ইনচুড়ি (ওড়িশা), 21 অগস্ট : লবণ উৎপাদন ও তার বণ্টনকে বেশ লাভজনক ব্যবসা বলে মনে হয়েছিল ব্রিটিশদের ৷ স্বাধীনভাবে লবণ উৎপাদন ও বিক্রি করা থেকে ভারতীয়দের বিরত করতে একাধিক আইনও প্রণয়ন করে তারা ৷ তার ফলে বিশাল সংখ্যায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী প্রভাবিত হয় ৷ এই লবণের উপর কঠোর করও আরোপ করা হয়েছিল ৷ ফলে ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা অনেক উপকৃত হয় ৷
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের লাহৌর অধিবেশনে মহাত্মা গান্ধি (Mahatma Gandhi) আইন অমান্যের (Civil Disobedience Movement) ডাক দেন ৷ গান্ধিজির আহ্বানের পরই দেশের সত্যাগ্রহীরা লবণ আইন ভাঙার তোড়জোড় শুরু করে ৷ সেটাই ছিল আইন অমান্য আন্দোলনের প্রথম অধ্যায় ৷
ব্রিটিশরা লবণ আইন জারি করার পর গোটা ওড়িশা রাজ্য ব্যাপক ভাবে ধাক্কা খায় ৷ কারণ লবণ ব্যবসাই ছিল এখানকার প্রধান শিল্প ৷ এই শিল্পের বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা হয়েছিল ওড়িশার বিস্তীর্ণ উপকূল অঞ্চলের জন্য ৷ ওড়িশার ক্ষেত্রে কৃষির একমাত্র সহায়ক ছিল এই লবণ শিল্প । 1930 সালে ওড়িশায় লবণ সত্যাগ্রহ (Dandi of Odisha) শুরু হয় উৎকল প্রদেশে ৷ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি হরেকৃষ্ণ মহতাবের নেতৃত্বে ব্যাপক আকার নেয় এই আন্দোলন ৷ দেশের দ্বিতীয় ডান্ডি (Second Dandi) হিসাবে পরিচিত ইনচুড়ি (Inchudi) থেকে শুরু লবণ সত্যাগ্রহ যাত্রা ৷ ইনচুড়ির শান্তি স্তূপ এবং স্মৃতি পীঠ স্মারক আমাদের লবণ সত্যাগ্রহে এই গ্রামের ভূমিকার কথা মনে করিয়ে দেয় ৷
গান্ধিজির আহ্বানে 21 জন স্বেচ্ছাসেবককে নিয়ে গোপবন্ধু চৌধুরী (Gopabandhu Chaudhary) এবং আচার্য হরিহর দাস লবণ সত্যাগ্রহ যাত্রা শুরু করেন ৷ 1930 সালের 6 এপ্রিল তাঁরা কটকের স্বরাজ আশ্রম থেকে খালি পায়ে ইনচুড়ি পর্যন্ত ডান্ডি মার্চ করেন ৷ তিনদিন পর 9 এপ্রিল গোপবন্ধু চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয় ৷ তাঁর গ্রেফতারের পর আচার্য হরিহর দাসের নেতৃত্বে সত্যাগ্রহীরা এগিয়ে যান । 12 এপ্রিল তাঁরা বালেশ্বরে পৌঁছন ৷ পরের দিন 13 এপ্রিল ইনচুড়িতে লবণ আইন ভঙ্গ করেন তাঁরা । আইন লঙ্ঘনের জন্য বেশ কয়েকজন সত্যাগ্রহীকে গ্রেফতার করা হয় ৷ ব্রিটিশ বাহিনীর হাতে জখমও হন অনেকে । লবণ প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রয়োজনীয় বেশ কয়েক হাজার মাটির পাত্র ভেঙে দেয় পুলিশ বাহিনী ৷
মহাত্মার ডান্ডি মার্চের পরই সর্ববৃহৎ সত্যাগ্রহ যাত্রা হিসাবে ধরা হয় বালেশ্বরের ইনচুড়ির এই লবণ সত্যাগ্রহকে ৷ একে অনেক সময়ই 'দ্বিতীয় ডান্ডি' বা 'ওড়িশার ডান্ডি' হিসাবেও উল্লেখ করা হয় ৷
ইনচুড়ির যে জায়গায় লবণ আইন ভাঙা হয়েছিল, স্বাভাবিক ভাবেই ওই স্থান স্বাধীনতা সংগ্রামের সাক্ষ্য বহন করে । এখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে ৷ কিন্তু স্বাধীনতা যোদ্ধা এবং তাঁদের আন্দোলনের কথা স্মরণ করার জন্য তেমন কিছুই করা হয়নি । তার উপর আবার রয়েছে সমুদ্রের ভাঙন ৷ সমুদ্র ক্রমশ এগিয়ে আসছে ৷ সত্যাগ্রহীদের স্মৃতি আস্তে আস্তে যেতে বসেছে সমুদ্রের কোলে ৷
এছাড়াও রয়েছে অন্য সমস্যা ৷ চিংড়ি চাষের জন্য জায়গা দখল হয়ে চলেছে দিনকে দিন ৷ উপকূলবর্তী এলাকায় মাছচাষ একটি স্বাভাবিক ব্যবসা ৷ তবে এমন একটি জায়গার জবরদখল মেনে নেওয়া যায় না ৷ 2003 সালে ইনচুড়িকে পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে ৷ কিন্তু অভিযোগ, পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে ঘোষিত হলেও তার সঠিক প্রচার হয়নি ৷ তাই পর্যটকরা বলতে গেলে আসেনই না ৷
ঐতিহাসিক কারণেই ইনচুড়ি সমগ্র ভারতবাসীর কাছেই একটি আবেগের জায়গা ৷ তবে এই স্থানের প্রাপ্ত জাতীয় স্বীকৃতি এখনও জোটেনি ৷
আরও পড়ুন : Independence Special : আজও শহিদ ক্ষুদিরামের স্মৃতিতে বুঁদ মুজফ্ফরপুর