ETV Bharat / bharat

প্রথম ডোজ নিয়েও তো রক্ষা পেলাম না... ওদের জন্য মনটা বড্ড ক্লান্ত - Taslima Nasrin positive for covid

বিশ্ব জুড়ে করোনার প্রথম তাণ্ডব শুরু হওয়ার পর থেকেই নিজেকে গৃহবন্দি করেছিলেন ৷ ঘরে থেকেও শেষ রক্ষা হয়নি ৷ করোনার ছোবল থেকে রক্ষা পাননি ৷ কী ভাবে কাটালেন এই সময়টা ? এখন কেমন আছেন দ্বিখণ্ডিত-র লেখিকা ? ইটিভি ভারতের জন্য কলম ধরলেন তসলিমা নাসরিন ৷

প্রথম ডোজ নেওয়ার পরও করোনা আক্রান্ত হন তসলিমা ৷
প্রথম ডোজ নেওয়ার পরও করোনা আক্রান্ত হন তসলিমা ৷
author img

By

Published : May 10, 2021, 8:28 PM IST

Updated : May 10, 2021, 9:06 PM IST

না না করেও দেড়টা বছর ! রাস্তার ধুলো, মাটির গন্ধ সে ভাবে গায়ে লাগেনি ৷ কিন্তু, এপ্রিল মাসের ওই দিনটা যখন জানতে পারলাম আমিও পজিটিভ, কী করব, কী ভাবব, কী বলব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না ৷ চোখ দুটো বুজে আসছিল ৷ ভয়ে-আতঙ্কে গলা শুকিয়ে আসছিল ৷

মনে তখন একটাই প্রশ্ন...

কী ভাবে...

যাই হোক, মনটাকে শক্ত করলাম ৷ এক নতুন লড়াইয়ের জন্য মনে মনে শপথ নিলাম ৷ নিজেকে বোঝালাম, আমার গোটা জীবনটাই তো সংগ্রামের ৷ লড়াইয়ের ৷ এবার না হয় আর একটা লড়াই ৷

শুরু করলাম করোনার বিরুদ্ধে লড়াই ৷ করোনা নিয়ে ঘর করা ৷ নিজেকে আরও বেশি করে গৃহবন্দি করে ফেললাম ৷ প্রথম দিকে বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারছিলাম না ৷ খেতে পারছিলাম না ৷ খিদে ছিল না ৷ সঙ্গে হাজারো ওষুধের চাপ ৷ আট-দশ দিন এ ভাবেই কেটে গেল ৷ তার পর একটু একটু করে ভাল হতে শুরু করলাম ৷ যেন বাঁচার আলো নিয়ে ওঠা সূর্যটাকে আবারও দেখতে শুরু করলাম ৷

ছোট থেকেই বই পড়তে বড্ড ভালবাসি ৷ এই করোনা যুদ্ধে বই-ই হয়ে উঠেছিল আমার এক মাত্র সঙ্গী-সখা-বন্ধু ৷ এই সময়টার জন্য বেছে নিয়েছিলাম লেখা-পড়া আর ঘরের কাজকে ৷ আর বেড়ালগুলোর দেখাশোনা ছিলই ৷

একটা কথা বলতেই হবে, কোভিড আক্রান্ত হয়ে আমার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা ভয়ঙ্কর ভাবে হয়নি ৷ সব থেকে বড় কথা অক্সিজেনের দরকার পড়েনি ৷ যদিও ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম ৷ আমার পরিচিত ছিলেন, যাঁরা আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রয়োজনে ব্যবস্থা করে দেবেন ৷ তবে অক্সিজেনের দরকার পড়েনি ৷ আর হ্যাঁ, এখন আর কোনও সমস্যা নেই ৷

