নয়াদিল্লি, 23 জুলাই : পেগাসাস (Pegasus Spyware) বিতর্কে উত্তাল রাজ্যসভা ৷ বাদল অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনকে (TMC MP Shantanu Sen) ৷ বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্ত মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের হাত থেকে বিবৃতি লেখা কাগজ ছিনিয়ে নিয়ে তা ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে ৷
পেগাসাস নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান ঠিক কী ? বৃহস্পতিবার তা জানতে চেয়েছিলেন বিরোধীরা ৷ চাপের মুখে রাজ্যসভায় এ নিয়ে বিবৃতি পাঠ করতে শুরু করেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব (IT Minister Ashwini Vaishnaw) ৷ অভিযোগ, সেই সময়েই তাঁর হাত থেকে বিবৃতি লেখা কাগজ ছিনিয়ে নেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন ৷ তারপর সেই কাগজ ছিঁড়ে হাওয়ায় উড়িয়ে দেন তিনি ৷ এরপর সমস্ত বিরোধী দলের সাংসদরা দল বেঁধে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন ৷ তুমুল শোরগোলের কারণে সে দিনের মতো সভার কাজ মুলতুবি করে দেন ডেপুটি চেয়ারম্য়ান হরিবংশ নারায়ণ সিং (Harivansh Narayan Singh) ৷
আরও পড়ুন: তৃণমূলের প্রতিবাদে তপ্ত সংসদ, রাজ্যসভায় মন্ত্রীর বিবৃতির কাগজ ছিঁড়লেন শান্তনু
এরপরই শান্তনু সেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তৎপর হয় কেন্দ্রীয় সরকার ৷ এই নিয়ে আজ উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডুর সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যসভার নেতা পীযূশ গোয়েল, উপনেতা মুখতার আব্বাস নকভি এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী ভি মুরলীধরণ ৷ শুক্রবার রাজ্যসভার অধিবেশন শুরু হতেই বাদল অধিবেশনের বাকি সময়ের জন্য রাজ্যসভা থেকে তৃণমূল সাংসদকে সাসপেন্ড করার দাবিতে প্রস্তাব পেশ করেন ভি মুরলীধরণ ৷ তাতে সম্মতি দিয়ে গোটা বাদল অধিবেশন থেকে শান্তনু সেনকে সাসপেন্ড করেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু ৷ তিনি বলেন, "শান্তনু সেন, অনুগ্রহ করে রাজ্যসভা থেকে বেরিয়ে যান ৷ কক্ষের কাজ হতে দিন ৷" এরপর গতকালের ঘটনা নিয়ে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন বিবৃতি দেওয়ার সময় তুমুল হই-হট্টগোলের জেরে বেলা 12টা পর্যন্ত রাজ্যসভার অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয় ৷
শান্তনু সেনকে সাসপেন্ড করার পরই এই নিয়ে সরব হয় তৃণমূল । কুণাল ঘোষ বলেন, "আসলে সবটাই নজর ঘোরানোর চেষ্টা হচ্ছে । শুভেন্দু অধিকারী নিজে স্বীকার করে নিলেন তাঁর কাছে কল রেকর্ড রয়েছে । পেগাসাসের সত্যতা যিনি স্বীকার করলেন, তার বেলায় তদন্ত হল না । আর যিনি প্রতিবাদ করছেন তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হচ্ছে । এভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের কণ্ঠরোধ করা যাবে না । আগামী দিনে এই প্রতিবাদ আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হবে ।"
একই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন । তিনি বলেন, "এভাবে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদদের কণ্ঠরোধ করা যাবে না । আমাদের প্রতিবাদ চলবে । আরও একবার প্রমাণিত হল বিজেপি সরকার সত্যের মুখোমুখি হতে চায় না । বরং সত্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা হলে বিরোধী সাংসদদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হয়।"
আরও পড়ুন : পেগাসাস ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির থেকেও ভয়ঙ্কর, দাবি মমতার
বৃহস্পতিবারই এই ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা ৷ দীর্ঘ সময় পর ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকের বদলে সশরীরে বৈঠকে যোগ দেন সুখেন্দুশেখর রায় (Sukhendu Sekhar Roy), ডেরেক ও ব্রায়েনরা (Derek O'Brien) ৷ উপস্থিত ছিলেন শান্তনু সেনও ৷ এই বৈঠকেই পেগাসাস ইস্যুতে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেন তৃণমূল নেতারা ৷ তাঁরা বলেন, পেগাসাস একটা বিদেশি স্পাই সফটওয়্য়ার ৷ যদি সত্যিই ভারতীয় নাগরিকদের নজরদারিতে এই সফটওয়্য়ার ব্যবহার করা হয়, তবে তার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে ৷ কিন্তু এই ঘটনা সত্যি হলে তা দেশের নিরাপত্তা, দেশবাসীর নিরাপত্তা, ব্যক্তিস্বাধীনতা-সহ নানা ক্ষেত্রেই বিপজ্জনক ৷ এটি একটি জাতীয় ইস্যু ৷ যার জবাব দেশের মানুষের কাছে দিতেই হবে ৷
তৃণমূলের দাবি, গোটা ঘটনায় অবিলম্বে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করুন মোদি সরকার (Modi Government) ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) সংসদে দাঁড়িয়ে এ নিয়ে নিজেদের বিবৃতি দিন ৷ এখানে অন্য কারও বিবৃতিই যথেষ্ট নয় ৷ শুক্রবারই সংসদের অধিবেশনে এসে এই বিষয়ে নিজেদের বক্তব্য পেশ করুন তাঁরা ৷ তা না হলে আগামী 13 অগাস্ট পর্যন্ত (13 অগাস্ট পর্যন্তই সংসদের বাদল অধিবেশন চলবে) তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের নেতৃত্বে পেগাসাস নিয়ে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখবে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল ৷