হিসার (হরিয়ানা), 17 অক্টোবর : 1857 সালের সিপাহী বিদ্রোহ ৷ যে যুদ্ধে ভারতীয় সৈনিকরা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন ৷ সেটাকেই ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম যুদ্ধ হিসেবে ধরা হয় ৷ আর ওই লড়াইয়ের প্রায় একশো বছর পর স্বাধীনতা পেয়েছিল ভারত ৷ ওই যুদ্ধে হাজার হাজার ভারতীয়র প্রাণ গিয়েছিল ৷ কিন্তু সেই বিদ্রোহের জেরেই ভারতে কোম্পানির শাসন শেষ হয়েছিল ৷ যদিও বছর খানেকের মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশে শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ রাজের শাসন ৷
আরও পড়ুন : Independence Special : বয়স ছিল মাত্র 13, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন কাটিহারের ধ্রুব কুণ্ডু
ভারতীয় সৈনিকরা যখন ব্রিটিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেন, তখন ক্রমশ বিভিন্ন প্রদেশে কোম্পানির শাসন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে শুরু করে ৷ সেই সময় কার্যত স্বাধীন হয়ে গিয়েছিল ভারতের বেশ কিছু অংশ ৷ কিন্তু তার পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নতুন করে সংঘবদ্ধ হয় ৷ আর বিদ্রোহীদের দমন করতে শুরু করে ৷
দেশের যে অংশগুলি ওই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য স্বাধীনতা পেয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম হরিয়ানার হিসার ৷ 1857 সালের 29 মে বিদ্রোহীরা হিসার দখল করে নেন ৷ আর ওই জায়গাকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেন ৷ কিন্তু তাঁদের লড়াই তার পরও চলতে থাকে ৷ হিসারে যে সমস্ত ব্রিটিশ আধিকারিকরা ছিলেন, তাঁদের হয় মেরে ফেলা হয় অথবা বন্দি করা হয় ৷ কিন্তু একজন ব্রিটিশ আধিকারিক সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হন ৷ তিনি শীর্ষ আধিকারিকদের পুরো ঘটনার বিষয়ে জানান ৷
আরও পড়ুন : Independence Special : কেরালার পাজহাসসি রাজা সংগঠিত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তির-ধনুক নিয়ে লড়াই করেছিলেন
তখন ব্রিটিশ সেনা নতুন করে নিজেদের সংগঠিত করে এবং ওই বিদ্রোহীদের দমনের পরিকল্পনা শুরু করে ৷ সেই সময় বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন আজম খান ৷ যিনি শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের পরিবারের সদস্য ছিলেন ৷ বিদ্রোহীদের কাছে ভারতীয় অস্ত্র ছিল ৷ কিন্তু ব্রিটিশ সৈন্য কামান-বন্দুক নিয়ে লড়াইয়ে নামে ৷ তাছাড়া লড়াইয়ের সময় ব্রিটিশ সৈন্যরা দুর্গের ভিতরে ছিলেন ৷ আর বিদ্রোহীরা ছিলেন বাইরে ৷
ফলে বিদ্রোহ বেশি সময় টেকেনি ৷ বিশেষ করে বিদ্রোহীদের পুরনো অস্ত্র ব্রিটিশের আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি ৷ বহু বিদ্রোহী শহিদ হন ৷ সংখ্যাটা ছিল প্রায় 438 ৷ হিসারের বিভিন্ন জায়গায় 235 জন শহিদের দেহ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল ৷ বাকিদের খোঁজই পাওয়া যায়নি ৷
আরও পড়ুন : Independence Special : জালিয়ানওয়ালা বাগের মতোই নৃশংস ছিল কেরালার ওয়াগন ট্র্যাজেডি
কিন্তু এর থেকেও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হওয়া তখনও বাকি ছিল ৷ যে সমস্ত ভারতীয় বন্দি ছিলেন, তাঁদের হত্যা করার নির্দেশ দেয় ব্রিটিশ বাহিনী ৷ হিসারে একটা রাস্তা আছে, যার নাম লাল সড়ক৷ সেই রাস্তায় 123 জন বিদ্রোহীকে রোড রোলার দিয়ে পিষে মারা হয় ৷ সময়টা যদিও খুবই কম ছিল ৷ কিন্তু 1987 সালের 30 মে থেকে 19 অগস্টের মধ্যবর্তী ঘটনাক্রমের জন্য হিসারকে মনে রাখা হয় ৷
এই বিদ্রোহী নায়করা হয়ত স্বাধীনতার ইতিহাসে সঠিক জায়গা পাননি, কিন্তু তাঁদের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবদানের জন্য স্মরণ করা হয় এখনও ৷ 1857 সালের ওই বিদ্রোহ ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাসে একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে যুক্ত হয়ে আছে ৷ ভারতীয় সমাজের বিভিন্ন স্তরকে একটাই উদ্দেশ্যের জন্য একজোট করেছিল এই বিদ্রোহ ৷
আরও পড়ুন : Independence Special : ব্রিটিশদের কঠিন লড়াইয়ে মুখে ফেলেছিলেন আথারগড়ের রাজা এবং জমিদাররা
সিপাহী বিদ্রোহ তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি ৷ কিন্তু ভারতবাসীর মধ্যে একটা জাতীয়তাবোধ তৈরি করতে পেরেছিল ৷ যার সুফলই মিলেছিল 1947 সালের 15 অগস্ট ৷ ব্রিটিশের পরাধীনতা মুছে স্বাধীন হয় ভারত ৷