এপ্রিলের পনেরো তারিখ থেকে আমার উপসর্গগুলো লক্ষ্য করা গিয়েছিল ৷ দেড় বছর নিজেকে ঘরে বন্দি করে রাখার পরও এমন হল ৷ খারাপ লেগেছিল ৷ সাবধানেই ছিলাম ৷ কারণ আমার তো ডায়াবেটিস আছে, হাইপারটেনশন আছে... এজন্য বাড়তি সতর্ক ছিলাম ৷ এখন ভালই আছি ৷ পড়াশোনা, ঘরের কাজ আর বেড়ালদের নিয়ে সময় কাটছে ৷

আস্তে আস্তে সুস্থ হয়েছি ৷ ভাল আছি ৷ অবশ্যই শারীরিক ভাবে ৷ মানসিক ভাবে খুবই ভারাক্রান্ত ৷ নিজের জন্য নয় ৷ আমার দেশ, আমার পরিচিত বিশ্ব-জনের কথা ভেবে ৷ তাঁদের বিপদের কথা ভেবে ৷ কী চলছে গোটা বিশ্ব জুড়ে ৷ লাখো লাখো মানুষ মারা যাচ্ছেন ৷ ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও তো কেউ নিজেকে নিরাপদ বলে দাবি করতে পারছেন না ৷ এই তো শুনলাম, এক পরিচিত চিকিৎসক দুটো ডোজ নেওয়ার পরও আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ৷ ডক্টর রাওয়াতের কথাটা শোনার পর থেকেই মনটা ভারাক্রান্ত ৷ আমিও তো একটি ডোজ নিয়েছিলাম ৷ তা-ও তো রক্ষা পেলাম না ৷ 9 মার্চ প্রথম ডোজ নিয়েছিলাম ৷ কিন্তু, কোথায় কী...

ভয়ঙ্কর একটা সময় চলছে ৷ দিল্লি তো শ্মশান হয়ে গিয়েছে ৷ কত লোক মারা যাচ্ছেন ৷ শ্মশানে জায়গা হচ্ছে না... পার্কিং প্লেস, পার্ক সব জায়গায় চিতা জ্বলছে ৷ হাসপাতালে বেড নেই ৷ অক্সিজেনের অভাব ৷ মানুষ ফুটপাতে বসে অক্সিজেন নিতে বাধ্য হচ্ছেন ৷ ফুটপাতে শুয়ে, অক্সিজেনের জন্য কাতরাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ ৷ এই দৃশ্যগুলো দেখে আমার নিজের কষ্টটা কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে ৷ সেই মানুষ গুলোর জন্য কষ্ট পাচ্ছি ৷ ওদের জন্য কাঁদছি...

আরও পড়ুন: একবছর ঘরের বাইরে পা না রেখেও করোনায় আক্রান্ত তসলিমা

না না করেও দেড়টা বছর ! রাস্তার ধুলো, মাটির গন্ধ সে ভাবে গায়ে লাগেনি ৷ কিন্তু, এপ্রিল মাসের ওই দিনটা যখন জানতে পারলাম আমিও পজিটিভ, কী করব, কী ভাবব, কী বলব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না ৷ চোখ দুটো বুজে আসছিল ৷ ভয়ে-আতঙ্কে গলা শুকিয়ে আসছিল ৷

মনে তখন একটাই প্রশ্ন...

কী ভাবে...

যাই হোক, মনটাকে শক্ত করলাম ৷ এক নতুন লড়াইয়ের জন্য মনে মনে শপথ নিলাম ৷ নিজেকে বোঝালাম, আমার গোটা জীবনটাই তো সংগ্রামের ৷ লড়াইয়ের ৷ এবার না হয় আর একটা লড়াই ৷

শুরু করলাম করোনার বিরুদ্ধে লড়াই ৷ করোনা নিয়ে ঘর করা ৷ নিজেকে আরও বেশি করে গৃহবন্দি করে ফেললাম ৷ প্রথম দিকে বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারছিলাম না ৷ খেতে পারছিলাম না ৷ খিদে ছিল না ৷ সঙ্গে হাজারো ওষুধের চাপ ৷ আট-দশ দিন এ ভাবেই কেটে গেল ৷ তার পর একটু একটু করে ভাল হতে শুরু করলাম ৷ যেন বাঁচার আলো নিয়ে ওঠা সূর্যটাকে আবারও দেখতে শুরু করলাম ৷

