আগরতলা, 28 জুলাই: আই প্যাকের (I PAC) সদস্যদের পাশে দাঁড়াতে আগামিকাল ত্রিপুরায় (Tripura) যাচ্ছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ বৃহস্পতিবার কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও ডেরেক ও'ব্রায়েন আগরতলা আসবেন ৷ শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে পরে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আগরতলা যাবেন বলে খবর ৷
আজ আগরতলায় গিয়ে বিজেপির সরকারের বাধার মুখে পড়ে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল (TMC Delegation Team)। কোভিড বিধি মেনে চলা সত্ত্বেও আই প্যাকের (I PAC) সদস্যদের কেন হোটেলে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, সেই প্রশ্ন তুললেন প্রতিনিধি দলের সদস্য তথা রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu) ৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় স্বৈরতন্ত্র চলছে ৷ বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে ৷ ব্রাত্য বসু বলেন, বিধানসভা নির্বাচনের সময় বারবার বিজেপির নেতারা বাংলায় এসে কোভিড ছড়ালেও তাঁদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী আচরণ দেখায়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ৷ তৃণমূল নেত্রীকে ভয় পেয়ে ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেই বিজেপি এই কাজ করছে বলে কটাক্ষ করেন তিনি ৷ এ দিন ব্রাত্য বসুর সঙ্গে আগরতলায় গিয়েছেন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক ও আইএনটিটিইউসি রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: ত্রিপুরায় ফ্যাসাদে টিম পিকে, পাকড়াও আই-প্য়াকের 22 সদস্য
এ দিন সাংবাদিক সম্মেলন করে ব্রাত্য বসু বলেন, "ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে ত্রিপুরা সরকার ৷ আই প্যাকের ছেলেদের প্রত্যেকের কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের হোটেলে আটকে রেখে তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে ৷ এতে সরকারের ভয় ও নিরাপত্তাহীনতা ধরা পড়েছে ৷ প্রশান্ত কিশোর এই সংস্থার মাথায় থাকাটাই কি তাঁদের অপরাধ ? বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে কোভিড চলাকালীন বারবার বাংলায় এসেছেন বিজেপির নেতারা ৷ তাঁরা কোভিড ছড়িয়ে গিয়েছেন ৷ কিন্তু মমতা ফ্যাসিবাদী আচরণ কারও সঙ্গে করেননি ৷"
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি থেকে ত্রিপুরার ঘটনার নিন্দা করেছেন ৷ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আগরতলায় পাঠিয়েছেন তৃণমূল প্রতিনিধি দলকে ৷ দলের অপর সদস্য আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক এই নিয়ে বলেন, "মিথ্যে মামলা দেওয়া হয়েছে ওঁদের বিরুদ্ধে ৷ কোভিড বিধি না-ভাঙা সত্ত্বেও কেন মামলা হবে ? ত্রিপুরা সরকার তৃণমূলকে ভয় দেখাতে চাইছে, সেটা হবে না ৷ বাংলা দেখিয়ে দিয়েছে, বিজেপি পুরো শক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে চষে বেড়ালেও মানুষ বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ৷ ত্রিপুরাতেও একই ঘটনা ঘটবে ৷"
আরও পড়ুন: জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস-তৃণমূল নৈকট্য, ভাঙনের আশঙ্কা রাজ্যের বাম-কংগ্রেস জোটে
ত্রিপুরায় বিজেপির ভরাডুবি হতে চলেছে বলে মনে করেন তৃণমূল প্রতিনিধি দলের অপর সদস্য ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ও ৷ তিনি বলেন, "গণতন্ত্রে বিরোধীদের বলতে দেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৷ ত্রিপুরায় এটা ব্যাহত হচ্ছে ৷ আই প্যাক কোনও রাজনৈতিক সংস্থা নয় ৷ তাঁদের সমীক্ষা করায় কোনও বিধিনিষেধ থাকতে পারে না ৷ এটা স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার চূড়ান্ত নিদর্শন ৷"
বাংলায় বাম ও বিজেপির যোগ থাকার অভিযোগ করে ঋতব্রত আরও বলেন, "ত্রিপুরায় লেনিনের মূর্তি ভেঙে দেওয়া হয়েছে ৷ প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় বিশ্বাস করেন না ৷ তিনি কোনও আলোচনায় অংশ নেন না ৷ বাংলায় দেখা গিয়েছে, রাম ও বাম মিশে গিয়ে একসঙ্গে পতাকা উড়িয়েছে ৷ তাই বাংলার মানুষ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়েছে ৷ ত্রিপুরাতেও পরপর নির্বাচনে দেখা গিয়েছে যে বামেদের আর কোনও জায়গা নেই ৷ আর বিজেপি স্বৈরতন্ত্র চালাচ্ছে ৷ গণতন্ত্রের জন্য এটা ভয়ংকর ৷ এখানে কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা হয়েছে ৷"
আজ সকালে কলকাতা থেকে বিমানে আগরতলা পৌঁছয় তৃণমূলের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল । বিমান আগরতলাতে পৌঁছতেই তাঁদের পথ আটকায় ত্রিপুরার পুলিশ । তাঁদের সরকারি আতিথেয়তা গ্রহণ করতে বলা হয় । ত্রিপুরা সরকারের তরফ থেকে এও বলা হয় যে, তাঁরা যেখানে যেতে চান তার জন্য সরকারের তরফ থেকে গাড়ির ব্যবস্থা করা হবে । যদিও এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি তৃণমূলের প্রতিনিধি দল । কারণ তারা রাজনৈতিক সফরে ত্রিপুরা গিয়েছেন । সেখানে রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে নজরদারির প্রয়াস হিসাবেই বর্ণনা করে তৃণমূল ।
আরও পড়ুন : ভোট কুশলী হিসাবে প্রশান্ত কিশোর রোল মডেল, দরাজ প্রশংসা কল্যাণের
এরপর সরকারের আবেদন উপেক্ষা করেই ত্রিপুরা তৃণমূল কংগ্রেসের পাঠানো গাড়িতে তারা দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে উপস্থিত হন । এ প্রসঙ্গে ত্রিপুরা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আশিস লাল সিংহ বলেন, "এই রাজ্যে বিরোধীদের জন্য কোনও জায়গা দিতে চাইছেন না মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব । তাই বিরোধী কাজকর্মের উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে । স্বাধীন ভারতের নাগরিক হিসাবে আমাদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজনৈতিক কাজকর্ম করার অধিকার রয়েছে । এরা সেই অধিকার আমাদের থেকে কেড়ে নিতে চাইছে । যে ভাবে আইপ্যাকের টিমকে আটকে রাখা হয়েছে এবং আজ যে ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলকে বাধা দেওয়া হল, তা একজন ত্রিপুরাবাসী হিসাবে আমার কাছে খুবই লজ্জার । তবে এই বিষয়গুলি আমরা ত্রিপুরার মানুষের কাছে নিয়ে যাব । আমরা মনে করি মানুষও ত্রিপুরা সরকারের এ ধরনের আচরণকে সমর্থন করবে না ।"
এদিকে আজ সন্ধ্যায় ত্রিপুরার কংগ্রেস নেতা সুবল ভৌমিক হোটেলে গিয়ে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন ৷ সুবল একটা সময় ত্রিপুরার দাপুটে তৃণমূল নেতা হিসাবে পরিচিত ছিলেন ৷ এদিন এই সাক্ষাতের পর তাঁর তৃণমূলে ফেরার জল্পনা জোরদার হয়েছে ৷