লখিমপুর খেরি, 27 অগস্ট: তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ের কাছে ইয়ার্ডে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের যে বগিটি আগুনের গোলায় পরিণত হয়েছিল, সেই বগির বুকিং এজেন্ট সম্পর্কে বড় তথ্য সামনে এল । সীতাপুরের ভাসিন ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস এজেন্সি বছরের পর বছর ধরে মানুষকে ধর্মীয় সফরে নিয়ে যায় । সূত্রের দাবি, প্রায় 22 বছর ধরে ভাসিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মালিক পাপ্পু প্রতিটি স্টেশনে আধিকারিকদের সঙ্গে সেটিং করে সিলিন্ডার ও ডিজেল স্টোভ নিয়ে ট্রেনে সফর করতেন ৷ শনিবার এমনই একটি সিলিন্ডারে আগুন লেগে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এবং ট্যুর অপারেটর পাপ্পুও প্রাণ হারান ।
ব্যবসায় পারদর্শী পাপ্পু ওরফে হরীশ ভাসিন আশপাশের সীতাপুর, লখিমপুর খেরি, হারদোই, শাহজাহানপুর, লখনউ, বাহরাইচ প্রভৃতি জেলায় ছিল একটি সুপরিচিত নাম । দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে ওঠা পাপ্পু তাঁর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বড় ট্যুর অপারেটর হয়ে ওঠেন । 22 বছর ধরে পাপ্পু ওরফে হরীশ ভাসিন চারধাম যাত্রা, বৈষ্ণো দেবী যাত্রা, কাঠমাণ্ডু বা অন্য কোথাও বাসে ভ্রমণ করাতেন পর্যটকদের । সূত্রের দাবি, 22 বছর ধরে রেলের কর্মচারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশ করে সিলিন্ডার ও বড় ডিজেল স্টোভ নিয়ে ট্রেনে চাপতেন তিনি । তাঁর কোচ ছিল চলন্ত প্যান্ট্রি কার । কোনও আধিকারিক ট্রেনে উঠলে তাঁকেও সেটিং করে নিতেন তিনি ৷
লখিমপুরের কাশিনগর এলাকার বাসিন্দা রমেশ ভার্মা বলেন, "আমরাও ভাসিন ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসে গিয়েছি । ভালো খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা ছিল । কোনও সমস্যা হয়নি । হ্যাঁ, টয়লেটের কাছে গ্যাসের ওভেনে খাবার রান্না হলে একটু ভয় পেতাম । যদিও সস্তায় এবং ভালো ভাবে সফর করাত, এই কারণে কেউ কথা বলতেন না ।"
সীতাপুর জেলায় ভাসিন ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের একটি ছোট অফিস রয়েছে । পাপ্পুর বাড়ি প্রেম নগর এলাকায় । কয়েক বছর ধরেই তাঁর এজেন্সি ট্যুরে যাওয়ার সময় ডিজেল, কেরোসিনের স্টোভ ও গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে যেত বলে জানা গিয়েছে । এই দুর্ঘটনায় পাপ্পুরও প্রাণ গিয়েছে ৷ শনিবার গভীর রাতে মাদুরাই প্রশাসন যখন তালিকা প্রকাশ করে, তখন হরীশ ভাসিন ওরফে পাপ্পুর নাম ছিল নবম নম্বরে ।
অগ্নিকাণ্ডে স্ত্রী ও শ্যালককে হারিয়েছেন সীতাপুরের প্রত্যক্ষদর্শী শিবকুমার চৌহান ৷ তিনি বলেন, "তখন সকাল । চারদিক থেকে বগি বন্ধ ছিল, তখনই আগুন লেগে যায় । তামিলনাড়ুর মাদুরাই স্টেশনে সকালের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছিল, তখনই ওই বগিতে আগুন ধরে যায় । চা ও পকোড়া তৈরির কথা থাকলেও সিলিন্ডারে লিকেজ থাকায় আগুন এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে । বেশিরভাগ যাত্রীই তখনও ঘুমোচ্ছিলেন । আগুন লাগার পর ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন অনেকে ৷ ততক্ষণে দুর্ঘটনায় আগুন এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে তাতে নয় জনের মৃত্যু হয় । 22 জনের বেশি দগ্ধ হয়েছেন । স্থানীয়রা দমকলকে খবর দিলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে ।"
হিন্দুস্তান প্রিন্টিং প্রেসের পুলকিত মাহিন্দ্রা লখিমপুরের ভাসিন ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের জন্য যাত্রীদের বুকিং নিয়েছেন ৷ তিনি বলেন, "এটি একটি দুর্দান্ত সফর ছিল ৷ প্রতিবারই মানুষ খুশি হতেন । আমরা হাজার হাজার লোকের বুকিং নিয়েছি ৷ কিন্তু এ বার কী হল জানি না । এ বারও আমরা 16 জন যাত্রীর বুকিং নিয়েছিলাম ।"
আরও পড়ুন: মাদুরাইয়ে ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আজ তদন্তে সাদার্ন সার্কেলের রেলওয়ে সেফটি কমিশনার
পাপ্পু দক্ষিণের কয়েকটি স্টেশনে রেল ট্যুর করাতেন । তাঁর বহু বছরের অভিজ্ঞতা ছিল । দু-চার মাস পর পরই সফরে যেতেন । এ বারও, সীতাপুর, লখিমপুর জেলা এবং আশপাশের জেলাগুলি থেকে পর্যটকরা রামেশ্বরমে বেড়াতে এসেছেন । পাপ্পুর যোগসাজশ করে এমন সেটিং করে রেখেছিলেন যে, প্রতিটি স্টেশনে এবং প্রতিটি হল্টে রেলকর্মীদের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক ছিল । রেলের স্টেশন মাস্টার হোক বা জিআরপি বা আরপিএফ-এর অফিসার, সবাই যা চাইতেন তাই তাঁর থেকে পেতেন । নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক যাত্রী বলেন, দক্ষিণের স্টেশন মাস্টার থেকে শুরু করে জিআরপির লোকজন পাপ্পুর কাছ থেকে আটা নিতেন । তাঁরা আবার আলাদা ভাবে টাকাও নিতেন পাপ্পুর থেকে ।
সফর চলাকালীন যাত্রীদের খাওয়া-দাওয়ার দিকে বিশেষ যত্ন নিত এই ট্র্যাভেল এজেন্সি । সকালে আসনেই চা-কফির সঙ্গে গরম গরম প্রাতঃরাশ পাওয়া যেত । সীতাপুর থেকেই পুরো ক্যাটারিং টিম গ্যাস, কড়াই-সহ সব জিনিস নিয়ে উঠত ৷ ছোলে বাটোরে, পনির, রাজমা, ভাত থেকে শুরু করে আলু পরোটা পর্যন্ত যাত্রীদের পরিবেশন করা হত ।