ছোট থেকেই বই পড়তে বড্ড ভালবাসি ৷ এই করোনা যুদ্ধে বই-ই হয়ে উঠেছিল আমার এক মাত্র সঙ্গী-সখা-বন্ধু ৷ এই সময়টার জন্য বেছে নিয়েছিলাম লেখা-পড়া আর ঘরের কাজকে ৷ আর বেড়ালগুলোর দেখাশোনা ছিলই ৷

একটা কথা বলতেই হবে, কোভিড আক্রান্ত হয়ে আমার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা ভয়ঙ্কর ভাবে হয়নি ৷ সব থেকে বড় কথা অক্সিজেনের দরকার পড়েনি ৷ যদিও ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম ৷ আমার পরিচিত ছিলেন, যাঁরা আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রয়োজনে ব্যবস্থা করে দেবেন ৷ তবে অক্সিজেনের দরকার পড়েনি ৷ আর হ্যাঁ, এখন আর কোনও সমস্যা নেই ৷

এপ্রিলের পনেরো তারিখ থেকে আমার উপসর্গগুলো লক্ষ্য করা গিয়েছিল ৷ দেড় বছর নিজেকে ঘরে বন্দি করে রাখার পরও এমন হল ৷ খারাপ লেগেছিল ৷ সাবধানেই ছিলাম ৷ কারণ আমার তো ডায়াবেটিস আছে, হাইপারটেনশন আছে... এজন্য বাড়তি সতর্ক ছিলাম ৷ এখন ভালই আছি ৷ পড়াশোনা, ঘরের কাজ আর বেড়ালদের নিয়ে সময় কাটছে ৷

আস্তে আস্তে সুস্থ হয়েছি ৷ ভাল আছি ৷ অবশ্যই শারীরিক ভাবে ৷ মানসিক ভাবে খুবই ভারাক্রান্ত ৷ নিজের জন্য নয় ৷ আমার দেশ, আমার পরিচিত বিশ্ব-জনের কথা ভেবে ৷ তাঁদের বিপদের কথা ভেবে ৷ কী চলছে গোটা বিশ্ব জুড়ে ৷ লাখো লাখো মানুষ মারা যাচ্ছেন ৷ ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও তো কেউ নিজেকে নিরাপদ বলে দাবি করতে পারছেন না ৷ এই তো শুনলাম, এক পরিচিত চিকিৎসক দুটো ডোজ নেওয়ার পরও আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ৷ ডক্টর রাওয়াতের কথাটা শোনার পর থেকেই মনটা ভারাক্রান্ত ৷ আমিও তো একটি ডোজ নিয়েছিলাম ৷ তা-ও তো রক্ষা পেলাম না ৷ 9 মার্চ প্রথম ডোজ নিয়েছিলাম ৷ কিন্তু, কোথায় কী...

ভয়ঙ্কর একটা সময় চলছে ৷ দিল্লি তো শ্মশান হয়ে গিয়েছে ৷ কত লোক মারা যাচ্ছেন ৷ শ্মশানে জায়গা হচ্ছে না... পার্কিং প্লেস, পার্ক সব জায়গায় চিতা জ্বলছে ৷ হাসপাতালে বেড নেই ৷ অক্সিজেনের অভাব ৷ মানুষ ফুটপাতে বসে অক্সিজেন নিতে বাধ্য হচ্ছেন ৷ ফুটপাতে শুয়ে, অক্সিজেনের জন্য কাতরাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ ৷ এই দৃশ্যগুলো দেখে আমার নিজের কষ্টটা কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে ৷ সেই মানুষ গুলোর জন্য কষ্ট পাচ্ছি ৷ ওদের জন্য কাঁদছি...

আরও পড়ুন: একবছর ঘরের বাইরে পা না রেখেও করোনায় আক্রান্ত তসলিমা

Last Updated : May 10, 2021, 9:06 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.