নয়াদিল্লি, 11 অক্টোবর: 26 সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা বিবাহিতার গর্ভপাতে অনুমতি দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে বুধবার দ্বিমত পোষণ করলেন সুপ্রিম কোর্টের দুই মহিলা বিচারক ৷ সে জন্য এই বিষয়ের মীমাংসা করতে মামলাটি বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ যদিও এর আগে, ওই অন্তঃসত্ত্বার গর্ভপাতে অনুমতি দিয়েছিল শীর্ষ আদালত ৷
বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিভি নগরথনার সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চ বলেছে যে, "আমাদের মধ্যে একজন (বিচারপতি কোহলি) গর্ভপাত উচিত নয় বলে মত দিয়েছেন, যেখানে বেঞ্চের অন্য বিচারপতি তাঁর মতের সঙ্গে সহমত নন । বিষয়টির সিদ্ধান্ত নিতে একটি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠনের জন্য মামলাটি এ বার ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের সামনে রাখা হবে ।"
এই মামলার নির্দেশের নিজের অংশটি জানিয়ে বিচারপতি নগরথনা বলেন, "আমি সম্মান জানিয়ে বলছি, অপর বিচারপতির সঙ্গে আমি একমত নই...আবেদনকারী সর্বত্র বলেছেন যে তিনি গর্ভধারণ করতে চান না ৷" বিচারপতি নগরথনা বলেন যে, ভ্রূণের কার্যকারিতা রয়েছে কি না তা বিবেচনা করার প্রশ্ন এটা নয়, এ ক্ষেত্রে আবেদনকারীর আগ্রহ ও ইচ্ছাকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে, যিনি তাঁর মানসিক অবস্থা এবং অসুস্থতার কথা বারবার জানিয়েছেন ৷
দিনের শুরুতে শুনানির সময়, শীর্ষ আদালত একটি 26 সপ্তাহের গর্ভবতী বিবাহিতার ভ্রূণের বেঁচে থাকার জোরালো সম্ভাবনার উপর একটি সাম্প্রতিক মেডিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ৷ ওই মহিলাকে আগে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল । শীর্ষ আদালত বলে, কোন আদালত বলবে "ভ্রূণের হৃদস্পন্দন বন্ধ করুন"। 9 অক্টোবর সর্বোচ্চ আদালত দুই সন্তানের জননী ওই মহিলাকে গর্ভপাতের অনুমতি দেয় ৷ তিনি বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন এবং মানসিক, আর্থিক ও মানসিকভাবে তৃতীয় সন্তান লালন-পালনের অবস্থায় নেই বলে জানিয়েছিলেন ৷ এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কেন্দ্রের দায়ের করা মামলার শুনানি হচ্ছিল শীর্ষ আদালতে ৷
আরও পড়ুন: 26 সপ্তাহের বিবাহিতাকে গর্ভপাতে অনুমতি ? দ্বিধাবিভক্ত সুপ্রিম কোর্ট, মামলা যাবে বৃহত্তর বেঞ্চে !
বেঞ্চ কেন্দ্রের প্রতিনিধিত্বকারী অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্য ভাটিকে জিজ্ঞাসা করে, "যদি ডাক্তার আগের রিপোর্টের দুই দিনের কম সময়ে এতটা স্পষ্টবাদী হতে পারে, কেন (আগের) রিপোর্টটি আরও বিস্তৃত এবং আরও স্পষ্ট ছিলেন না? কেন তাঁরা আগের রিপোর্টে অস্পষ্ট ছিলেন ?" বেঞ্চ বলেছে যে দিল্লি এইমসের ডাক্তারদের একটি দল ওই মহিলাকে পরীক্ষা করার পর তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছিল ৷ তা বিবেচনা করেই আগের আদেশটি দিয়েছিল শীর্ষ আদালত ৷
শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ বলছে যে, আদালতে একটি 'অস্পষ্ট রিপোর্ট' দেওয়ার পর বলা হয়েছে যে, মহিলার সমস্যা আছে...নতুন রিপোর্ট এখন বলছে, ভ্রূণের বেঁচে থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে । বিচারপতি কোহলির কথায়, "কোন আদালত বলবে, প্রাণ আছে এমন ভ্রূণের হৃদস্পন্দন বন্ধ করো ? আমরা ভাবছি কোন আদালত এটা করবে । নিজের কথা বলছি, আমি করব না ৷"
বেঞ্চ স্পষ্ট করে বলেছে যে, মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের সামনে কেন্দ্র যেভাবে বিষয়টি উল্লেখ করেছিল তা আদালত ভালো ভাবে নেয়নি । বিচারপতি নগরথনা বলেন, যদি কেন্দ্র সরকার এটি করা শুরু করে, তাহলে আগামী দিনে একটি বেসরকারি দলও এটি করবে । তাঁর কথায়, "সুপ্রিম কোর্টের প্রতিটি বেঞ্চই সুপ্রিম কোর্ট । আমরা আলাদা বেঞ্চে বসলেও আদালত একটাই । নিজের জন্য বলতে গেলে, আমি কেন্দ্রকে এ বিষয়ে প্রশংসা করব না ৷"
একদিন আগেই সুপ্রিম কোর্টের অপর বেঞ্চ ওই মহিলার গর্ভপাতের যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা কার্যকরী করা কিছুটা পিছিয়ে দেওয়ার জন্য মঙ্গলবার দিল্লি এইমসকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ সুপ্রিম কোর্টকে বিচারপতি কোহলির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের দেওয়া আদেশ প্রত্যাহার করার অনুরোধ করবেন ভাটি । তিনি বলেন, মেডিক্যাল বোর্ড বলেছে যে, ভ্রূণের জন্মের সম্ভাবনা রয়েছে এবং গর্ভপাত করলে তাদের ভ্রূণহত্যা করতে হবে । ভারতের প্রধান বিচারপতি (সিজেআই) ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে একটি বেঞ্চ ভাটিকে আদেশ প্রত্যাহার করার জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে আবেদন জানাতে বলেন ৷ সিজেআই-এর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলেছে, "যে বেঞ্চ আদেশ দিয়েছে আমরা তার সামনে রাখব । এইমসের চিকিত্সকরা খুব গুরুতর দ্বিধায় রয়েছেন ৷ অনুগ্রহ করে এইমস-কে আপাতত এর বাস্তবায়ন স্থগিত রাখতে বলুন ৷"