প্রয়াগরাজ, 18 এপ্রিল: 1962 সালের 10 অগস্ট জন্ম আতিক আহমেদের । মৃত্যু 2023 সালের 15 এপ্রিল ৷ তাঁকে ও তাঁর ভাই আশরাফকে মেডিক্যাল চেকআপের জন্য সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকের ছদ্মবেশে আসা দুর্বৃত্তদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান দুজনেই ৷ 61 বছর বয়সি আতিক আহমেদ 102টি মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন । মাত্র 17 বছর বয়সে তাঁর প্রথম খুন । মাফিয়া থেকে রাজনীতিবিদে পরিণত হওয়া আতিক আহমেদের বিরুদ্ধে সর্বশেষ মামলাটি হয় গত মার্চ মাসে ।
বন্দুকধারীরা আতিক-আশরাফকে তাঁদের স্টাইলেই হত্যা করেছে: আতিক আহমেদ ও আশরাফের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বহু মানুষকে খুন করার অভিযোগ রয়েছে । আতিক আহমেদ ও আশরাফ যেভাবে বন্দুকধারীদের দিয়ে অন্য লোকজনকে খুন করাতেন বলে অভিযোগ, ঠিক সেইভাবেই গত শনিবার রাতে পুলিশ হেফাজতে থাকা সত্ত্বেও তিন শুটার মাফিয়া ভাইদের গুলি করে হত্যা করে । আতিক ও আশরাফকে বন্দুকধারীরা পূর্বপরিকল্পিত পথে খুন করে । 10 সেকেন্ডে সব শেষ ৷ সঙ্গে সঙ্গে তিনজনই আত্মসমর্পণ করে ।
মাফিয়া আতিক ছিলেন দশম ফেল: আতিক আহমেদ চকিয়া এলাকার বাসিন্দা । ছেলেবেলা থেকেই তাঁর লড়াকু মানসিকতা ৷ তাঁর পড়তে ভালো লাগত না । আতিক আহমেদ দশম শ্রেণির পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি ৷ এরপর তিনি পড়াশোনা ছেড়ে দেন । যে বয়সে শিশুরা খেলাধুলা করে, সেই বয়সে অর্থাৎ 17 বছর বয়সে আতিক অপরাধের জগতে পা রাখেন এবং শুরুতেই 1979 সালে প্রথম খুন করেন তিনি ৷ এরপর অপরাধ জগতেই দুর্দমনীয় গতিতে এগিয়ে যেতে থাকেন আতিক ৷ তাঁর বিরুদ্ধে 102টি মামলা দায়ের করা হয় ।
রাজনীতির জগতে পা রাখা: অপরাধ জগতে প্রভাব বিস্তারের পর রাজনীতির জগতে পা রাখেন আতিক আহমেদ । অপরাধ জগতের মতোই রাজনীতির আঙিনাতেও সাফল্য পেতে থাকেন আতিক আহমেদ ৷ অপরাধ ও রাজনীতিতে সাফল্যের পর আতিক আহমেদ পূর্বাঞ্চল-সহ উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি ঠিকাদারি, খনির পাশাপাশি রিয়েল এস্টেটের ব্যবসায় নামেন । যার কারণে আতিকের ইচ্ছা ছাড়া এ সব ব্যবসায় কেউ কাজ করতে পারেনি ।
পুলিশ যখন প্রথম আতিকের ফাইল খুলল: 1990 সাল থেকে আতিক আহমেদ তোলাবাজিও শুরু করেন । গত 30 বছর ধরে, প্রয়াগরাজ এবং আশপাশের জেলার প্রতিটি বড় ব্যবসায়ীকে তাঁদের লাভের অংশের থেকে কিছু অর্থ আতিক আহমেদকে দিতে হত। জানা যায়, 30 বছর আগে 1992 সালে পুলিশ প্রথমবারের মতো আতিক আহমেদের ফাইল খোলে । দেখা যায় যে, উত্তরপ্রদেশের নানা খুন, অপহরণ, তোলাবাজি-সহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে আতিকের বিরুদ্ধে । বাহুবলী আতিকের বিরুদ্ধে সর্বাধিক সংখ্যক মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে শুধুমাত্র প্রয়াগরাজ জেলায় ।
