ৷ এরপর রাতে রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারির হাতে ইস্তফাপত্র তুলে দেন তিনি ৷ তাঁর সঙ্গে ছিলেন ছেলে আদিত্য ঠাকরে ৷ রাজ্যপাল উদ্ধবের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন ৷ পরবর্তী কেউ মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ না-নেওয়া পর্যন্ত উদ্ধব কেয়ারটেকার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজকর্ম চালিয়ে যাবেন, এমনটাই স্থির হয়েছে ৷ অন্যদিকে বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিশ এবং শিবসেনার বিদ্রোহী নেতা একনাথ শিন্ডে সরকার গড়ার তোড়জোড় শুরু করেছেন (Uddhav Thackeray submits his resignation letter to Maharashtra Governor Bhagat Singh Koshyari) ৷
গত 20 জুন মহারাষ্ট্রের বিধান পরিষদ নির্বাচনে 10টির মধ্যে বিজেপি 5টি আসন পায় ৷ এতে ক্রস ভোটিংয়ের অভিযোগ ওঠে 12 জন শিবসেনা বিধায়কের বিরুদ্ধে ৷ 21 জুন হঠাৎই গায়েব হয়ে যান শিবসেনা মন্ত্রী তথা নেতা একনাথ শিন্ডে ৷ পরে জানা যায়, তিনি প্রথমে গুজরাতের সুরাটে এবং সেখান থেকে বিজেপি শাসিত অসমের গুয়াহাটিতে ব্লু ব়্যাডিসন হোটেলে আশ্রয় নিয়েছেন ৷ শুরু হয় মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক অচলাবস্থা ৷
আরও পড়ুন : বৃহস্পতিবারই 'অ্যাসিড টেস্ট', বুধ-সন্ধ্যায় ইস্তফা উদ্ধবের
মহারাষ্ট্র থেকে একের পর এক শিবসেনা এবং নির্দল বিধায়কেরা বিদ্রোহী একনাথ শিন্ডের সঙ্গে যোগ দিতে গুয়াহাটির হোটেলে ওঠেন ৷ একনাথ শিন্ডে বারে বারে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরেকে হুঙ্কার দিয়ে তাঁর পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলীয় বিধায়কের সমর্থনের কথা জানাতে থাকেন ৷ এরই মাঝে বিদ্রোহী শিন্ডে শিবিরের 16 জন শিবসেনার বিধায়ককে পদ খারিজের নোটিশ পাঠান মহারাষ্ট্রের ডেপুটি স্পিকার ৷ বিষয়টি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন ৷ 11 জুলাই পরবর্তী শুনানি ৷
একদিকে, একনাথ শিন্ডে নিজেকে শিবসেনার অন্তর্ভুক্ত বলেই দাবি করতে থাকেন ৷ অন্যদিকে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন ৷ এমনকি, সূত্রের খবর গোপনে বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিশের সঙ্গে বৈঠক সারেন, ছিলেন বিজেপির শীর্ষনেতা অমিত শাহও ৷ এরপরে আস্থা ভোটের প্রস্তাব আনে একনাথ শিন্ডে এবং বিরোধী দলনেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ৷ 2019-এ ফড়নবিশ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার প্রায় 80 ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করেছিলেন ৷ আর সরকার গড়েছিল শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোট ৷
শিবসেনা এবং নির্দল বিধায়ক মিলিয়ে শিন্ডের পক্ষে ছিলেন 50 জন বিধায়ক, অন্যদিকে উদ্ধবের হাতে মাত্র 13 ৷ তাই বিদ্রোহী সেনা নিশ্চিত ছিলেন, আস্থা ভোটে তিনিই জয়ী হবেন ৷ হিন্দুত্বের ইস্যুতে তিনি মহাবিকাশ আঘারি সরকারকে আক্রমণ করে কংগ্রেস-এনসিপি-শিবসেনা জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসার কথা জানান ৷ বিজেপির সঙ্গে সরকার গড়ার প্রস্তাব দেন ৷ স্বভাবতই তা মেনে নেননি বালাসাহেব-পুত্র ৷ আস্থা ভোটে যাওয়ার চেয়ে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়ার পথই বেছে নেন উদ্ধব ঠাকরে ৷
আরও পড়ুন : Fadnavis meets Governor: আস্থাভোট চেয়ে রাজ্যপালকে খোলা চিঠি ফড়নবীসের
বুধবার মুখ্যমন্ত্রী এবং বিধান পরিষদের সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর উদ্ধব জানিয়েছেন, তিনি শিব সেনা ভবনে ফিরে যাবেন ৷ শিব সেনা নেতা, কর্মীদের সঙ্গে দেখা করবেন ৷ বুধবার সন্ধেয় তিনি বলেন, "আমি চিরতরে চলে যাচ্ছি না ৷ আমি এখানে আছি এবং আবারও শিব সেনা ভবনে বসব ৷ সবার সঙ্গে দেখা করব ৷ আমি মুখ্যমন্ত্রী এবং বিধান পরিষদের সদস্য হিসেবে পদত্যাগ করছি ৷"
এনসিপি এবং কংগ্রেসের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, "এনসিপি এবং কংগ্রেস আমার সঙ্গে থেকেছে, সমর্থন করেছে ৷ তাদের ধন্যবাদ ৷ শিব সেনার পক্ষে অনিল পরব, সুভাষ দেশাই এবং আদিত্য ঠাকরে আমার সঙ্গে ছিলেন, যখন প্রস্তাব (বুধবার মন্ত্রিসভায় গৃহীত প্রস্তাব প্রসঙ্গে) পাশ হয় ৷ এনসিপি এবং কংগ্রেসও তা সমর্থন করেছে ৷"
আরও পড়ুন : একনাথই তাঁদের নেতা, গুয়াহাটির হোটেলে হাত তুলে জানালেন শিবসেনার বিদ্রোহী বিধায়করা