কটক, 7 জুন: টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন বাবা-মা ৷ আর তা থেকেই তাঁরা তাঁদের হারিয়ে যাওয়া সন্তানের খোঁজ পেলেন ৷ 2 জুন ওড়িশার বালাসোরের বাহানাগা বাজারে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় জখম হয়েছিল নেপালি দম্পতির শিশুটি ৷ একটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে ৷ আর এই অবস্থায় হাসাপাতালে শুয়ে বাবা-মাকে টিভিতে সাক্ষাৎকার দিতে শোনে নাবালক ৷
সূত্রে জানা গিয়েছে, রামানন্দ পাসওয়ান নামের এক নাবালক হাসাপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৷ তার বয়স 15 বছর ৷ আইসিইউতে শুয়েই সে টিভিতে একটি সংবাদমাধ্যমে তাঁর বাবা-মাকে দেখতে পায় ৷ তারপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানায় নাবালক ৷ এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই ছেলেটির সঙ্গে তার পরিবারকে মিলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে ৷ ছেলেটির বাবা হরি পাসওয়ান বলেন, "আমার ছেলেকে খুঁজে পেয়ে আমি খুশি ৷ আমার সন্তান তিন জন আত্মীয়ের সঙ্গে যাচ্ছিল ৷ ওই ট্রেন দুর্ঘটনায় সবার মৃত্যু হয়েছে ৷ তবে আমার ছেলে অলৌকিক ভাবে বেঁচে গিয়েছে ৷"
ভুবনেশ্বরে এসে সন্তানের খোঁজে হরি ও তাঁর স্ত্রী একের পর এক হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন ৷ এইমসের সামনে স্থানীয় একটি টিভি চ্য়ানেলের সাংবাদিক তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন ৷ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমটি ওই বাবা-মায়ের কথা সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরেন ৷ এদিকে হরি পাসওয়ানের ছেলে রামানন্দ সেই সাক্ষাৎকারটি তার আইসিইউ রুমে শুয়ে দেখতে পায় ৷ বাবা-মাকে চিনতে পেরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে খবর দেয় ৷
আরও পড়ুন: ফাঁড়া চলছেই, ওড়িশায় এবার মালগাড়িতে কাটা পড়ে 6 জনের মৃত্যু
এসসিবি মেডিক্যাল কলেজের ইমারজেন্সি বিভাগের আধিকারক ডাঃ বিএম মহারানা একটি সংবাদসংস্থায় বলেন, "হাসপাতাল ওই টিভি চ্যানেলের অফিসে খবর পাঠায় ৷ সেখান থেকে ভিডিয়ো এনে সেটি ভালো করে খতিয়ে দেখা হয় ৷ রামানন্দ ভিডিয়োতে তার বাবা-মাকে চিনতে পারে ৷ এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রামানন্দের সঙ্গে তাঁর বাবা-মায়ের দেখা করিয়ে দেয় ৷" নেপাল থেকে আসা রামানন্দ পাসওয়ান বালাসোরের ট্রেন দুর্ঘটনায় ভাগ্যের জোরে বেঁচে গিয়েছে ৷ তারপর সে তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরে গিয়েছে ৷ একে আবেগঘন মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেন চিকিৎসক ৷
উল্লেখ্য, 2 জুন, শুক্রবার সন্ধ্যা 7টার কিছু পরে ওড়িশার বালাসোরের বাহানাগা বাজার স্টেশনের কাছে একটি ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে ৷ চেন্নাইগামী শালিমার-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেসটি লুপ লাইনে ঢুকে পড়ে এবং একটি মালবাহী ট্রেনকে ধাক্কা মারে ৷ এতে করমণ্ডল এক্সপ্রেসেরই বেশ কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায় এবং পাশের ট্র্যাকে ছিটকে পড়ে ৷ ওই ট্র্যাক দিয়ে ডাউন যশবন্তপুর এক্সপ্রেস আসছিল ৷ করমণ্ডল এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত বগিগুলির সঙ্গে হাওড়া-বেঙ্গালুরু যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের ধাক্কা লাগে ৷ এই ট্রেনটিরও কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয় ৷ তবে সবেচেয় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে করমণ্ডল এক্সপ্রেস এবং তাতে থাকা যাত্রীরা ৷ 21টি বগি ছিটকে যায় বলে জানা গিয়েছে ৷ মৃতের সংখ্যা প্রায় 300 ৷ আহত 1 হাজার 200 জনেরও বেশি ৷ রবিবার রাত থেকে ট্রেন চলাচল ফের স্বাভাবিক হয়েছে ৷ গতকাল ওই দুর্ঘটনাস্থল দিয়েই করমণ্ডল এক্সপ্রেস চেন্নাই গিয়েছে ৷
আরও পড়ুন: দুর্ঘটনার পাঁচদিন পর 'অভিশপ্ত' বাহানাগা পেরল করমণ্ডল এক্সপ্রেস