2005 সালে রাজু পালের হত্যার পর আতিক কোনও নির্বাচনে জিততে পারেননি: 2005 সালে যখন বিএসপি বিধায়ক রাজু পাল খুন হন, তখন আতিক আহমেদ প্রয়াগরাজের ফুলপুর লোকসভা আসন থেকে সাংসদ ছিলেন । এরপরের মানহানির কারণে, 2007 সালের বিধানসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি তাঁকে নির্বাচনে লড়ার টিকিট দেয়নি । এর সঙ্গে তাঁকে দল থেকেও বহিষ্কার করা হয় । এই সময়েই আতিক আহমেদ লোকসভা থেকে বিধানসভা নির্বাচনে জেতার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কোনও নির্বাচনেই তিনি সাফল্য পাননি ।
বিএসপি বিধায়ক রাজু পাল হত্যার পর, আতিক আহমেদ রাজনীতিতে ব্যর্থতার সম্মুখীন হন এবং 2017 সালে জেলে যাওয়ার পর তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার প্রায় শেষ হতে শুরু করে । বিষয়টি বুঝতে পেরেই আতিক আহমেদ তাঁর স্ত্রী শায়েস্তা পারভিনকে এআইএমআইএম-এ যোগ দেওয়ান ৷ আতিক আহমেদের সেটিং এর মাধ্যমে 5 জানুয়ার শায়েস্তা পারভিন বিএসপিতে যোগ দেন এবং মেয়র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন । কিন্তু, উমেশ পাল হত্যা মামলার কারণে শুরু হওয়ার আগেই শায়েস্তার রাজনৈতিক যাত্রা থেমে যায় ।
আতিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় মায়াবতীর সরকার: আতিক আহমেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল 2007 সালে উত্তরপ্রদেশে বিএসপি সরকার গঠিত হওয়া এবং মায়াবতী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর । মায়াবতীর শাসনকালে আতিক আহমেদের বিরুদ্ধে আইনি ফাঁদ শক্ত করার পাশাপাশি তাঁর সাম্রাজ্য ধ্বংসের প্রক্রিয়া শুরু হয় । শুধু তাই নয়, গ্রেফতারের ভয়ে পলাতক ছিলেন বাহুবলী সাংসদ আতিক।
আদালতের নির্দেশে তাঁর বাড়ি, অফিস-সহ অনেক জায়গার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে । আতিক আহমেদ পলাতক হওয়ার পর তাঁকে খুঁজে দেওয়ার জন্য 20 হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয় । আতিককে গ্রেফতারের জন্য সারা দেশে সতর্কতা জারি করা হয় । কিন্তু মায়াবতীর ভয়ে আতিক আহমেদ দিল্লিতে আত্মসমর্পণ করেন ।
উমেশ পালই আতিকের কাল হল: উমেশ পাল অপহরণ মামলায় গুজরাতের সবরমতী জেলে বন্দি আতিকের সাজা হওয়ার কথা ছিল । কিন্তু, তার ঠিক আগে, 24 ফেব্রুয়ারি উমেশ পাল দুই বন্দুকধারীর হাতে গুলিবিদ্ধ হন । এই মামলায় আতিক আহমেদ-সহ তাঁর পুরো পরিবারকে অভিযুক্ত করা হয় । এ দিকে, সাংসদ বিধায়ক আদালত আতিক আহমেদ এবং তাঁর আইনজীবী খান শৌলত হানিফ ও দীনেশ পাসিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে । আতিক আহমেদকে পুলিশ হেফাজতে রিমান্ডে নেয় এবং পুলিশ হেফাজতে রিমান্ড শেষ হওয়ার আগেই আতিক ও আশরাফকে গুলি করে হত্যা করা হয় ।
আরও পড়ুন: হামলার আশঙ্কা, আতিক-আশরফ খুনে 3 আততায়ীকে সরানো হল নৈনি জেল থেকে