সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি একটি চাঞ্চল্যকর রায় ঘোষণা করেছে । মারাঠাদের চাকরি এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে সংরক্ষণকে তারা অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেছে । বিষয়টিকে পুরোপুরি খারিজ করে দিয়েছে । গত দুই বছর ধরে কিছু শিক্ষাবিদ এবং সমাজকর্মী এই সংরক্ষণের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছিলেন । তারা বিষয়টি নিয়ে আদালতেও পর্যন্ত যান । 2019 সালের জুন মাসে বম্বে হাই কোর্ট গাইকোয়াড কমিশনের সংরক্ষণ সম্পর্কিত সুপারিশের পক্ষে রায় শুনিয়েছিল । গাইকোয়াড কমিশনের সুপারিশ ছিল চাকরি ক্ষেত্রে 13 শতাংশ এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে 12 শতাংশ করে সংরক্ষণ করার । সেই রায়ের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন কিছু শিক্ষাবিদ এবং সমাজকর্মী । মামলা চলাকালিন সুপ্রিম কোর্ট জানতে চেয়েছিল কত প্রজন্মের জন্য এই সংরক্ষণ ? চূড়ান্ত রায় ঘোষণার সময় সুপ্রিম কোর্টের উপলব্ধি, বিষয়টি সংবিধান সম্মত নয় । একই সঙ্গে, শীর্ষ আদালত জানায়, মারাঠারা সামাজিকভাবে এবং শিক্ষাগত দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে এটা বলার মতো বা স্বীকৃতি দেওয়ার মতো ক্ষমতা রাজ্য সরকারের নেই ।
অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া এবং মারাঠাদের জন্য ঘোষিত কোটার মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে সেই বিষয়টি, রায় ঘোষণার সময় স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে আদালত । শীর্ষ আদালত এও জানিয়েছে, 1992 সালে মণ্ডল কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে দেওয়া আদালতের রায়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণির জন্য যে 50 শতাংশ সংরক্ষণের ঊর্ধ্বসীমা ধার্য হয়েছিল তা পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন অনুভূত হয়নি । একই সঙ্গে আদালত আরও কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করে । আদালত বলেছিল, এই সিদ্ধান্ত দেশে সুদুর প্রসারী পরিণতি অর্জন করবে । গাইকোয়াড কমিশনের সুপারিশ মেনে নিলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে অনগ্রসর শ্রেণির মানুষদের জন্য বিধিবদ্ধ 50 শতাংশ আসন সংরক্ষণের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে ।
সংবিধানে সংরক্ষণের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছিল ৷ এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, সামাজিক এবং আর্থিক ভাবে দুর্বল শ্রেণির মানুষের জীবনের উন্নতি সাধন । সংবিধান প্রণেতা ড.আম্বেদকর বলেছিলেন, এই সংরক্ষণ কোনও দিনই 70 শতাংশের চাকরি বা শিক্ষাক্ষেত্রে কোনও রকম বাধা সৃষ্টি করবে না । এই সংরক্ষণ নীতির কোনও রকম অপব্যবহার হবে না বলেও আশা প্রকাশ করেছিলেন তিনি । কিন্তু, বাস্তব ক্ষেত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপেই দেখা গেল । যদিও সুপ্রিম কোর্ট বার বার বলেছে, কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে দেওয়া সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণির জন্য যে 50 শতাংশ সংরক্ষণের ঊর্ধ্বসীমা ধার্য হয়েছিল তা এক্ষেত্রে ছাড়িয়ে যাবে ।
প্রসঙ্গত, সমস্ত আইনি বাধা উপেক্ষা করে তামিলনাড়ুতে 69 শতাংশ সংরক্ষণ নীতি চালু রয়েছে । গুজরাত, কর্নাটক, অন্ধ্র প্রদেশ এবং তেলাঙ্গানার মতো রাজ্য এই নীতি অনুসরণ করছে । মেঘালয় সম্প্রতি তাদের জনসংখ্যার 85.9 শতাংশ আদিবাসী বলে উল্লেখ করে 50 শতাংশ সংরক্ষণ যুক্তি সঙ্গত বলে ঘোষণা করেছে ।
সংরক্ষণের সর্বোচ্চ সীমা শিথিল করণ কি কোনও ভাবে সমাজিক বৈষম্যের দিকে চালিত করবে না ? এই প্রশ্নটি সামনে এনে রাজ্য সরকার গুলির কাছে শীর্ষ আদালতের প্রশ্ন ছিল, " এইভাবে সংরক্ষণ নীতি চালু করাই কি সমাজের দুর্বল পিছিয়ে পড়া শ্রেণির উপকারের একমাত্র পন্থা ?" নিঃসন্দেহে আদালতের এই কথাগুলি ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে ।
আরও পড়ুন : মারাঠা সংরক্ষণ আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণা সুপ্রিম কোর্টের
যদিও সরকার বিসি তালিকায় বেশ কয়েকটি জাতিকে অর্ন্তভুক্ত করেছে । পাশাপাশি এই সকল সম্প্রদায়ের উন্নতি সাধনে বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে । একটা বিষয় দিনের আলোর মতো স্পষ্ট যে, এই সকল সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য কোনও পরিকল্পনা কার্যকর করা হয়নি । সুপ্রিম কোর্টের 5 সদস্যের বেঞ্চ বলেছে, ‘‘সংসদে অনুমোদিত সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণির তালিকায় অন্য কোনও জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষমতা রাজ্যগুলির হাতে নেই । রাজ্যগুলি শুধু সেইসব শ্রেণি বা জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করতে পারে । তাদের তালিকাভুক্ত করার জন্য কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করতে পারে । জাতীয় অনগ্রসর শ্রেণি কমিশনের তদারকিতে বানানো সেই তালিকায় অন্য কোনও শ্রেণি বা জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন একমাত্র রাষ্ট্রপতিই ।’’ এরপরই আদালতের উপলব্ধি, সংরক্ষণ তখনই কোনও জাতির কাছে আর্শীবাদ হিসেবে দেখা দেবে, যখন জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সামাজিক এবং শিক্ষাক্ষেত্রে স্বনির্ভর হতে পারবে ।