মান্দাপেটা, 3 জানুয়ারি: সোনার চেন ছিনতাই করত চোর ৷ তবে চোর হিসেবে সেখানেই থেমে থাকেনি সে ৷ আরও বড়সড়ো অপরাধে হাত পাকিয়েছে সে ৷ এভাবেই বেশ দিন কাটছিল ৷ কয়েক বছর এইসব করার পর শেষে মঙ্গলবার পুলিশের হাতে ধরা পড়ল চোরবাবাজি ৷ চোরের নাম রাচমপল্লি শ্রীনিবাস ওরফে মঙ্গলা শ্রীনু ওরফে ভাসু অফ ভেলামাড্ডি ৷ সে অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুরা জেলার বাসিন্দা ৷
স্থানীয় সূত্রের খবর, সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে শ্রীনিবাস ৷ এরপর আর স্কুলে যাওয়া হয়নি তার ৷ শুরু হয় অপরাধ জীবন ৷ প্রথম প্রথম সোনার চেন ছিনতাইয়ের মতো অপরাধমূলক কাজকর্ম করত ৷ খুব ঘন ঘন জেলে যেত শ্রীনিবাস ৷ সেখানে থাকার সময় পুলিশ আধিকারিকদের মধ্য়ে কথাবার্তার অনেক কিছুই তার কানে আসত ৷ এরপর জেল থেকে বেরিয়ে শ্রীনিবাস আরও বড় ধান্দা ফাঁদে ৷
জেল থেকে বেরিয়ে সরকারি দফতরে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত আধিকারিকদের নাম ও ফোন নম্বর জোগাড় করত শ্রীনিবাস ৷ এই আধিকারিকরা সরকারের খুব গুরুত্বপূর্ণ দফতরে কাজ করেন এবং আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িত ৷ এরপর শ্রীনিবাস ওই দুর্নীতিতে জড়িত আধিকারিকদের ফোন করত ৷ আর নিজের পরিচয় দিত কোনও এক শীর্ষ আধিকারিক হিসেবে ৷ শ্রীনিবাস আধিকারিকদের ভয় দেখাত, তাকে টাকা দিলে তবেই দুর্নীতিগ্রস্ত আধিকারিকরা পুলিশ বা তদন্তকারী সংস্থার হাত থেকে রেহাই পাবেন ৷ এভাবেই তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ আর কর্ণাটকে আধিকারিকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে শ্রীনিবাস ৷
অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের ডিএসপি টিএসআরকে প্রসাদ বলেন, "এটা বিরল একটা ঘটনা ৷ প্রতারকের ধরনটা খুব জটিল এবং সুচতুর ৷ রাচমপল্লি শ্রীনিবাস পুলিশ আধিকারিকদের কথা বলা, ওঠা-বসা সব ভালো করে খেয়াল করত ৷ নিজে এইগুলোই কাজে লাগাত ৷ জেলে থেকে ছাড়া পেয়ে সে বিভিন্ন সরকারি দফতরের শীর্ষ আধিকারিকদের নিশানা করত ৷ ওই আধিকারিকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ৷ তাঁদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাজনিত পদক্ষেপও করা হয়েছে ৷ এমন আধিকারিকদের ফোন করত শ্রীনিবাস ৷ নিজেকে ডিআইজি, আইজি এবং এসিবি বলে পরিচয় দিত ৷ তাঁদের হুমকি দিত, টাকা না দিলে ওই আধিকারিকদের অবস্থা খুব খারাপ হবে ৷"
এভাবে তেলেঙ্গানা, বেঙ্গালুরু, কাডাপা, চিত্তুর, অনন্তপুর এবং কোনাসীমা জেলায় একশোরও বেশি অপরাধ করেছে শ্রীনিবাস ৷ পুলিশের ডিএসপি টিএসআরকে প্রসাদ জানান, মান্দাপেট গ্রামীণ পুলিশের এএসআই বেঙ্কটেশ্বারা রাওকে প্রতারণা করে তাঁর থেকে 3 লক্ষেরও বেশি টাকা জালিয়াতি করেছে শ্রীনিবাস ৷ এখন ছিঁচকে চোরের বিরুদ্ধে বহু জামিন-অযোগ্য ধারায় ওয়ারেন্ট দায়ের হয়ে রয়েছে ৷
সম্প্রতি 16 ডিসেম্বর শ্রীনিবাসের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয় এবং তদন্ত শুরু হয় ৷ কর্ণাটক পুলিশের সাহায্যে শ্রীনিবাসের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা সম্ভব হয় ৷ তাকে অন্ধ্রপ্রদেশের রাজামহেন্দ্রভরম রেল স্টেশনের কাছে সাইকেল স্ট্যান্ড থেকে হাতেনাতে পাকড়াও করে পুলিশ ৷ শ্রীনিবাসের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, সে অন্যদের ফোন নম্বর ব্যবহার করত এবং ফোন পে-র মাধ্যমে টাকা নিত ৷ তবে নজরদারি এড়াতে সে অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করত না ৷ এমনকী কাজ মিটে গেলেই সঙ্গে সঙ্গে ফোন বদল করে ফেলত ৷ তবে এত সব কেরামতি সত্ত্বেও শেষ রক্ষা হল না চোরের ৷
আরও পড়ুন: