নয়াদিল্লি, 7 জানুয়ারি: বিলকিস বানো গণধর্ষণ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার মামলায় সময়ের আগেই 11 জন দোষীকে মুক্তির নির্দেশ দেয় গুজরাত ও কেন্দ্রীয় সরকার ৷ একে চ্যালেঞ্জ করে পালটা একগুচ্ছ মামলা দায়ের হয় সুপ্রিম কোর্টে ৷ মামলাকারীদের মধ্যে অন্যতম বিলকিস বানো ৷ আগামিকাল সেই মামলাগুলির রায় ঘোষণা করবে দেশের শীর্ষ আদালত ৷ 2002 সালে গুজরাত দাঙ্গার সময় বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ করা হয় ৷ তাঁর পরিবারের 7 জন সদস্যকে হত্যা করা হয় ৷ তাদের মধ্যে নির্যাতিতার এক শিশু সন্তানও ছিল ৷
2022 সালের 15 অগস্ট গুজরাত সরকার দোষীদের মুক্তির নীতি অনুযায়ী ওই 11জন দোষীকে ছাড়পত্র দেয় ৷ যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ওই 11 জন ইতিমধ্যে 15 বছরের কারাবাস কাটিয়েছে ৷ তাই দোষীদের মুক্তির নীতি মেনে তাদের রেহাই দেওয়া হয় ৷ এরপর এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বহু মামলা দায়ের হয় ৷
সেই মামলাগুলির শুনানির পর 2023 সালের অক্টোবরে বিচারপতি বিভি নাগারত্ন এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার ডিভিশন বেঞ্চ চূড়ান্ত রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছিল ৷ সেই সময় বেঞ্চ জানিয়েছিল, "আমরা গুজরাত সরকারের পক্ষের আইনজীবীকে জানিয়েছিলাম, এই মামলার আসল রেকর্ডগুলি আদালতে জমা দিতে হবে ৷ তবে আসল রেকর্ডগুলি গুজরাতি ভাষায় লেখা আছে ৷ তাই ওই রেকর্ডগুলির ইংরেজি অনুবাদ আদালতে জমা দিতে হবে ৷ আর সঙ্গে আসল রেকর্ডগুলিও ৷ কেন্দ্রীয় সরকারকেও একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷"
মামলাগুলির শুনানি চলাকালীন এক মামলাকারীর আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং আদালতে সওয়াল-জবাবে জানান, মুক্তির নীতি এবং দোষীদের রেহাই দেওয়া সংক্রান্ত অন্য নীতিগুলি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা উচিত ৷ এরপর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীদের কাছে জানতে চান, কীভাবে দোষীদের অধিকার এবং নীতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা যায় ৷ আর এই বিচারটি করার সময় দোষীর অপরাধের প্রকৃতি কেমন ছিল, তাও মাথায় রাখতে হবে ৷ বেঞ্চ বলে, "এই মামলাটি দু'টি চরম দিক রয়েছে ৷ যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, আইনে মুক্তির নীতিটি ঠিক নয়, তাহলে কীভাবে অপরাধ আর সংস্কারের অধিকারের মধ্যে ভারসাম্য রাখা যাবে ? তাহলে কি আপনারা বলছেন যে, কোনও অপরাধীর এই অধিকার নেই ?"
এক আবেদনকারীর আইনজীবী জোর দিয়ে জানান, সময়ের আগে দোষীদের মুক্তি দেওয়ার নীতি কার্যকর করতে গিয়ে সরকারের যদি কোনও ত্রুটি ধরা পড়ে, তাহলে দোষীকে জেলেই ফিরে যেতে হবে ৷ আরেক মামলাকারীর আইনজীবী আদালতে জানান, বিলকিস বানোর দোষীদের ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার স্বেচ্ছাচার, পক্ষপাতদুষ্টতা করেছে ৷ সওয়াল-জবাবে আইনজীবীরা জানান, 11 জন দোষীকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বেআইনি ৷ সংস্কারের নামে যা ইচ্ছে তাই করা যায় না ৷ এদিকে গুজরাত সরকার সময়ের আগে দোষীদের মুক্তি দেওয়ার পক্ষে জানায়, 2022 সালের মে মাসে একটি মামলায় শীর্ষ আদালত এরকম রায় দিয়েছে ৷ সেই রায়ের ভিত্তিতেই দোষীদের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷
আরও পড়ুন: