পটনা, 6 সেপ্টেম্বর: সন্তানের জন্মের জন্য শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিনটিকেই বেছে রেখেছিলেন বাবা-মায়েরা ৷ তাঁদের মতে, এই শুভদিনে জন্মালে তাঁদের সন্তানের ভাগ্য হবে সুপ্রসন্ন ৷ এই প্রচেষ্টায় সফল বিহারের বহু বাবা-মা ৷ জন্মাষ্টমীতে সেখানে দুপুর পর্যন্ত পৃথিবীর আলো দেখল 500-রও বেশি নবজাতক ৷ তাদের মধ্যে 150টিই বিহারের রাজধানী পটনার ৷ জন্মাষ্টমীর তিথি এখনও শেষ হয়নি ৷ এখনই এই অবস্থা ৷ এখনও হাসপাতালে প্রচেষ্টা চলছে ৷ এই তিথিতে বিহারে জন্মগ্রহণের তালিকাটা হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে ৷
নতুন জীবনের 'ঐশ্বরিক' জন্মের প্রচেষ্টা
শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমীতে জন্মগ্রহণের এই ঢেউ দেখে বোঝা যায় বিহারে যেন এটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সন্তানের জন্ম দিতে চান বাবা-মায়েরা ৷ ঐশ্বরিক যোগ থাকা কোনও সময়ের জন্য তাঁরা অপেক্ষা করে থাকেন ৷ যে সব অন্তঃসত্ত্বার সিজার হওয়ার কথা, তাঁরা এই বিশেষ দিনটিতে সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে প্রসবের সময় 2-3 দিন পিছিয়েও দিয়েছেন ৷
আনন্দের ঢেউ হাসপাতালগুলিতে
জন্মাষ্টমীর এই অনন্য স্পিরিট আছড়ে পড়েছে বিহারের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে ৷ পরপর শিশুজন্মের খবরে সেগুলি আনন্দের জোয়ারে ভাসছে ৷ এই বিশেষ দিনে পরিকল্পনা মতো সন্তানের জন্ম দিতে পেরে আপ্লুত গর্ভবতীরা ৷ তাই হাসপাতালগুলিতে আজ ছিল সেলিব্রেশনের মুড ৷
পটনার প্রখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সারিকা রাই বলেছেন, "একজন রোগী ইতিমধ্যেই জন্মাষ্টমী উপলক্ষে মাঝরাতে বারোটায় সন্তান প্রসবের দাবি জানিয়েছেন । এমতাবস্থায় হবু মাকে ওষুধ খাইয়ে স্থিতিশীল রাখা হয়েছে এবং রাত সওয়া 11টায় তাঁকে লেবার রুমে নিয়ে যাওয়া হবে ৷ আর রাত 12টায় সন্তানের ডেলিভারি হবে ৷ এখন পরিবারের সদস্যরা 6 সেপ্টেম্বর নাকি 7 সেপ্টেম্বর শিশুর জন্মদিন পালন করবেন, সে ব্যাপারে তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন ৷"
তিনি আরও বলেন, "এমন অনেক রোগীও এসেছেন যাঁদের প্রসবের সময় এখনও 10-15 দিন বাকি এবং তাঁরা জন্মাষ্টমী উপলক্ষে এই দিনই ডেলিভারি চেয়েছেন ৷ কিন্তু তাঁদের সেই দাবি মানা হয়নি ৷ গর্ভের সন্তানদের অবস্থা দেখেই সন্তান প্রসবের সময় নির্ধারণ করা হচ্ছে এবং প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি করা হচ্ছে না ৷"
আরও পড়ুন: জন্মাষ্টমী উপলক্ষে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে এক লক্ষেরও বেশি লাড্ডু নিবেদন দুর্গাপুর ইসকনে
পটনায় মিরাকল
বিহারের রাজধানী শহর পটনার কেন্দ্রস্থলে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে 35টিরও বেশি শিশুর জন্ম হয়েছে । আনন্দের জোয়ারে ভাসছে গোটা এলাকা ৷ একইসঙ্গে, আজ পিএমসিএইচ, এনএমসিএইচ এবং কুর্জি হলি ফ্যামিলি হসপিটালে আনুমানিক 20টি শিশু জন্মগ্রহণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে ৷ তাদের আগমনের জন্য অধীর অপেক্ষায় রয়েছে পরিবারগুলি ৷
ডা. রাইয়ের কথায়, "জন্মাষ্টমী হিন্দুদের জন্য সবচেয়ে শুভ দিনগুলির মধ্যে অন্যতম ৷ তাই দম্পতিরা এই দিনে তাঁদের সন্তান নিতে চান । এটি একটি আশীর্বাদ হিসাবে বিবেচিত হয় । আমরা ইতিমধ্যে 10টি ডেলিভারি করেছি এবং আরও 40টি হতে বাকি । চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির কারণে, আমাদের কাছে ওষুধ রয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা ডেলিভারি 4 থেকে 5 দিনের মধ্যে এগিয়ে আনতে পারি বা পিছিয়ে দিতে পারি ৷"
নতুন জীবনের ভোর
এই উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যানগুলি এই দিনে বিহারকে সীমাহীন আনন্দ ও ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছে ৷ এটি বিকেল 3টে পর্যন্ত সংগৃহীত পরিসংখ্যান ৷ দিন যত এগোচ্ছে, ততই এই সংখ্যাটা আরও অনেকটা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে ৷ উল্লেখ্য, এই পরিসংখ্যানগুলি শুধুমাত্র সরকারি হাসপাতালের ৷ বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য এর সঙ্গে মেলানো হলে জন্মাষ্টমীতে জন্মানো নতুন জীবনের মোট সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে ৷
জন্মাষ্টমীতে বিহারের বিভিন্ন জেলায় জন্ম নেওয়া শিশুর আনুমানিক সংখ্যা:
আরারিয়া: 24 শিশুর জন্ম
গোপালগঞ্জ: 13 নতুন জীবন
বৈশালী: 17 শিশুর জন্ম
কাটিহার: 13 নবজাতক
সরণ: ছাপড়ায় জন্মাল 10 শিশু
বেগুসরাই: এক ডজন শিশুর জন্ম
রোহতাস: আট শিশুর আগমন
পূর্ণিয়া: পৃথিবীর আলো দেখল 18 শিশু
মধুবনী: 6 শিশুর জন্ম
পশ্চিম চম্পারন: 23 শিশুর জন্ম
পশ্চিম চম্পারণ (আবার): 13 নবজাতক
ভাগলপুর: 26 নতুন জীবন
বক্সার: 10 শিশুর জন্ম
পূর্ব চম্পারণ: মতিহারিতে 14 শিশুর আগমন
সমস্তিপুর: 16 শিশুর জন্ম
জামুই: যমজ-সহ 17 শিশুর জন্ম