ভোপাল, 4 ফেব্রুয়ারি : ভূরি বাঈ এখন খবরের শিরোনামে৷ তিনি একজন পিথোরা চিত্রশিল্পী৷ সম্প্রতি তাঁর নাম পদ্মশ্রী পুরস্কারের জন্য ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ এই ভূরি বাঈয়ের জীবন কোনও একটি সিনেমার থেকে কোনও অংশে কম নয়৷
তিনি শৈশবে একজন দিনমজুর হিসেবে কাজ শুরু করেন৷ তখন দৈনিক 6 টাকা মজুরি পেতেন৷ কিন্তু চরম দারিদ্রের জন্য তাঁর সেই মজুরিও কম ছিল পেট ভরার খাবার যোগাড় করার জন্য৷ তাঁর যখন 10 বছর বয়স৷ সেই সময় তাঁদের বাড়ি আগুনে পুড়ে যায়৷ ফলে তাঁর পরিবার একেবারে সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়ে৷
আর্থিক দায়ভার থেকে মুক্ত হতে 16 বছর বয়সেই ভূরি বাঈয়ের বিয়ে দিয়ে দেয় পরিবার৷ কিন্তু তার পরও তাঁর সংগ্রামের শেষ হয়নি৷ বরং তিনি দিন মজুর হিসেবে কাজ চালিয়ে গিয়েছেন৷ ফলে মধ্য প্রদেশের ভীল উপজাতির এই নারীর লড়াই থেমে যায়নি৷
মধ্য প্রদেশে ঝাবুয়া জেলার ভীল ও রাথওয়া সম্প্রদায় নিজেদের বাড়ির দেওয়ালে এই চিত্রশিল্প সৃষ্টি করেন৷ সেখানে প্রায় প্রতিটি বাড়ির দেওয়ালে এই চিত্রশিল্প দেখা যায়৷ জীবনের এই সংগ্রাম চালানোর পাশাপাশি তিনি পরিবারের ঐতহ্যবাহী পিথোরা চিত্র তৈরির কাজও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন৷ শৈশব থেকে যখনই অবসর পেয়েছেন, তখনই এই শিল্পের কাজের অনুশীলনও চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি৷ ভূরী বাই জানান, তাঁর মা-বাবা অবসর সময়ে প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করে দেওয়ালে এই চিত্রকর্ম করতেন৷ ফুল, পাতা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান থেকে এই রং তৈরি করা হত৷ সেই দেখেই তিনি এই কাজে উৎসাহ পান বলে তিনি নিজেই জানিয়েছেন৷ তাই পাথরের উপর ছবি এঁকে তাঁর হাতেখড়ি হয়৷
যদিও সেই কাজেও তিনি বাধা পেয়েছেন প্রতি পদে৷ কারণ, তিনি একজন মহিলা৷ আর তাঁদের সম্প্রদায় কোনও মহিলার এই চিত্রশিল্পের কাজে যুক্তর বিষয়টি ভালো ভাবে নেয়নি৷ সেই কারণে তাঁদের তরফে প্রস্তাবও পাস করানো হয় যে কোনও মহিলা এই শিল্পে যুক্ত হতে পারবেন না৷
কিন্তু পিছু হঠেননি ভূরি বাঈ৷ আর সেই লড়াইয়ে এক সময় তিনি সাফল্য পেতে শুরু করেন৷ ওই চিত্রকর্ম বিক্রি করে তাঁর আয়ও শুরু হয়৷ ভূরি বাঈ নিজেই জানিয়েছেন যে এক সময় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে তাঁর রোজগার তাঁর স্বামীর থেকে বেশি হয়ে যায়৷ তাঁর কথায়, এই অনেকে তাঁর স্বামীর কাছে তাঁর বিরুদ্ধে কথা কথা বলেছেন৷ তাঁকে থামানোর চেষ্টা হয়েছে৷ কিন্তু তাঁর স্বামী তাঁর পাশে থেকেছেন এবং এই কাজে উৎসাহ জুগিয়েছেন৷ পাশাপাশি এখন তাঁর গ্রামের প্রতিবেশীরাও তাঁকে এখন বাড়ির দেওয়ালে এই চিত্রকর্ম করানোর জন্য ডেকে নিয়ে যান৷
আরও পড়ুন : দেশের কনিষ্ঠতম মহিলা পাইলট এই কাশ্মীরি যুবতি
তবে ভোপালে আসার পর তিনি জগশ স্বামীনাথনের৷ তাঁর উৎসাহেই তিনি কাগজের উপর এই কাজ শুরু করেন৷ স্বামীনাথনই তাঁর থেকে ছবি কিনতে শুরু করেন৷ ছবি পিছু 50 টাকা করে দিতে শুরু করেন৷ তাতেই রোজগার বেড়ে যায় ভূরি বাঈয়ের৷ তাছাড়া তাঁর এই উদ্যোগের জেরে মৃতপ্রায় এই শিল্প নতুন করে প্রাণ পায়৷ ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক খ্যাতিও পায় এই শিল্প৷ তাই এর আগে একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি৷ এবার তিনি পদ্মশ্রী পেলেন৷