আগরতলা, 8 অগস্ট : দিনভর টানটান উত্তেজনার পর ত্রিপুরায় (Tripura) তৃণমূলকে স্বস্তি দিল খোয়াই আদালত ৷ ধৃত 14 জন নেতা-কর্মীর জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে ৷ তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অতিরিক্ত ধারার মামলায় গুরুত্ব দেয়নি আদালত ৷ আদালতের প্রক্রিয়া চলাকালীন ঠায় খোয়াই থানায় বসে রইলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) ৷ তৃণমূল কর্মীরা জামিন পাওয়ার পর তিনি হুঙ্কারের সুরে বলেন, "ত্রিপুরা থেকে বিজেপির সরকারকে উৎখাত করে ছাড়ব ৷ আজও জিতেছি, আগামী দিনেও জিতব ৷"
ধৃত তৃণমূল নেতা-কর্মীরা জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর আজ সন্ধেয় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, "ত্রিপুরায় বিজেপির শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ বিজেপিকে কীভাবে হারাতে হয় তা আমরা খুব ভাল করে জানি ৷ একটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, তৃণমূলকে ভয় দেখিয়ে, পাথর ছুড়ে দমানো যাবে না। আগামী নির্বাচনে ত্রিপুরা থেকে বিজেপি সরকারকে উৎখাত করে ছাড়বে তৃণমূল ।"
আজ ফের আদালত চত্বরে তৃণমূল কর্মীদের উপরে হামলার ঘটনায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ৷ পাহাড়ি পথ দিয়ে নেমে আসার পর ফের তৃণমূলের উপর বিজেপি হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ ৷ ত্রিপুরার ঘটনা নিয়ে দিল্লিতে বিজেপিকে চাপে ফেলতে আগামিকাল সংসদ ভবনের সামনে ধর্নার ডাক দিয়েছে তৃণমূল ৷
গতকালের পর আজও সকাল থেকেই ত্রিপুরায় চড়তে থাকে উত্তেজনার পারদ ৷ রবি সকালে আগরতলা পৌঁছেই খোয়াই থানায় যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ ধৃত তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে জামিনে মুক্তির দাবিতে খোয়াই থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখান তিনি ৷ তাঁর সঙ্গে ছিলেন কুণাল ঘোষ, ব্রাত্য বসু ও দোলা সেন ৷ থানাতেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ত্রিপুরা পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ আনে তৃণমূল ৷ তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের অভিযোগ, "পুলিশ ফাঁদে ফেলে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করেছে ৷ ভিত্তিহীন ধারায় মামলা করেছে ৷ আমরা সেগুলি প্রত্যাহার করতে বলেছিলাম ৷ এটা প্রমাণিত যে, পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে মামলা সাজিয়ে তৃণমূল নেতাদের নিয়ে এসেছে ৷ ওরা এই পথে আসতে চায়নি ৷ পুলিশ পাহাড়ি ফাঁকা রাস্তায় ওঁদের নিয়ে গিয়েছে, যেখানে বিজেপি সমর্থকরা জটলা বেঁধেছিল ৷ বিজেপি হামলা চালানোর পর তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা দেওয়ার নাম করে থানায় বসিয়ে রাখা হয় ৷ পরে সেই পুলিশই আবার নাইট কার্ফু ভাঙার অভিযোগ এনে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে ৷"
আরও পড়ুন: থানায় পুলিশের সঙ্গে বচসা অভিষেক-ব্রাত্যদের, বাইরে বিক্ষোভে বিজেপি
জামিন অযোগ্য ধারা না-সরানো পর্যন্ত তাঁরা থানা থেকে নড়বেন না বলে জানিয়ে দিলে ব়্যাফ ডেকে ধৃতদের থানা থেকে বের করে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ ৷ সেই সময় ব্রাত্য বসু, কুণাল ঘোষ ও দোলা সেন আদালত অভিমুখে রওনা দিলেও অভিষেক আদালতের শুনানি প্রক্রিয়া চলাকালীন ঠায় খোয়াই থানায় বসে থাকার সিদ্ধান্ত নেন ৷ তিনি জানিয়ে দেন, তৃণমূল কর্মীরা জামিনে মুক্ত না-হওয়া পর্যন্ত তিনি থানা থেকে বের হবেন না ৷ এ দিন আদালত মূল মামলায় প্রত্যেককে ব্যক্তিগত 50 হাজার টাকার বন্ডে জামিন দিয়েছে ৷ অপর একটি থানা থেকে আনা পৃথক মামলায় পুলিশ ধৃতদের হেফাজতে নিতে চাইলেও সেই মামলা গ্রহণ করেনি আদালত ৷
আরও পড়ুন: বিজেপিকে হারিয়ে তৃণমূল কি ত্রিপুরায় পরিবর্তন আনতে পারবে ?
এ দিন আদালত চত্বরে ফের হামলা চালানো হয় তৃণমূল কর্মীদের উপর ৷ চারটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ ৷ আদালতের শুনানি শেষে কুণাল ঘোষ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ফেরার পথে আবারও তাঁদের উপর হামলা চালানোর ষড়যন্ত্র করা হয়েছে ৷ তিনি বলেন, "আমাদের কাছে খবর রয়েছে যে, পাহাড়ি রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে জটলা করছে বিজেপির গুন্ডারা ৷ আমরা নামার সময় আবারও একই রকমভাবে হামলা চালানো হবে ৷ আমরা ইতিমধ্যেই পুলিশ ও আদালতকে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে ৷ এরপর যা হবে, তা গোটা দেশ দেখবে ৷" এ দিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কর্মীদের মুক্তির জন্য যে ভাবে আন্দোলন চালালেন তাকে কুর্নিশ জানিয়ে একে নজিরবিহীন নেতৃত্ব বলে বর্ণনা করেন কুণাল ঘোষ ৷
আরও পড়ুন: মিথ্যে মামলা সাজিয়েছে ত্রিপুরা পুলিশ, বিস্ফোরক অভিষেক ; নজর রাখছেন মমতা
ত্রিপুরার ঘটনার প্রতিবাদে আগামিকাল সংসদ ভবনের সামনে গান্ধিমুর্তির পাদদেশে ধর্নায় অংশ নেবে বলে জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন বলে দলের তরফে জানানো হয়েছে ৷