নয়াদিল্লি, 18 সেপ্টেম্বর: মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে ও তাঁর সঙ্গে থাকা শিবসেনা বিধায়কদের পদ খারিজ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ওই রাজ্য়ের বিধানসভার অধ্য়ক্ষকে এক সপ্তাহ সময় দিল সুপ্রিম কোর্ট ৷ সোমবার শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে মহারাষ্ট্র বিধানসভার অধ্যক্ষকে এই বিষয়টিকে তালিকাভুক্ত করতে হবে ৷ আর এই নিয়ে কবে শুনানি তিনি করবেন, তার তারিখ জানাতে হবে ৷
একনাথ শিন্ডে যখন অনুগামীদের নিয়ে বিদ্রোহ করেন এবং বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেন, সেই সময় তিনি-সহ শিবসেনার 16 জন বিধায়কের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনে পদ খারিজের আবেদন জমা পড়ে ৷ এই নিয়ে মামলাও হয় সুপ্রিম কোর্টে ৷ মাসচারেক আগে শীর্ষ আদালত মহারাষ্ট্র বিধানসভার অধ্যক্ষ রাহুল নারওয়েকরকে এই সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিল ৷ কিন্তু চার মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও এই নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি ৷ তাই সোমবার শীর্ষ আদালত রাহুল নারওয়েকরকে সুপ্রিম কোর্টের মর্যাদা মেনে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে ৷
এ দিন দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি জেবি পার্দিওয়ালা ও মনোজ মিশ্রর বেঞ্চে এই নিয়ে শুনানি হয় ৷ সেখানে মহারাষ্ট্র বিধানসভার অধ্যক্ষকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বিচারপতি বলেছেন, "আগামী সপ্তাহে তাঁকে বিষয়টি তালিকাভুক্ত করতে দিন । এবং দুই সপ্তাহ পর কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা আমাদের জানান... ।" এই বিষয়টি অনন্তকাল ধরে ফেলে রাখা যাবে না বলেও সুপ্রিম কোর্ট এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছে ৷
শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে)-র হয়ে এ দিন আদালতে সওয়াল করেন সিনিয়র আইনজীবী কপিল সিবাল ৷ তিনি আদালতে জানান যে গত 15 ও 23 মে এবং 2 জুন তিনি এই মামলায় মক্কেলের হয়ে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন ৷ কিন্তু ওই তিনদিন অধ্যক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷ তার পর জুলাই মাসে তাঁর পক্ষ থেকে একটি পিটিশন দাখিল করা হয় ৷ শীর্ষ আদালত গত 14 জুলাই নোটিশ জারি করে ৷ আর 14 সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করে ৷ সিবালের আরও বক্তব্য, তাঁর মক্কেলেরে সংযুক্তি (অ্যানেক্সার) ফাইল করার কথা নয় ৷ এটাও অধ্যক্ষকে দাখিল করতে হবে ৷ কিন্তু তিনি তা করেননি ৷ তাই তিনি আদালতের কাছে এই নিয়ে আদেশ দেওয়ার আবেদন জানান ৷
আরও পড়ুন: 'বিদ্রোহী শিবসেনা বিধায়কদের ভাগ্য নির্ধারণ করুন অধ্যক্ষ', আর্জি উদ্ধরের
সিবাল মহারাষ্ট্রের শিন্ডে সরকারকে অবৈধ বলেও উল্লেখ করেন ৷ যদিও তাঁর এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেন সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা ৷ তিনি অধ্যক্ষেও শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন ৷ একজন সাংবিধানিক কর্তাকে নিয়ে সিবাল উপহাস করছেন বলেও অভিযোগ করেন তুষার মেহতা ৷ তাঁর আরও দাবি, মাত্র দু’দিন আগে তাঁকে দেড় হাজার পাতার কিছু নথি দেওয়া হয় ৷ তিনি বলেন, "অনুগ্রহ করে উপহাসের কথা ভুলে যান...দয়া করে চার্টটি দেখুন । আমি কোনও রাজনীতিতে নেই । আমি এখানে শুধুমাত্র বাস্তবিক প্রশ্ন এবং আইনি প্রশ্নের উত্তর দিতে এসেছি ৷"
প্রধান বিচারপতি মৌখিকভাবে মন্তব্য করেন যে মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি ও মেহতাকে বলেন যে অধ্যক্ষকে বিষয়টির সিদ্ধান্ত নিতে হবে । 11 মে আদালতের রায়ের পর অধ্যক্ষ কী করেছেন, তা জানতে চান প্রধান বিচারপতি । তুষার মেহতা জানান, একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না অধ্যক্ষ একজন সাংবিধানিক প্রতিনিধি । সিবাল দাবি করেন, তিনি একজন ট্রাইব্যুনাল । তুষার মেহতা পালটা বলেন, ‘‘হয়তো ট্রাইব্যুনালের মতো কাজ করছে, কিন্তু আমরা অন্য সাংবিধানিক সংস্থার সামনে তাঁকে উপহাস করতে পারি না ।’’
উল্লেখ্য, 14 জুলাই শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে)-র বিধায়ক সুনীল প্রভুর দায়ের করা একটি আবেদনে মহারাষ্ট্র বিধানসভার অধ্যক্ষকে নোটিশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট ৷ একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বে বিদ্রোহী শিবসেনা বিধায়কদের বিরুদ্ধে পদ খারিজ নিয়ে আবেদনের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হোক, এমনটাই জানিয়েছিল শীর্ষ আদালত ৷ এর আগে গত 11 মে সুপ্রিম কোর্ট মহারাষ্ট্র বিধানসভার অধ্যক্ষ রাহুল নারওয়েকারকে একনাথ শিন্ডে-সহ 16 জন শিবসেনা বিধায়কের ভাগ্য নির্ধারণ করতে বলেছিল, যারা দল বিরোধী কার্যকলাপের জন্য অভিযুক্ত ।
আরও পড়ুন: উদ্ধব ও শিন্ডের মামলা বৃহত্তর সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠাল সুপ্রিম কোর্ট