নয়াদিল্লি, 1 অক্টোবর: নবরাত্রির উৎসব চলাকালীনই কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনের (Congress President Election) প্রচার শুরু করতে চলেছেন দলের প্রবীণ সাংসদ তথা অন্যতম প্রার্থী শশী থারুর (Shashi Tharoor) ৷ কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার থেকেই শুরু হবে শশীর প্রচার ৷ আর সেই কর্মসূচি শুরু হবে আরএসএস (RSS)-এর গড় নাগপুর থেকে ! যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ৷
শনিবার নাগপুরের দীক্ষাভূমি স্মৃতিশৌধ দেখতে যাবেন শশী ৷ আর সেখান থেকেই শুরু হবে তাঁর ভোটের প্রচার ৷ প্রসঙ্গত, এই নাগপুরেই রয়েছে আরএসএস-এর সদর দফতর ৷ কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন আপাত দৃষ্টিতে দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও বিজেপি-সহ সবক'টি রাজনৈতিক দলেরই সেদিকে নজর রয়েছে ৷ কারণ, সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেসই বিজেপি-এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ৷ তাই সেই দলের পরবর্তী নেতা কে হবেন, তা নিয়ে গেরুয়া শিবির-সহ সকলেরই আগ্রহ থাকাটা স্বাভাবিক ৷ এত দিন বিজেপি অভিযোগ করে এসেছে, কংগ্রেস আদতে গান্ধি পরিবারের একাধিপত্যে থাকা একটি সংগঠন ৷ চব্বিশের ভোটের আগে সেই তকমা ঝেড়ে ফেলতে মরিয়া সোনিয়া গান্ধির দল ৷ সেই কারণেই এবারের নির্বাচনে গান্ধি পরিবারের কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না ৷ এই প্রেক্ষাপটে আরএসএসের খাসতালুক নাগপুর থেকে ভোটের প্রচার শুরু করে শশী আদতে গেরুয়াবাহিনীকেই বার্তা দিতে চাইছেন বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ ৷
আরও পড়ুন: খাড়গেকেই সমর্থন চার জি-23 সদস্যের, ঘুরপথে দলের রাশ গান্ধিদের হাতেই ?
এর আগে গান্ধি পরিবারের অন্যতম প্রতিনিধি তথা দলের তরুণ নেতা রাহুল গান্ধি কংগ্রেসের দায়িত্ব নিলেও তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে নানা মহলে এমনকী সংগঠনের অন্দরেই অনেক প্রশ্ন ছিল ৷ পরবর্তীতে, মোদি জমানায় কংগ্রেসের শক্তি যখন ক্রমশ কমেছে, তার প্রেক্ষিতে সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর দাবি তুলে সোনিয়া গান্ধিকে চিঠি পর্যন্ত পাঠিয়েছেন কংগ্রেসের প্রবীণ এবং শীর্ষ স্থানীয় নেতারা ৷ সেই চিঠি নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি ৷ তবে, শেষমেশ হাইকম্য়ান্ডও বুঝেছে পরিবারতন্ত্রের তকমা তাদের ঝেড়ে ফেলতেই হবে ৷ তা না হলে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি আবার সেই একই অস্ত্রে কংগ্রেসকে ঘায়েল করার চেষ্টা করবে ৷
তবে, ইতিমধ্য়ে সভাপতি নির্বাচন নিয়েও কম বিব্রত হতে হয়নি কংগ্রেসকে ৷ যার অন্যতম কারণ রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলত ৷ যদিও সেই জটিলতা কাটিয়ে ইতিমধ্য়েই নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করেছেন শশী ৷ অবশ্য তা নিয়েও একপ্রস্থ বিতর্ক হয়ে গিয়েছে ৷ এই প্রেক্ষাপটে শনিবার থেকে প্রচারে নামছেন শশী ৷ যেখান থেকে সেই কর্মসূচি শুরু করছেন তিনি, সেই দীক্ষাভূমিতেই 1956 সালে অনুগামীদের নিয়ে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন ডা. বি আর আম্বেদকর ৷ বৌদ্ধ ধর্ম সর্বদাই শান্তি এবং সম্প্রীতির বার্তা দেয় ৷
এদিকে, কেন্দ্রের বর্তমান প্রধান শাসকদল বিজেপি-এর বিরুদ্ধে সর্বক্ষণই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করার অভিযোগ তোলে বিরোধীরা ৷ তাই সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের ব্য়াখ্যা, শশী যদি কংগ্রেসের পরবর্তী সভাপতি নির্বাচিত হন, তাহলে তিনি নিজেকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন অসাম্প্রদায়িক এবং শান্তিকামী রাজনৈতিক নেতা হিসাবেই প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করবেন ৷ এমনিতেই নানা মহলে শশী থারুরের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা রয়েছে ৷ তবে, এবার তিনি রাজনৈতিক নেতা হিসাবেও সেই উচ্চতা স্পর্শ করতে চাইছেন ৷ তাই জেনে-বুঝেই কট্টর হিন্দুত্ববাদী আরএসএস-এর গড়ে ঢুকে দীক্ষাভূমির (Deekshabhoomi) মতো একটি ঐতিহাসিক জায়গাকে প্রচার শুরুর জন্য বেছে নিয়েছেন শশী ৷